কাঠমান্ডু ট্র্যাজেডি

বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা ও ৫০ জনের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। বাংলাদেশের বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস-বাংলার ড্যাশ—৮কিউ ৪০০ মডেলের উড়োজাহাজটি ৭১ জন যাত্রী ও ক্রু নিয়ে সোমবার বিকেলে নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। বাংলাদেশি, নেপালিসহ দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত সবার পরিবার ও স্বজনদের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানাচ্ছি। নিহত ব্যক্তিদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

ঢাকা থেকে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুগামী উড়োজাহাজটিতে মূলত বাংলাদেশ ও নেপালের যাত্রীরাই ছিলেন। এ দুর্ঘটনা ও এতসংখ্যক যাত্রীর করুণ মৃত্যু দুটি দেশকেই শোকার্ত করেছে। ঘটনা তদন্তে নেপালের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি করেছে। এ ধরনের দুর্ঘটনায় বহুপক্ষীয় সংশ্লিষ্টতার কারণে স্বাভাবিকভাবেই পক্ষগুলোর তরফে আরও কিছু তদন্ত উদ্যোগ নেওয়া হবে। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর উড়োজাহাজ ওঠা-নামার জন্য একটি জটিল বিমানবন্দর হিসেবেই বিবেচিত। দুর্ঘটনার পেছনের কারণ নিয়ে নানা প্রসঙ্গ আলোচিত হচ্ছে কিন্তু দুর্ঘটনাটি প্রকৃতই কেন ঘটেছে, তা নিশ্চিত হতে সময় লাগবে বলেই মনে হচ্ছে। আমরা আশা করব, বাংলাদেশ সরকারের তরফেও এর যথাযথ তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে যঁারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন, তাঁদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা–সুবিধা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি বাংলাদেশি যঁারা নিহত হয়েছেন তঁাদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে পরিবার ও স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা। এ ব্যাপারে সরকারের তরফে যেমন উদ্যোগ প্রয়োজন, তেমনি ইউএস–বাংলা এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে নেপালে চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার খরচ বহনের কথা ঘোষণা করেছে। আমরা মনে করি, উন্নত চিকিৎসার জন্য কাউকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা বা তৃতীয় কোনো দেশে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়লে সেই উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রাণহানির ক্ষতি কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয়। নিহত যাত্রীদের স্মৃতি হয়ে যাওয়া যে ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেগুলো দেশবাসীকে কাঁদাচ্ছে। কেউ হারিয়েছেন স্বামীকে, কেউ স্ত্রী, মা-বাবা বা বোনকে। পুরো পরিবারও মারা গেছে এ দুর্ঘটনায়। কোনো কিছুই পরিবারগুলো যা হারিয়েছে, তা পূরণ করতে পারবে না। এরপরও যঁারা নিহত হয়েছেন তঁাদের পরিবারগুলো যাতে নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ পায়, ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

কাঠমান্ডুর ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়াই হবে এখন সবচেয়ে জরুরি কর্তব্য। উড়োজাহাজ পরিচালনায় নিরাপত্তাসংক্রান্ত কোনো ধরনের ফাঁকফোকরের ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী জিরো টলারেন্সের নীতি নেওয়া হয়। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিমান দুর্ঘটনার পরিণতি নিশ্চিত মৃত্যু। কাঠমান্ডু দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট মহলে কঠোর আত্মজিজ্ঞাসা জরুরি। বর্তমানে দেশে যেভাবে বিভিন্ন বেসরকারি এয়ারলাইনসের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, সেখানে উড়োজাহাজ পরিচালনার নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি আছে কি না, তা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে যাচাই–বাছাই করে দেখতে হবে। প্রয়োজনে বর্তমান বিধিবিধান আরও কঠোর করতে হবে অথবা বিধিবিধান যাতে কার্যকর হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।

কাঠমান্ডু দুর্ঘটনার তদন্তের ফলাফলে আমাদের কোনো দুর্বলতা উদ্‌ঘাটিত হলে, সেগুলো আমলে আনতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভয়াবহ কিছু এড়াতে হলে সেই দিকগুলোতে নজর দিতে হবে।