টিলা কেটে পুনর্বাসন?

পরিবেশবিদদের মতে, নির্বিচারে পাহাড়ের মাটি কাটাই পাহাড়ধসের অন্যতম কারণ। গত বছরের জুনে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের ঘটনায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। এর অন্যতম কারণ ছিল পাহাড় কাটা ও অপরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো নির্মাণ। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে যেখানে পাহাড় কাটলে পাহাড়ধসের মতো বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা আছে, সেখানে কোন বিবেচনায় সংসদীয় উপকমিটি এ ধরনের সুপারিশ করে?

পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পাহাড় ও টিলা কাটা নিষিদ্ধ। পাহাড় কাটার ওপর রয়েছে আদালতের নিষেধাজ্ঞা। তারপরও পাহাড় কাটা থেমে নেই। এসব পাহাড় কাটার সঙ্গে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যুক্ত থাকেন স্থানীয় প্রভাবশালী ও যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের নেতা-কর্মীরা। ডোবা ভরাট করে ভিটা তৈরির জন্য, ভাটার ইট বানানোর জন্য পাহাড় কেটে মাটি সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া স্কুলের মাঠ ভরাট, সড়ক নির্মাণ, পুকুর, নদী বা খালের পাড় ভরাট ইত্যাদি নানা সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পেও পাহাড়ের মাটি ব্যবহার করা হয়। অর্থের লোভে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব মাটি বিক্রি করছেন। পাহাড় কেটে সেখানে নানা ধরনের স্থাপনা নির্মাণও চলছে পার্বত্য ও পাহাড়ি এলাকাগুলোতে। পাহাড় কাটার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে জন্মানো গাছপালাও কাটা পড়ছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। হাজার রকমের বন্য প্রাণীর নিরাপদ আবাস হলো পাহাড়। পাহাড় কাটার ফলে অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে।

এই যখন পরিস্থিতি, তখন টিলা কেটে বহুতল ভবন নির্মাণের এই সুপারিশ আমাদের হতবাক করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ূন আখতার টিলা কেটে বহুতল ভবন নির্মাণের সুপারিশকে অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ধরনের সুপারিশ করার আগে সংসদীয় উপকমিটির উচিত ছিল এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া। আশ্রয়হীন ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের পুনর্বাসন করার জন্য বিকল্প কোনো উপায় ভাবতে হবে। টিলা কেটে সমতল করে ভবন নির্মাণ করার চিন্তা বাদ দিয়ে তাদের সমতলেই পুনর্বাসনের চিন্তা করতে হবে।

আমরা মনে করি, পাহাড় রক্ষার জন্য বরং সরকারকে আরও কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাহাড় কাটাসহ পরিবেশ ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পুরো পাহাড়ি অঞ্চল যাতে সংরক্ষিত ও সেখানে যাতে কেউ গাছ কাটতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাহাড়কে পাহাড়ের মতো থাকতে দিতে হবে।