কে প্রথম যুদ্ধের দামামা বাজাবে?

মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের সব পক্ষ এখন ব্যাপক মানসিক চাপ এবং সামরিক সতর্কতার মধ্য রয়েছে। তাদের মনে এখন প্রশ্ন, কে প্রথম লড়াইটা শুরু করবে? একদিকে অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা, সেখানে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর এবং পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপন নিয়ে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ও হতাশ। এরই জেরে তিনি প্রকাশ্যে ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রিডম্যানকে গালাগাল করেছেন।

রাষ্ট্রদূত ফ্রিডম্যানও বসে থাকেননি। পাল্টা হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আব্বাসকে। তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি মেনে নেওয়ার জন্য আব্বাসকে সতর্ক করেন, নয়তো পশ্চিম তীরে আরও বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

এমন একটি কথা প্রচার পেয়েছে যে আব্বাসকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ও ‘ডিল অব সেঞ্চুরি’ নামে একটি চুক্তি মেনে নিতে এবং ফিলিস্তিনিদের দাবিগুলো আংশিকভাবে বা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারে রাজি করাতে মার্কিন প্রশাসন এখন ফিলিস্তিনি নেতাদের সঙ্গে গোপন আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের ভেতর এবং বাইরের লোকও আছেন।

ধারণা করা হচ্ছে যে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এবং ইসরায়েলের মধ্যে সমন্বয় সাধনের দায়িত্বে থাকা জেনারেল মজিদ ফারাগও এই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।

এদিকে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএতে মার্কিন সাহায্য কমিয়ে দেওয়া এবং একই সময়ে গাজা উপত্যকায় অবরোধ আরোপের ঘটনায় ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন। ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, নিক্কি হ্যালির ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাত রয়েছে। তিনি একজন ঘৃণিত ব্যক্তি এবং অন্ধকার মতাদর্শের রাষ্ট্রদূত।

গত ৩০ মার্চ ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের নিহত হওয়ার ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কোনো নিন্দা না জানানোতেও ক্ষুব্ধ হন ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জাতিসংঘের নিন্দা আদায়ে ব্যর্থতার জন্য নিক্কি হ্যালিকে দায়ী করেন। এরপর নিক্কি হ্যালির বিরুদ্ধে তাঁর এই বিষোদ্‌গার।

অন্যদিকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল গাদি এইজেনকট একটি কড়া বার্তা প্রকাশ করেছেন। তাতে তিনি এখন থেকে আগামী আট মাসের মধ্যে লেবাননের হিজবুল্লাহকে নির্মূল করার জন্য বিধ্বংসী যুদ্ধ শুরুর হুমকি দেন। সিরিয়া ও ইরান ছাড়াও লেবাননের হিজবুল্লাহকে ইসরায়েল তাদের সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মনে করে।

 ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগদর লিবারম্যানও বলেছেন, ইসরায়েলের জনগণ গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় মোতায়েন করা হয়েছে। জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের প্রতিবাদে আসন্ন নাকবা দিবসে ফিলিস্তিনিরা ব্যাপক বিক্ষোভ করতে পারে, এই আশঙ্কায় পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। আগামী ১৫ মে ফিলিস্তিনি জনগণের মহাবিপর্যয়ের বার্ষিকী বা নাকবা দিবস পালিত হবে।

 অন্যদিকে হামাস আন্দোলনের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডস সম্প্রতি ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে রকেট, বিমান ও গুলির মহড়া চালিয়েছে। এতে প্রায় ৩০ হাজার হামাস সদস্য অংশ নিয়েছে। এই প্রথমবার কাসাম ব্রিগেডস জনসমক্ষে প্রদর্শন করল যে তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আছে।

 ইসরায়েলি সেনাপ্রধান সরাসরি সিরীয় ফ্রন্টের কথা উল্লেখ করেননি, যেখানে এখন হিজবুল্লাহ ছাড়াও ইরানি, রুশ, তুর্কি ও মার্কিন বাহিনী রয়েছে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এটা প্রচার করছে যে ইসরায়েলের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পর তারা সিরিয়ার ওপর নতুন হামলার আশঙ্কা করছে।

জেনারেল এইজেনকট ইসরায়েলকে ঘিরে থাকা দেশগুলো সম্পর্কে, বিশেষ করে মিসর, জর্ডান ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কথা উল্লেখ করেননি। কারণ খুবই সাধারণ, এই দেশগুলো আরও বেশি জোটের সদস্য হয়েছে, যা ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয়গুলোর সমন্বয় সাধন করে।

জেনারেল এইজেনকট লেবাননে হিজবুল্লাহর কয়েক হাজার লক্ষ্যবস্তুর কথা উল্লেখ করেন, যা ধ্বংস করার তালিকায় রাখা হয়েছে। এই যুদ্ধক্ষেত্র হতে পারে লেবাননের রাজধানী বৈরুত থেকে শুরু করে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত গালিলিতে, যেমনটি হয়েছিল ২০০৬ সালের জুলাই মাসে, কিন্তু এই লড়াই হবে আরও মারাত্মক, আরও ধ্বংসাত্মক।

হিজবুল্লাহ নেতা সায়িদ হাসান নাসরাল্লাহ ইসরায়েলকে আসন্ন যুদ্ধ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন এবং দ্রুত তাদের অধিকৃত ভূমি ছেড়ে দিতে বলেছেন। তাঁর মতে, তাদের সঙ্গে লড়াইটা ইসরায়েলের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াতে পারে। কেননা হিজবুল্লাহর রয়েছে হাজার হাজার রকেট এবং নজিরবিহীন ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা।

ইংরেজি থেকে অনূদিত

কামাল গাবালা মিসরের সাংবাদিক, আল আহরাম পত্রিকাগোষ্ঠীর সাবেক ব্যবস্থাপনা সম্পাদক