অমানবিক আচরণ

মিরপুরের বাউনিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে ক্লাবঘর নির্মাণ করায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত শৌচাগারগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। এর ফলে সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাড়াও ৩০০ শিশু কষ্টে আছে। শৌচাগারের পয়োনালা বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়ে অবস্থানকালে তারা প্রয়োজনে তা ব্যবহার করতে পারে না। অনেক সময় শিক্ষকদের অনুমতি নিয়ে বাড়িতে গিয়ে কাজটি করতে হয়। দীর্ঘ সময় পায়খানা বা প্রস্রাব চেপে রাখার কারণে দীর্ঘমেয়াদি অসুখে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা।
যেকোনো বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যসম্মত প্রক্ষালনাগার থাকা অপরিহার্য। মিরপুরে বাউনিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ছিল। প্রথম আলোর রাজধানী পাতার খবর অনুযায়ী, ২০১০ সালে বিদ্যালয়ের মাঠের একাংশ দখল করে স্থানীয় যুবলীগের নেতা-কর্মীরা সাবেক সাংসদ হারুন মোল্লার নামে একটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এ কারণে বিদ্যালয়ের শৌচাগারের পয়োনালা বন্ধ হয়ে যায়। এতে মারাত্মক সমস্যায় পড়েন বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমস্যাটি সমাধানে ক্লাবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েও সফল হননি। কেননা ক্লাবের কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের বরাবরই আইনের ঊর্ধ্বে ভাবেন। না হলে বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে তাঁদের ভাষায় ‘কমিউনিটি ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করবেন কেন? ক্লাবের সহসভাপতি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, পয়োনালার সমস্যার কারণে আগে থেকেই ছয়টি শৌচাগারের মধ্যে দুটি বন্ধ ছিল। আর ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর সব কটি বন্ধ হয়ে গেছে। যাঁরা স্থানীয় মানুষের হিতসাধনে কমিউনিটি ক্লাব করেছেন, তাঁদের কি বিদ্যালয়ের ৩০০ শিশু শিক্ষার্থীর প্রতি কোনো দায় নেই?
ক্লাবের সহসভাপতির দাবি যে সম্পূর্ণ অসত্য, তার সাক্ষী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা । তিনি সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করেও সফল হননি স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অসহযোগিতার কারণে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও বলেছেন, ক্লাবের কর্মকর্তারা কোনোভাবে লাইন মেরামত করে দিতে রাজি হচ্ছেন না। তাঁরা বিদ্যালয়ের জায়গায় ক্লাব নির্মাণ করে পয়োনালা বন্ধ করে দেবেন। আর সেটি চালু করার কথা বললেও শুনবেন না। সরকারি দলের নামে এই দৌরাত্ম্য আর কত দিন চলবে?
স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস মোল্লা, যাঁর বাবার নামে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত, তিনিও স্বীকার করেছেন, বিদ্যালয়ের জায়গায় ক্লাব হতে পারে না। কিন্তু সাংসদের এই স্বীকারোক্তি যথেষ্ট নয়। তাঁর সম্মতি ছাড়া যদি ক্লাব হয়েও থাকে, তিনি সেটি ভেঙে দিচ্ছেন না কেন? তাঁর বাবার নাম ব্যবহার করে অবৈধ দখলদারি কেন মেনে নিচ্ছেন? অবিলম্বে বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে ক্লাবটি সরিয়ে ফেলা হোক। শিশু শিক্ষার্থীরা যাতে প্রক্ষালনাগারটি ব্যবহার করতে পারে, সাংসদ সেই ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করি।