গত শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত সচিত্র খবরে দেখা যায়, এসপির বাংলোর সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের নামে প্রতিবেশী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা লুৎফুন্নেসার জমি দখল করা হয়েছে। সেখানে লুৎফুন্নেসার ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমি থাকলেও তিনি সেখানে বসবাস করেন না। অসুস্থ স্বামী ও কলেজপড়ুয়া সন্তানকে নিয়ে তিনি শহরের অন্য এলাকায় বসবাস করেন। তবে ওই জমিতে তাঁর বাবা-মায়ের কবর আছে। এসপি সাহেব নিজের বাংলোর সীমানাপ্রাচীর তুলতে গিয়ে সেই কবর দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে লুৎফুন্নেসা কোনো প্রতিকার না পেয়ে জেলা প্রশাসকের শরণাপন্ন হন। জেলা প্রশাসক বলেছেন, সরকারি সম্পদ দখলের বিষয় হলে তাঁরা তদন্ত করে থাকেন। এটি যেহেতু ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তি, তাই পুলিশ প্রশাসনের কাছেই তারা অভিযোগটি পাঠিয়ে দিয়েছে, যা শিয়ালের কাছে মুরগি জমা রাখার মতো। যেই পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ, সেই পুলিশ প্রশাসনের কাছে প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে করি না।
যশোরের এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জমিসংক্রান্ত অভিযোগের এখানেই শেষ নয়। জমির প্রতি এই পুলিশ সুপারের বিশেষ প্রীতি আছে বলেই মনে হয়। পুলিশ লাইনসের সামনে ১০টি দোকান ও ৩১টি পরিবার উচ্ছেদ করে যে জমি নিজেদের দখলে নিয়েছে, সেই জমির মালিক জেলা পরিষদ। পুলিশ সুপারের নির্দেশে সেখানে দোকান তৈরি করে লিজ দেওয়ার পাঁয়তারা চলছিল। জেলা পরিষদের আপত্তির মুখে নির্মাণকাজ বন্ধ থাকলেও সেখান থেকে উচ্ছেদ হওয়া মানুষগুলো বিপদে রয়েছেন।
উচ্ছেদ হওয়া একটি দোকানের মালিক ও মানবাধিকারকর্মী বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক পুলিশ সুপারের জবরদস্তির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করলে তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দেয় ও তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিনয় কৃষ্ণ দ্বিতীয়বার সংবাদ সম্মেলন করলে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধেও মামলা দেয়। আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে এভাবে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করে চলেছে যশোরের পুলিশ। উল্লেখ্য, যে এসপির নির্দেশে পুলিশ লুৎফুন্নেসার বাবা-মায়ের কবরসহ জমি দখল করেছে, তিনি ছিলেন তাঁর প্রাক্তন ছাত্র। একজন শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীর এ কেমন আচরণ?
জমি দখল ও মামলা দিয়ে হয়রানির যে অভিযোগ যশোরের এসপির বিরুদ্ধে উঠেছে, তা গুরুতর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন। আমাদের দাবি, নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষ দিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। আপাতত এমন পুলিশ কর্মকর্তার হাত থেকে যশোরের মানুষকে মুক্তি দেওয়া হোক।