ফেসবুকে ছাত্রীর ভিডিও

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আশ্রাফুল ইসলাম ওরফে মিঠুন মাদবরের অপকর্মের খবরে আমরা উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। তিনি একজন কলেজছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন এবং গোপনে সেই দৃশ্য ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছেন। মিঠুন নামের এই যুবক সাধারণ কেউ নন। তিনি ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতা। সে ক্ষেত্রে আশা করা গিয়েছিল, সংগঠন এই দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক লীগের জেলা কমিটি তাঁকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে দায়িত্ব শেষ করেছে। আর উপজেলা কমিটি তাঁকে বহিষ্কার না করে এখনো ওই লোকের অপকর্মের দায় বহন করে চলেছে।

অন্যদিকে থানা-পুলিশের ভূমিকা আরও ন্যক্কারজনক। ওই কলেজছাত্রীর বাবা জাজিরা থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করলেও আশ্রাফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার না করা দুর্ভাগ্যজনক। এ ক্ষেত্রে থানা-পুলিশ যেই অজুহাতই দেখাক না কেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। এত বড় অপকর্মের পরও যদি আসামি পালিয়ে থাকতে পারে, তাহলে থানা-পুলিশের কাজটা কী। এ ধরনের অপরাধী স্বেচ্ছায় ধরা দেবে না। যেখানেই পালিয়ে থাকুক না কেন, তাকে খুঁজে বের করতে হবে। শরীয়তপুরে এর আগে গত অক্টোবরে ছয় নারীকে ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ফেসবুকে। এই অভিযোগে ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। তবে পুলিশ এখনো তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়নি।

বুধবার প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, মিঠুন মাদবর ওই কলেজছাত্রীকে কেবল প্রেমের ফাঁদে ফেলেননি, তাঁর স্বামীর হাতে ভিডিও তুলে দিয়ে বিয়ে ভাঙার উপক্রম করেছেন। লোকলজ্জার ভয়ে মেয়েটির কলেজ যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। নীতি ও নৈতিকতা কোথায় নামলে কেউ এমন কাজ করতে পারে! আর আইন ও প্রশাসনই বা নীরব কেন? এ ধরনের দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ বিষয়ে পরিবারকেও এগিয়ে আসতে হবে। এর আগে অনেক বাবা-মাকে দেখা গেছে অপরাধী সন্তানকে থানা-পুলিশের হাতে তুলে দিতে।

পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন–২০১২ অনুযায়ী, পর্নোগ্রাফির সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করার কারণেও অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হতে এবং গ্রেপ্তার হতে দেখা যায়। কিন্তু এত বড় অপকর্মের পরও যদি অপরাধী ধরা না পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে আইন সব ক্ষেত্রে সমানভাবে কাজ করছে না। কিন্তু কোনো সভ্য সমাজে এমনটি চলতে পারে না।
আমরা চাই মিঠুন মাদবরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক এবং আইন অনুযায়ী তাঁর সাজা হোক।