প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা

সংসদে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
সংসদে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ গতকাল যে তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছে, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে তারা রোববার থেকে লাগাতার আন্দোলন করে আসছিল। এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কোনো কোটা থাকবে না’ বলে জানিয়ে দেন এবং শিক্ষার্থীদের রাজপথ ছেড়ে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, প্রতিবন্ধীসহ অনগ্রসর শ্রেণির মানুষের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেন।

বৃহস্পতিবার ছাত্র পরিষদের নেতারা কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ছাত্রসমাজের কথা বিবেচনা করে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন স্থগিত থাকবে।’ তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ‘গেজেট’ আকারে প্রকাশ করে এর দ্রুত বাস্তবায়ন, গ্রেপ্তার হওয়া আন্দোলনকারীদের নিঃশর্ত মুক্তি, আন্দোলনে ‘পুলিশি নির্যাতনে’ আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন, পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাঁচটি মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান।

উল্লেখ্য, বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা আছে এবং মেধার ভিত্তিতে মাত্র ৪৪ শতাংশ চাকরি পেয়ে থাকেন। এ অবস্থায় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে গত রোববার লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস–পরীক্ষা বন্ধ থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির প্রতি সংহতি জানান। সরকারের পক্ষ থেকে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আন্দোলনকারী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আগামী ৭ মের মধ্যে সমস্যা সমাধানের কথা বললেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা মানেননি। গত বুধবারের আন্দোলনে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। ছাত্রদের মিছিল-সমাবেশের কারণে রাজধানীসহ অনেক স্থানে জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী সংসদে কোটা বাতিল করার কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ আন্দোলন স্থগিত করেছে। আশা করি, শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবেন এবং দ্রুত পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন। এখন সরকারেরই কর্তব্য হবে যত দ্রুত সম্ভব সেই প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন করা। গতকাল জনপ্রশাসনসচিব বলেছেন, যথাসময়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সেই সঙ্গে কোটাব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ‘সুস্পষ্ট নির্দেশনা’ পেলেই বলা যাবে। কথাটি অস্পষ্ট এবং নানা সংশয়-সন্দেহের সৃষ্টি করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর জন্য যে বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলেছেন, সেটি বাস্তবায়নেও আইন ও নীতিমালার প্রয়োজন হবে। আশা করি, সামগ্রিক বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কমিটি অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধানসূত্র বের করবে। আমাদের সংবিধানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতিধর্ম কিংবা জন্মস্থান ভেদে কোনো বৈষম্য করা যাবে না বলে বিধান রয়েছে। আবার অনগ্রসর জনগোষ্ঠী যাতে বঞ্চিত না হয়, সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথাও আছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেও বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।

আন্দোলন চলাকালে বহু শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে যে ন্যক্কারজনক হামলা হয়েছে, সে বিষয়ে বিচার বিভাগীয় কমিটি করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করা হোক। আমরা হামলাকারীদের বিচার চাই। কিন্তু সেই বিচারের নামে যেন কোনো নিরীহ শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার না হন, সেই নিশ্চয়তা সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই দিতে হবে।