ব্যবসায়ী সজল চৌধুরী অপহরণ

শুধু প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই কি ব্যবসায়ী সজল চৌধুরীকে ‘ডিবি’ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে? এই ভয়ংকর অপরাধ যারাই করুক, তাদের লক্ষ্য ‘ডাকাতি’র মতো কিছু ছিল না বলেই প্রতীয়মান হয়। কারণ, কোনো অর্থকড়ি বা সম্পদ লুণ্ঠনের মতো কিছুর আলামত এখনো মিলছে না। অপহৃত সজল কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন না; বরং তাঁর মা দেলোয়ারা বেগম আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। পুলিশ, র‌্যাব ও ডিবির দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সজলের পরিবার এখন পর্যন্ত কোনো ভরসা পায়নি; বরং এখন অপহরণের চেয়েও বড় জ্বলন্ত প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে ভুল তথ্যে জিডি হওয়া এবং সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে গুরুতর সন্দেহ দেখা দেওয়া।

সজল অপহরণের ঘটনাপরম্পরা থেকে এটা পরিষ্কার যে নগরীতে

অত্যন্ত চৌকস অপহরণকারীর আবির্ভাব ঘটেছে। যে কায়দায় এই অপহরণ ঘটেছে তাতে এটা পরিষ্কার যে তারা যথেষ্ট প্রশিক্ষিত এবং শুধু ‘ডিবি’র পরিচয়দানই নয়, সিসিটিভির ফুটেজ নিশ্চিহ্ন করার মতো প্রযুক্তিজ্ঞানও তাদের টনটনে। অপহরণকারীদের লক্ষ্য নিছক অপহরণই ছিল না বলে মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বাসা থেকে নিরস্ত্র অবস্থায় একটি লোককে অপহরণ করতে গিয়ে তাঁর মায়ের সামনে তাঁকে নির্যাতন করার দরকার ছিল না, কিন্তু অপহরণকারীরা তা করেছে। তিনি কারও না কারও প্রতিহিংসার শিকার হয়ে থাকতে পারেন।

সজলের পরিবারের আশঙ্কা, ব্যবসায়ী অংশীদারের সঙ্গে লেনদেন নিয়ে বিরোধ এবং এ নিয়ে মামলার ঘটনাটি ছাড়া তাদের সামনে সজলের ‘পূর্বশত্রুতার’ আর কোনো বৃত্তান্ত নেই। ওই বিরোধকেই অপহরণের কারণ হিসেবে ধরে নেওয়ার যেমন কারণ নেই, তেমনি তাকে নাকচ করাও যাবে না; বরং গোড়াতে ওই বিরোধের বিষয়ে বিস্তারিত জানার ব্যাপারে তদন্তকারীরা আগ্রহী হবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভুক্তভোগী পরিবার যখন রাষ্ট্রকে তাদের পাশে পাওয়ার সব রকম সহানুভূতি নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিল, তখন ভাটারা থানার ভূমিকাই সব থেকে রহস্যজনক হয়ে উঠেছে। তাদের এই ভূমিকা বরং জনমনে নানা সন্দেহ তৈরি করছে।

আমরা সত্যি একটি অদ্ভুত সময় অতিক্রম করছি। বাঙালির সব থেকে

গর্বের ধন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জাতীয় জীবন ও রাজনীতিতে প্রতিনিয়ত কত কী ঘটে যাচ্ছে। অথচ অপহৃত সজল চৌধুরী একজন বীর শহীদের সন্তান হলেও তাঁর অপহরণের ব্যাপারে প্রশাসনের তরফে স্বাভাবিক সহায়তাটিও মিলছে না।

৪৬ বছর আগে দেলোয়ারা বেগম স্বামী যুদ্ধ থেকে ফিরবেন কি ফিরবেন না, সে জন্য অপেক্ষমাণ ছিলেন। সজল চৌধুরী তখন তাঁর পেটে। আজ ৪৬ বছরের ব্যবধানে যখন প্রতিনিয়ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার ধ্বনিত হচ্ছে, তখন দেলোয়ারা বেগমের জীবনে অপেক্ষা পর্বের দ্বিতীয় উপাখ্যান

শুরু হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা স্বামীর লাশ তিনি পাননি। এখন তাঁর সামনে প্রশ্ন,

তিনি ছেলেকে কবে, কীভাবে ফিরে পাবেন? আমরা আশা করব, একজন শহীদপুত্রের অপহরণের তদন্ত ও প্রতিকার এই রাষ্ট্র সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে

গ্রহণ করবে।

এ ধরনের শক্তিশালী ও প্রশিক্ষিত অপহরণকারী চক্র যদি দেশে সক্রিয় থাকে এবং তারা যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, তবে এই ব্যর্থতার দায় সরকারকে নিতেই হবে। তা ছাড়া, ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম কামরুজ্জামান ও তাঁর সহযোগীরা ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জিডি নিয়ে যে আচরণ করেছেন বলে শনিবারের প্রথম আলোর শেষ পাতায় ছাপা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব, প্রধান বিচারপতি ও স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং তাঁদের তরফে যথাযথ হস্তক্ষেপ কামনা করছি।