বাসে ফের নারী ধর্ষণ

ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আসামিরা গ্রেপ্তার হচ্ছে, শাস্তি পাচ্ছে। কিন্তু চলন্ত বাসে নারী ধর্ষণ থামছে না। আবারও চলন্ত বাসে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটল। আর ঘটনার হোতা বাসচালকসহ পাঁচ দুর্বৃত্ত।

প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, রোববার রাত নয়টার দিকে কারখানা ছুটি হলে ধামরাইয়ের শ্রীরামপুরে একটি পোশাক কারখানার এক কর্মী ঢাকাগামী যাত্রীসেবা পরিবহনের একটি বাসে উঠে পড়েন। তিনি থাকেন কারখানা থেকে ২০ মিনিটের দূরত্বে ইসলামপুরে। বাসটি শ্রীরামপুর থেকে পরের স্টেশনে কালামপুরে থামলে অন্য সব যাত্রী নেমে যান এবং ওই পোশাককর্মী একাই থেকে যান। এ সুযোগে বাসের চালক বাবু ও মিস্ত্রি আবদুল আজিজ তাঁকে ধর্ষণ করেন। তখন বাস চালাচ্ছিলেন সোহেল নামের আরেক সহযোগী। অন্যরা তাঁর হাত-পা ধরে রাখেন। এ সময় ওই নারীর চিৎকারে পুলিশ বাসটি থামানোর সংকেত দিলেও চালক তা অমান্য করে চালিয়ে যান। পুলিশ সাত কিলোমিটার ধাওয়া করে বাসটিকে ইসলামপুর থেকে আটক এবং ওই নারীকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় বাস থেকে আটক বাসচালক বাবু মল্লিক, মিস্ত্রি আবদুল আজিজ, সুপারভাইজার বলরাম, মকবুল হোসেন ও সোহেল ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন।

গত বছরের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে বহুজাতিক কোম্পানির কর্মী রূপা খাতুন চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। দুর্বৃত্তরা তাঁকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। ওই ঘটনায় আদালত বাসটির চালকসহ চারজনের ফাঁসির আদেশ দেন। ধামরাইয়ের ঘটনায় বাসের পাঁচ কর্মী সরাসরি দায়ী। তবে ওই পরিবহনের মালিকও দায় এড়াতে পারেন না।

যাত্রীদের পূর্ণ নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েই তিনি সড়কে বাস চলাচলের ছাড়পত্র নিয়েছেন। তাই, মালিক তাঁর পরিবহনে এমন কর্মী নিয়োগ করতে পারেন না, যে বা যারা যাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতার কারণ হতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তিনি যাঁদের নিয়োগ দিয়েছেন, তাঁরা ধর্ষক।

অতএব, ধর্ষকদের বিচারের পাশাপাশি বাসমালিককেও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। ধামরাইয়ে তৈরি পোশাককর্মীর ধর্ষণের ঘটনায় বিজিএমইএ নিন্দা করেছে। কিন্তু এতেই তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। যেই কারখানার মালিক নারী শ্রমিকদের রাত নয়টা পর্যন্ত কাজ করান, তাঁদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও তাঁকে নিতে হবে।

অপরাধীদের ধরতে পুলিশ ত্বরিত ব্যবস্থা নিয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্টরা ধন্যবাদ পেতে পারেন। আমরা আশা করব, একইভাবে দক্ষতা ও সততার সঙ্গে তদন্তকাজ শেষ করবেন। কেননা, অপরাধী শান্তি পাবে কি না, সেটি নির্ভর করে তদন্ত ও সাক্ষ্যের ওপর। সাম্প্রতিক কালে নারী ধর্ষণের ঘটনা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। শুধু আইন বা বিচার দিয়ে এটি রোধ করা যাবে না। এর জন্য চাই সামাজিক জাগরণ ও প্রতিরোধ। আর সেটি পরিবার থেকেই শুরু হওয়া বাঞ্ছনীয়।