কোটা সংস্কারের আন্দোলন

এটা স্বস্তির বিষয় যে রোববার রাতের সহিংসতার পর গতকাল সরকার চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে। বৈঠকে সরকার বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষার আশ্বাস দিয়েছে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন আগামী ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত করেছেন।

আমরা মনে করি, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে রোববার যে ঘটনা ঘটল তা সহজেই এড়ানো যেত। সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে এই আন্দোলন দুই মাস ধরে চলে আসছে। যদিও পাঁচ বছর ধরেই এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দাবি উঠেছে, আন্দোলন হয়েছে। এই দাবির পক্ষে যে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে, তা পরিষ্কার। দেশের সচেতন নাগরিক ও বিশেষজ্ঞ পর্যায় থেকেও কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের পক্ষে মত এসেছে। সরকারি চাকরির ৫৬ ভাগ কোটার আওতায় থাকার অর্থ অনেক মেধাবী প্রার্থীর সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হওয়া। এতে একদিকে যেমন চাকরিপ্রার্থী মেধাবীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম নেয়, তেমনি দেশও যোগ্য এবং মেধাবীদের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই একে যৌক্তিক করার পক্ষে মত দিয়েছেন। বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের যৌক্তিকতা তুলে ধরে গণমাধ্যমে অনেক লেখালেখি এবং আলাপ-আলোচনাও হয়েছে।

এটা দুর্ভাগ্যজনক যে সরকার প্রথমে বিষয়টি নিয়ে গা করেনি। আন্দোলনকারীরা অব্যাহতভাবে তাঁদের দাবি তুলে ধরতে থাকলেও সরকার তাঁদের কথা শোনা বা এ নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনার পথ ধরেনি। রোববার কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তঁাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবেই শাহবাগে জড়ো হয়েছিলেন। সেই সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও জলকামান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে পুরো পরিস্থিতি কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সরকারের নীতিনির্ধারক মহল এ ক্ষেত্রে প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে পারেনি। এরপর উপাচার্যের বাসভবনে যে ধরনের ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে, তা অতীতে কখনো কোনো পরিস্থিতিতেই ঘটেনি। আমরা শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলা ও উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনার কঠোর নিন্দা জানাই।

ঢাকায় রোববার সন্ধ্যা ও রাতের সহিংসতার জের ধরে দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতেও জোরালো আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। এটা ইতিবাচক যে দেরিতে হলেও সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেছে। বৈঠকে সরকারপক্ষের নেতৃত্বদানকারী সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘কোটা সংস্কারের ব্যাপারে সরকার অনড় অবস্থানে নেই। আমরা তাঁদের দাবির যৌক্তিকতা ইতিবাচকভাবে দেখি।’ আমরা মনে করি, যৌক্তিকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করলে এই সমস্যার সমাধান কোনো কঠিন কাজ নয়। আশা করব, সরকার তাদের দেওয়া আশ্বাস অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ নিয়ে আর কোনো অশান্তি কাম্য নয়।