সর্বত্র নারীর আরও উন্নয়ন ও অংশগ্রহণ চাই

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, প্রথম আলোর আয়োজনে ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সহযোগিতায় ‘সর্বত্র নারীর আরও উন্নয়ন ও অংশগ্রহণ চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

আলোচনায় সুপারিশ

  • সর্বত্র নারীর শুধু অংশগ্রহণ বাড়ালে চলবে না, তার গুণগত উন্নয়ন জরুরি
  • কোনো দেশের উন্নয়নের জন্য নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন গুরুত্বপূর্ণ
  • নারীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে
  • নারীর অনানুষ্ঠানিক কাজের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন করা দরকার
  • কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ সংবেদনশীল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে
  • মেয়ে ও ছেলেশিশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সবার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের পূর্ণ ব্যবস্থা করতে হবে
  • নারীবান্ধব আইনগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি
  • কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে হবে
  • নারীর উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বে আরও ক্ষমতায়ন প্রয়োজন

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম: আমাদের সমাজে নারীর প্রতি পরিপূর্ণভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠেনি। গ্রামে নারী গৃহস্থালি, কৃষি ও পশু পালনের মতো উৎপাদন–কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকলেও তার স্বীকৃতি নেই। শহরেও নারীর গৃহস্থালি কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার অনেকগুলো নারীবান্ধব আইন করেছে, যার ফলে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে, তার কিছুটা অগ্রগতি ঘটেছে। কিছু আইন নারীকে সম্মান এনে দিয়েছে। িকন্তু অনেক সমস্যাও রয়েছে। এসবই আজকের আলোচনার িবষয়। এখন আলোচনা করবেন নাসের এজাজ বিজয়।

নাসের এজাজ বিজয়
নাসের এজাজ বিজয়

নাসের এজাজ বিজয়

বাংলাদেশে নারীর তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন হয়েছে। নারীর উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বে আরও ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার নারী। তাই বাংলাদেশ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে। কিন্তু তৃণমূল পর্যায়েও নারীর ক্ষমতায়ন দরকার।

কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ আগের তুলনায় বেড়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ৫ কোটি ৪১ লাখ কর্মজীবী মানুষের মধ্যে ১ কোটি ৬২ লাখ নারী। প্রায় ১৬ হাজার ৭০০ নারী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা রয়েছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ৮০ শতাংশের বেশি নারী। সুতরাং বাংলাদেশ নারীর উন্নয়ন ও অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়েছে, কিন্তু পথটা অনেক লম্বা। আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে।

কোনো দেশের উন্নয়নের জন্য নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন একটি চাবিকাঠি। সে জন্য সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ১৩০টি দেশের মানুষ চাকরি করছেন, যার প্রায় ৫০ শতাংশ নারী। বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে সংখ্যাটা কম, ২৫ শতাংশের মতো। কিন্তু আমাদের নারীর সংখ্যা আরও বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। নারীর অংশগ্রহণ বাড়ালেই শুধু চলবে না, নেতৃত্বের পর্যায়ে নারীকে আসতে হবে। পরিমাণগত ও গুণগত উভয় দিক থেকেই নারীর উন্নয়ন প্রয়োজন। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ২০২০ সালের মধ্যে নেতৃত্বের পর্যায়ে ৩০ শতাংশ নারী নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এভাবে নারীর আরও উন্নয়ন ও অংশগ্রহণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন।

শাহিন আরা বেগম
শাহিন আরা বেগম

শাহিন আরা বেগম

বাংলাদেশে নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বেড়েছে। এটা অনেক বড় অর্জন। নারীর আরও উন্নয়ন ও অংশগ্রহণের জন্য সবার আগে প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। একটি শিশু জন্মগ্রহণের পর তাকে ছেলে কিংবা মেয়ে হিসেবে না দেখে সন্তান হিসেবে দেখতে হবে। ছেলে হোক কিংবা মেয়ে হোক, মা-বাবার প্রধান লক্ষ্য থাকবে সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। মানসিকতার পরিবর্তন শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই।

সরকারি কর্মক্ষেত্রে ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হয়। কিন্তু পুরুষের পক্ষ থেকে অনেক সময় এ নিয়ে আপত্তি তোলা হয় কিংবা নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। আমাদের অনুভব করতে হবে, সামাজিক প্রয়োজনের জন্য নারী মাতৃত্বকালীন ছুটি নিচ্ছেন। এটি তাঁর সুযোগ নয়, বরং অধিকার।

কর্মক্ষেত্রে আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যেমন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ৬০ শতাংশ শিক্ষক নারী। বিদ্যালয়ে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের উপস্থিতি বেশি। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা আনন্দময় করে তুলতে আগের তুলনায় বেশি পরিমাণ খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সেখানে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সুতরাং, মা-বাবা আগের তুলনায় বেশি সচেতন হয়ে মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন। মেয়েরাও যে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারেন, সেটি তাঁরা উপলব্ধি করতে পারছেন।

মো. হাবিবুর রহমান
মো. হাবিবুর রহমান

মো. হাবিবুর রহমান

প্রান্তিক নারীরা আর্থসামাজিকভাবে বেশি অবহেলার শিকার। ইউসেপ বাংলাদেশ সুবিধাবঞ্চিত নারীদের সমসুযোগ নিশ্চিতের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে।

বস্তিবাসী শিশুদের মধ্যে নারী-পুরুষের বৈষম্য তীব্র। মেয়েদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্কুলে যেতে দেওয়া হয় না। ইউসেপ বাংলাদেশ সেখানকার মা-বাবাদের নারী শিক্ষার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ইউসেপ বাংলাদেশের বর্তমানে ৫৪টি বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের ৫৪ শতাংশ মেয়ে। আমাদের কারিগরি বিদ্যালয়ে প্রায় ৪৬ শতাংশ নারী বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যা জাতীয় পর্যায়ের বেশি।

বাংলাদেশে সর্বত্র নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা এখনো বিদ্যমান। নারীর জন্য অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ সমমাত্রায় উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি। কর্মক্ষেত্রে পেশার বৈষম্য তীব্রভাবে বিরাজমান। উচ্চস্তরে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা কিছুটা দূর হলেও প্রান্তিক পর্যায়ে এর তীব্রতা থেকে গেছে। প্রান্তিক নারীরা নানা রকমের বৈষম্যের শিকার।

প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ২২ লাখ কর্মক্ষম লোক শ্রমশক্তিতে যুক্ত হচ্ছেন, যাঁদের মধ্যে ১০ লাখের কম লোককে কোনো না কোনোভাবে আনুষ্ঠানিক কাজ দেওয়া যাচ্ছে। প্রায় ১২ লাখ যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান করা সম্ভব হচ্ছে না। যেসব নারী কর্মক্ষেত্রে যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের অনেক সময় বিবাহজনিত কারণে, সন্তানের লালন-পালনের কারণে কাজ ছেড়ে দিতে হয়। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত—সব ক্ষেত্রে এই সমস্যা বিরাজমান। নারীর আরও উন্নয়ন ও অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর এমন আত্মোৎসর্গ একটি বড় বাধা।

সমাজে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য সরকারের নীতিমালা থাকলেও আশানুরূপ বাস্তবায়ন নেই। তাই প্রতিবন্ধী নারীরা আরও পিছিয়ে পড়ছেন। তাঁদের সামনে নিয়ে আসতে হলে প্রতিবন্ধীবান্ধব পরিবেশ, শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সর্বোপরি নারীর টেকসই উন্নয়নের জন্য নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা জরুরি। সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রান্তিক নারীর দক্ষতা উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সাবিনা খাতুন
সাবিনা খাতুন

সাবিনা খাতুন

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীর খেলাধুলা স্বাভাবিক ছিল না। এখনো খুব একটা স্বাভাবিক নয়। সেখানে ফুটবল খেলা অনেক বড় ব্যাপার। মেয়েদের হাফপ্যান্ট পরে খেলতে দেখলে অনেকে দৃষ্টিকটু মনে করে। সামাজিকভাবে নেতিবাচক কথাবার্তা বলা হয়। ২০০৬ সালে প্রথম বাংলাদেশ জাতীয় নারী দল গঠনের পর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের সঙ্গে খেলা হয়। তখন মৌলবাদীরা সেখানে ভাঙচুর করে এবং মেয়েদের ওপর হামলার চেষ্টা করে। যদিও নিরাপত্তা দিয়ে তাদের বের করে আনা হয়। এরপর ২০০৮ সাল পর্যন্ত নারী ফুটবলে তেমন কোনো আসর আয়োজিত হয়নি। ২০০৯ সাল থেকে নারী ফুটবল নতুন উদ্যমে শুরু হয়।

পরবর্তী পাঁচ বছর ছিল প্রস্তুতিকাল। কিন্তু ২০১৪-২০১৭ সালে বাংলাদেশ নারী ফুটবলের অনেকগুলো অর্জন রয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল দল কিছুদিন আগে সাফ অনূর্ধ্ব–১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হয়। এর আগে ভারতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল রানারআপ হয়ে আসে।

ফুটবল সারা বিশ্বের জনপ্রিয় খেলা। অন্যান্য ক্ষেত্রের পাশাপাশি খেলাধুলায়ও নারীরা আগের তুলনায় বেশি এগিয়ে আসছেন। যেমন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে এখন ৪৪-৪৫টি জেলা অংশগ্রহণ করে।

নারীর উন্নয়ন ও অংশগ্রহণের জন্য সবার আগে তাঁকেই সচেতন হতে হবে। তাঁর চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসতে হবে। শুধু ঘরসংসার সামলালে চলবে না। নারীর অগ্রগতির জন্য পরিবারের সহায়তা খুব প্রয়োজন। অনেক সময় সেটা পাওয়া যায় না।

তাসলিমা আখ্তার
তাসলিমা আখ্তার

তাসলিমা আখ্তার

সর্বত্র আগের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। কিন্তু সমাজে, রাষ্ট্রে, অর্থনীতিতে নারীরা অনেক ভূমিকা রাখলেও তাঁদের স্বীকৃতি নেই। নারীরা পুরুষের সমান সুযোগ পান না। সম্পত্তিতে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নেই। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত নারীরা অনেক অর্থনৈতিক কাজে যুক্ত হলেও অভিভাবকত্ব আইনে নারী অভিভাবক নন। অভিভাবক পুরুষ, কিন্তু লালন-পালনের দায়িত্ব নারীর।

সমাজ নারীকে পুরুষের তুলনায় ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে। পরিবারে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় কম সুযোগ-সুবিধা পায়। মেয়েরা তর্ক করলে বলা হয় মেয়েদের বেশি তর্ক করতে হয় না। কিন্তু ছেলেরা তর্ক করলে তাকে বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন ধরে নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক জীবনে দেখেছি, মেয়েদের মিছিলের সামনে দাঁড় করানো হয়। কারণ পুলিশ মারতে এলে ‘অবলা নারী’ দেখে মারবে না! যোগ্যতার ভিত্তিতে তাঁদের মিছিলের সামনের সারিতে দাঁড়ানো গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। পারিবারিক পর্যায়ে পুরুষ সদস্যকে জ্ঞানচর্চাকারী, নেতৃত্বদানকারী, উপার্জনকারী হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। আর নারীকে ভাবা হয় সেবিকা ও উৎসাহদানকারী। এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।

বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ রয়েছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে তাঁদের অংশগ্রহণ খুব কম। যেমন বাংলাদেশের গণমাধ্যমসমূহে নারী সম্পাদকের সংখ্যা নগণ্য। নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও কেন তাঁরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে আসতে পারছেন না, সেই কারণগুলো ভাবা প্রয়োজন।

সচেতনতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পরিবারের তুলনায় রাষ্ট্রের ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রের আইন, সংস্কৃতি নারী–পুরুষ সবার জন্য সমান হবে। নারী শিক্ষিত কিংবা কর্মজীবী হলেই তাঁর পুরোপুরি উন্নয়ন ঘটবে এমন ধারণা আংশিক সত্য। যেমন সাধারণভাবে ১৯ শতকে নারী শিক্ষা গ্রহণ করেছেন তাঁদের বিলেতফেরত স্বামীর সঙ্গে পত্রবিনিময় করার জন্য, একটু ইংরেজিতে কথা বলার জন্য। পোশাকশিল্পে নারীরা স্বল্প মজুরিতে কাজ করেন। শ্রমিক নারীদের একটি বড় অংশ পোশাকশিল্পে কাজ করেন। কিন্তু নারী আন্দোলনের কর্মীরা নারীর মজুরির প্রশ্নটি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করছেন না। নারী উন্নয়নের জন্য সবার আগে নারীকে আত্মসচেতন হতে হবে।

মৌটুসী বিশ্বাস
মৌটুসী বিশ্বাস

মৌটুসী বিশ্বাস

পরিবারে একটি মেয়েসন্তান থাকলে অনেক সময়ই শুনতে হয় আরেকটি ছেলেসন্তান কেন নেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু সে ক্ষেত্রে মা-বাবাই দৃঢ়তা দেখাতে পারেন। আমার মা-বাবা যেমন দেখিয়েছিলেন। আজ আমি প্রতিষ্ঠিত।

কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে হবে। আমি ভাগ্যবান, কারণ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মতো নারীর প্রতি সংবেদনশীল একটি প্রতিষ্ঠানে একসময় কাজ করেছি, যেখানে নারীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বিষয়টিকে জোর দেওয়া হয়।

আমার সাংসারিক জীবনে একজন নারীর প্রতি সংবেদনশীল বর পেয়েছি, যিনি লিঙ্গসমতা ও নারীর ক্ষমতায়নবিষয়ক সংস্থা ইউএন ওমেনে কাজ করেন। বর্তমানে শোবিজে কাজ করছি। দূর থেকে দেখে অনেক কিছু মনে হলেও আমি সব সময় নিরাপদ পরিবেশে কাজ করছি। শোবিজে নারী তাঁর পছন্দ অনুযায়ী কাজ করেন বিধায় তাঁকে কিছু চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় না। নারী নিজেই তাঁর পথ বেছে নেন। তাই সিদ্ধান্তটি মূলত তাঁর।

তবে আমার মতো সৌভাগ্যবতী সব নারী নন। নারীরা এখন সব ক্ষেত্রে এগিয়ে আসছেন। কিন্তু তারপরও অনেক জায়গায় প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। যেমন নেতৃত্বে নারীর অংশগ্রহণ খুব কম। পরিবারে নারীরা মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার পথে নারী নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। কর্মক্ষেত্রে অনেক নারীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। অনেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে নারীকে লক্ষ্য করে অনেক বাজে মন্তব্য করা হয়। বিষয়গুলো দূর করার জন্য শুধু আইন থাকলে চলবে না, আইনের যথাযথ প্রয়োগ বেশি জরুরি।

শাবনাজ জাহেরীন
শাবনাজ জাহেরীন

শাবনাজ জাহেরীন

তৃণমূল রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ সংরক্ষিত আছে। নারী অনেক বাধা পেরিয়ে তৃণমূলের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করছেন। কিন্তু তাঁদের তেমন কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয় না। এমনকি নারী সদস্যদের একটি অফিসও ঠিকভাবে দেওয়া হয় না। তাই নারীর শুধু সংখ্যাগত অংশগ্রহণ বাড়ালেই চলবে না, তাঁদের যোগ্যতার ভিত্তিতে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিতে হবে। তাঁরা যেন শুধু অলংকারে পরিণত না হন।

নারী বাসায় সন্তান লালন-পালনসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন, কিন্তু তাঁর কোনো মূল্যায়ন নেই। সংসারের পেছনে নারী যে শ্রম দেন, তাঁর মূল্যায়ন থাকা প্রয়োজন। গৃহকর্মে নিয়োজিত নারীর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই। গৃহকর্ম অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু এর একটি অর্থনৈতিক মূল্যায়ন থাকা জরুরি।

নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বাল্যবিবাহ ও যৌতুক প্রথার অভিশাপ থেকে বাংলাদেশকে পুরোপুরি মুক্তি পেতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রকেও আরও গুরুত্বসহকারে দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন। পরিবার, বিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্র—সর্বত্র নারীবান্ধব প্রতিবেশ গড়ে তুলতে হবে।

বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের নারী অধিকারবিষয়ক অনেক নীতিমালাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নারীনীতি, শিশুনীতিও করা হচ্ছে। কিন্তু নীতিমালার বাস্তব প্রয়োগে অনেক অবহেলা রয়েছে।

মাহবুবা নাসরীন
মাহবুবা নাসরীন

মাহবুবা নাসরীন

কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। শ্রমশক্তি জরিপ ২০১০ অনুযায়ী, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ৩৬ শতাংশ। ২০০৫ সালে যা ছিল ২৯ শতাংশ। সুতরাং মোটের ওপরে নারীর অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।

তবে ক্ষেত্রবিশেষ হিসাব করলে অনেক সমস্যা ফুটে ওঠে। যেমন নিয়মিত বেতনে চাকরির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা আসেনি। ২২ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ কৃষিক্ষেত্র থেকে তাঁদের আয় উপার্জন করেন। সেখানে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষের চেয়ে ১০ শতাংশ কম। নারী কাজ করেও স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। নারীদের বড় একটা অংশ অবৈতনিকভাবে কাজ করছেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নকে যথাযথভাবে বুঝতে হলে নারীদের অবৈতনিক শ্রমকে হিসাবের মধ্যে আনা জরুরি।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ১৭টি লক্ষ্য রয়েছে। যার সঙ্গে সংগতি রেখে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার পঞ্চম লক্ষ্যটি হচ্ছে লিঙ্গসমতা। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সমাজের সর্বস্তরে লিঙ্গসমতা আনা প্রয়োজন।

এখন এমনভাবে পাঠ্যক্রম সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যেন শিক্ষার্থীদের লিঙ্গবৈষম্যমূলক মানসিকতা গড়ে না ওঠে। তারপরও কিছু সমস্যা থেকে গেছে। ধীরে ধীরে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে।

মো. সিদ্দিকুর রহমান
মো. সিদ্দিকুর রহমান

মো. সিদ্দিকুর রহমান

কর্মক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের তুলনায় কাজের প্রতি বেশি সৎ থাকেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মনে করা হতো পুরুষেরা উপার্জন করবেন। কিন্তু বর্তমানে অবস্থার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। নারীরা উপার্জন করছেন। ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

পোশাকশিল্পে অনেক নারী কাজ করেন। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো শ্রম মন্ত্রণালয় বরাবর ওয়েজ বোর্ড গঠনের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী ওয়েজ বোর্ড গঠিত হয়েছে। শ্রমিক আমাদের। তাঁদের বেতন-ভাতাও আমাদের দিতে হয়। আবার শ্রমিকদের সহযোগিতার ফলে পোশাকশিল্প এত দূর এসেছে। শিল্পকারখানায় যেমন শ্রমিক না থাকলে উন্নয়ন হবে না; ঠিক তেমনি শ্রমিক থাকল অথচ শিল্পকারখানা থাকল না, তাতেও উন্নয়ন হবে না। সুতরাং শ্রমিক এবং শিল্পকারখানার মালিকদের পরস্পরের সহযোগী হয়ে কাজ করা প্রয়োজন।

পোশাকশিল্পে সরাসরি প্রায় ৪৪ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, যার অধিকাংশ নারী। পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে প্রায় ১ কোটি মানুষ জড়িত। ব্যাংকের মুনাফার প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ আসে পোশাকশিল্পের কারণে। পোশাকশিল্পের সঙ্গে জড়িত নারীর ক্রয় সক্ষমতার কারণে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প টিকে আছে। সুতরাং জিডিপিতে পোশাকশিল্প এবং তার শ্রমিক, বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের অনেক বড় অবদান রয়েছে।

প্রায় সময় বলা হয়ে থাকে পোশাকশিল্পে নারীদের যৌন হয়রানি করা হয়। এটা সত্য নয়। তারপরও দু-একটি ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৭ বছর হলো। আমরা অনেক দেশের তুলনায় দ্রুত সামনে এগিয়েছি। এক দিনে সব সমস্যার সমাধান হয় না। ধীরে ধীরে বিদ্যমান সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। সে জন্য সময়ের প্রয়োজন।

কাজী মোস্তফা সারোয়ার
কাজী মোস্তফা সারোয়ার

কাজী মোস্তফা সারোয়ার

বর্তমান সরকার নারীর উন্নয়নকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছে। রাজনীতি, খেলাধুলা, করপোরেশন, শোবিজ—সবখানে নারীর অংশগ্রহণ রয়েছে। কিন্তু নারীর আরও উন্নয়ন এবং অংশগ্রহণের পথ আমাদের সামনে খোলা রয়েছে।

সমাজের একটি বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে যে নারীরা অনেক কাজ করতে পারেন না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নারীরা সব কাজের জন্য উপযুক্ত। নারীদের পিছিয়ে থাকার জন্য কেবল পুরুষ দায়ী নয়,অনেক ক্ষেত্রে নারীর িদ্বধাদ্বন্দ্বও দায়ী। নারীদের মধ্যে অনেক সংকোচবোধ কাজ করে। তাঁদের সংকোচবোধ দূর করতে হবে।

বাংলাদেশ নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, জাতীয় সংসদে নির্বাচিত ২২ জন নারী সাংসদ রয়েছেন। নারীদের জন্য ৫০টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। প্রতি উপজেলায় একজন করে নারী ভাইস চেয়ারম্যান এবং সংরক্ষিত আসনে তিনজন করে সদস্য রয়েছেন।

নারীদের উন্নয়নের মূলধারায় নিয়ে আসার জন্য বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, যৌতুক প্রথা নিরোধ আইন, ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) রয়েছে। কিন্তু নারীদের আরও উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হিসেবে নেতিবাচক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বিরাজমান। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশের অভাব রয়েছে। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ৫৪ হাজার জনবলের ২৮ হাজার নারী। তৃণমূল পর্যায়ে ২৩ হাজার পরিবার পরিকল্পনা সহকারী এবং সাড়ে ৪ হাজার পরিদর্শিকা নিরাপদ প্রসবসেবা নিশ্চিতের জন্য কাজ করছেন। পাশাপাশি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর নারীদের বাল্যবিবাহ রোধসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়ে কাউন্সেলিংয়ের কাজ করে যাচ্ছে। যাতে করে একজন মা দেশের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ একজন সুস্থ শিশু জন্মদান করতে পারেন।

বিটপী দাশ চৌধুরী
বিটপী দাশ চৌধুরী

বিটপী দাশ চৌধুরী

নারীর উন্নয়নের পথে একটি বাধা তাঁদের দুর্বল মানসিকতা। গবেষণায় দেখা যায়, নারীদের মধ্যে সামাজিক কারণে ছোট করে ভাবার একটি মানসিকতা কাজ করে। গবেষণায় দেখা যায়, নারীরা পুরুষের তুলনায় বহুমুখী কাজ করতে পারদর্শী। নারীরা কাজের সব দিকের প্রতি নিখুঁতভাবে মনোযোগী হন। তাই নারীর উন্নয়নের জন্য তাঁদের নিজেদের আগে এগিয়ে আসতে হবে।

যেসব সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানে লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ ইত্যাদির দিক থেকে বেশি বৈচিত্র্য বিরাজমান, তার উন্নয়ন কম বৈচিত্র্যপূর্ণ সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় টেকসই হয়।

নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে তাঁদের সবার আগে আওয়াজ তুলতে হবে। সেটা তখন সম্ভব, যখন নারীর অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং স্বাধীনতা থাকবে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিতের জন্য শিক্ষার পাশাপাশি নারীকে বিভিন্ন কাজে দক্ষ করে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। ইউসেপ বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পাশাপাশি নারীরা উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগের অর্থ পেতে নারীকে অনেক সময় বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এই বাধাগুলো দূর করা জরুরি।

মেহের আফরোজ চুমকি
মেহের আফরোজ চুমকি

মেহের আফরোজ চুমকি

একটি দেশের উন্নয়ন তার মানবসম্পদের উন্নয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানবসম্পদ শুধু পুরুষেরা নন, নারীরাও। তাই নারীদের বাদ দিয়ে উন্নয়নের কথা চিন্তা করা বোকার স্বর্গে বাস করা ছাড়া কিছুই নয়। উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু হয়ে গেছে এবং সেই উন্নয়ন ধরে রাখতে হলে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ আরও বৃদ্ধি করতে হবে।

চলতি বছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মূল বিষয়বস্তু গ্রামীণ নারীর উন্নয়ন। শহর এলাকায় শিক্ষার হার, অর্থনৈতিক সচ্ছলতার হার বেশি; কিন্তু গ্রামীণ নারীরা শহরের তুলনায় পিছিয়ে আছেন। তাই বলে শহরের নারীরা পরিপূর্ণভাবে উন্নত—এমনটা বলা যায় না। তবে শহরের তুলনায় গ্রামে নারীর অগ্রগতির ক্ষেত্রে বেশি প্রতিবন্ধকতা বিরাজমান। শহরে একটি মেয়েশিশু জন্মগ্রহণ করলে খুব কম মা-বাবা অখুশি হন, কিন্তু গ্রামে এখনো অনেক মা-বাবা কন্যাসন্তান জন্মের কারণে অখুশি হন। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকেও গ্রাম অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

মেয়ে এবং ছেলেশিশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সবার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের পূর্ণ ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্য নারীকে বাড়তি কিছু সুযোগ দিতেই হবে। দীর্ঘদিনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কাঠামোর কারণে পুরুষেরা অনেক এগিয়ে গেছেন।

একটি মেয়ে যখন কিশোরী বয়সে পা রাখবে, তখন থেকে তার বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। শুধু মেয়ের জন্য নয়, আগামী প্রজন্মকে সুরক্ষা দিতে মেয়ের বিশেষ যত্ন জরুরি। নারীদের উন্নয়নের মূল ধারায় নিয়ে আসতে হলে জন্মলগ্ন থেকে নারীর প্রতি মনোযোগী হতে হবে, কিশোরী বয়সে বিশেষ যত্ন করতে হবে।

মেয়েরা যেন স্কুল থেকে ঝরে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রাথমিক স্কুলগুলোতে মেয়েদের সংখ্যা বেশি থাকলেও উচ্চশিক্ষায় তাদের সংখ্যা কমে যায়। তাই মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করতে তার কারণগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা জরুরি।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ না থাকলে নারীর পরিপূর্ণ উন্নয়ন হবে না। তাই বর্তমান সরকার তৃণমূল পর্যায় থেকে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ওপর বিশেষ জোর দিয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিনা মূল্যে বই বিতরণ, উপবৃত্তি দেওয়ার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মেয়েদের সংখ্যা বেড়েছে।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যেন ২ কোটি নারী ঘরে বসে আয় করতে পারেন। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়; বরং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীকে অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। নারীদের অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম করে তোলার জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গ্রামীণ নারীদের বেশি গুরুত্ব দিয়ে ১৮ ধরনের প্রশিক্ষণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আমাদের প্রতিটি জেলায় কিশোর-কিশোরী ক্লাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। যার লক্ষ্য কিশোর-কিশোরীদের পূর্ণ নাগরিক সত্তার বিকাশ ঘটানো। এ ছাড়া নারীদের বিনা মূল্যে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

নারীকে প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষের সমান অংশগ্রহণে সক্ষম করে তুলতে পারলে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে।

আব্দুল কাইয়ুম

সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করলে সর্বত্র নারীর আরও উন্নয়ন ও অংশগ্রহণ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আমাদের নারীর প্রতি বিদ্যমান সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। নারীকে সক্ষম হয়ে গড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ।

যাঁরা অংশ নিলেন

মেহের আফরোজ চুমকি: মাননীয় সাংসদ, প্রতিমন্ত্রী, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়

নাসের এজাজ বিজয়: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, বাংলাদেশ

কাজী মোস্তফা সারোয়ার: মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর

মো. সিদ্দিকুর রহমান: সভাপতি, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)

মাহবুবা নাসরীন: পরিচালক ও অধ্যাপক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শাহিন আরা বেগম: প্রাইমারি শিক্ষা কর্মকর্তা, ঢাকা জেলা

শাবনাজ জাহেরীন: বিশেষজ্ঞ, শিশু সুরক্ষা, ইউনিসেফ

মো. হাবিবুর রহমান: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউসেপ বাংলাদেশ

বিটপী দাশ চৌধুরী: কান্ট্রি হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, বাংলাদেশ

তাসলিমা আখ্তার: আলোকচিত্রী, সভাপ্রধান, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি

মৌটুসী বিশ্বাস: অভিনেত্রী

সাবিনা খাতুন: অধিনায়ক, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল

সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

এই গোলটেবিল বৈঠক আলোচনায় আমন্ত্রিত আলোচকদের বক্তব্য তাঁদের িনজস্ব মতামত। এ জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক কোনো দায় বহন করে না।