ব্যবসায়ী সজলের ফিরে আসা

সজল চৌধুরী
সজল চৌধুরী

যেকোনো বিবেচনাতেই হোক, শহীদপুত্র ব্যবসায়ী সজল চৌধুরীর ফিরে আসা একটি স্বস্তির বিষয়। তাঁর প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে যাঁরাই ভূমিকা রেখেছেন, তাঁরা ধন্যবাদার্হ্য। এ ধরনের অপহরণের পর কেউ কেউ ফিরে আসেন, কেউ কেউ ফেরেন না। কিন্তু সব ক্ষেত্রে যে সাধারণ মিলটি রয়েছে তা হচ্ছে এই অপহরণকারী চক্র সম্পর্কে আমরা আর কিছুই জানতে পারি না। এই চক্রকে চিহ্নিত করা যে দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, তা তারা বিবেচনায় নেয় বলে মনে হয় না।
ব্যবসায়ী সজল চৌধুরী অপহরণের ব্যাপারে ফিরে এসে নির্যাতনের যে বিবরণ দিয়েছেন, তাকে প্রাথমিকভাবে তদন্তযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। সে ক্ষেত্রে শুরুতেই এটা খতিয়ে দেখা দরকার যে নগরীতে ব্যবসায়িক বা পারিবারিক কোনো বিরোধের পরিণতিতে এভাবে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের অপহরণ অভিযান এত সফলভাবে পরিচালনা করা কী করে সম্ভব হলো?

এটা দুর্ভাগ্যজনক যে সে বিষয়ে আমাদের এলিট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর তরফে কোনো ব্যাখ্যা আমরা পাইনি। সজল চৌধুরীর বক্তব্যে র‍্যাবের প্রসঙ্গ এসেছে, সেই সূত্রে র‍্যাবের গণমাধ্যম মুখপাত্রকে আমরা কেবলই আত্মপক্ষ সমর্থন করতে দেখলাম। জনগণের কাছে সত্য প্রকাশের কোনো তাগিদ আমরা দেখলাম না। কারণ, র‍্যাব বা ডিবি বলে কোনো কথা নয়, সজল চৌধুরীকে যেভাবে অপহরণ করে ফেরত দেওয়া হয়েছে, তাতে সমাজে বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটা অজানা ভীতি ও আশঙ্কার বিস্তার ঘটতে পারে।

‘ডিবি’ পরিচয় দিয়ে তুলে নেওয়া বা দরজার চাবির রিংয়ে দৃশ্যত র‍্যাব-১–এর লোগো ব্যবহার করার মতো বিষয়গুলো ছদ্মবেশী ভাড়াটে গোষ্ঠীগুলোর পরিকল্পিত কৌশলের অংশ হতেই পারে। কিন্তু যখন যেটা ঘটেছে বা প্রতীয়মান হয়েছে, সেসবের অবিকল বিবরণ দেওয়া ভুক্তভোগীর মৌলিক অধিকার এবং সেসবই সরকারি তদন্ত সংস্থাগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা। কিন্তু এসবের সত্যতা সম্পর্কে তদন্তের আগে কোনো মন্তব্য করা পেশাদারত্বের পূর্বশর্তগুলোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

যারাই সজল চৌধুরীকে তুলে নিক, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসূত্রের কোনো ইঙ্গিত এখনো মেলেনি। যেটা আপাতত পরিষ্কার সেটা হলো সজল চৌধুরী যেকোনোভাবেই হোক, ব্যক্তিগত স্বার্থের টানাপোড়েনের কারণে প্রতিহিংসার শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। আরও আশঙ্কা হলো এ ধরনের প্রতিহিংসা মেটানোর জন্য নগরীতে বেসরকারি বাহিনী ভাড়া করা যায় এবং যারা এমনই সাফল্যের সঙ্গে অপারেশন পরিচালনা করতে পারে, যার সঙ্গে কোনো চৌকস বাহিনীর দক্ষতার সঙ্গে সাযুজ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

অন্যদিকে বিষয়টিকে এখন যেভাবে বাহ্যত মূল্যায়ন করা হচ্ছে বা সন্দেহ করা হচ্ছে, তার সঙ্গে প্রকৃত ঘটনার মিল নাও থাকতে পারে। ফলে এই ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য রহস্যভেদ ও কারা এই কাজটি করেছে তাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার বিষয়টি খুবই জরুরি।

অপহরণের শিকার সজল চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের তরফে যেহেতু র‍্যাব ও ডিবির নাম উচ্চারিত হয়েছে, তাই অপহরণকারী চক্রকে ধরে তাদের প্রমাণ করা উচিত যে প্রকৃত অপকর্ম কারা করেছে। তা ছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে এ ধরনের অপহরণকারীদের ধরে বিচারের মুখোমুখি করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তা করতে না পারলে সেটা বাহিনীগুলোর ব্যর্থতা হিসেবেই বিবেচিত হবে। সজল চৌধুরীকে অপহরণকারীদের মতো বিপজ্জনক, চৌকস ও প্রশিক্ষিত গোষ্ঠী যদি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়, তবে যে কেউ এদের শিকারে পরিণত হতে পারে।

আমরা এই ঘটনার বিভাগীয় ও বিচারিক তদন্ত দাবি করছি।