চাঁদাবাজি ও পণ্যের দাম

সামনে পবিত্র রমজান মাস, ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার সময়। এই সময়টাতে কিছু খাদ্যপণ্যের দাম তো অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে যায়। এটা একটা সাধারণ সত্য যে বাজারে পর্যাপ্ত পণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহ থাকলে দাম বাড়ে না। কিন্তু বাংলাদেশে এমনও দেখা যায় যে বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য আছে, অথচ দাম স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। এর কারণ কী হতে পারে?

ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) এক সভায় এ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পণ্যের দাম বেশি হওয়ার একটা কারণ পণ্য পরিবহনের পথে পথে চাঁদাবাজি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের উপস্থিতিতে রোববার অনুষ্ঠিত ওই সভায় পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বলেন, পণ্য পরিবহনের সময় প্রতিটি ট্রাকে রসিদ দিয়ে চাঁদা আদায় করা হয়। এটা হচ্ছে পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায়। কিছু লোক ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবের অপব্যবহার করে চাঁদাবাজি করেন কিন্তু পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করে না বা করতে পারে না, এটা যেমন সত্য, তার চেয়েও দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের একটা অংশের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির গুরুতর অভিযোগ আছে। রোববারের সভাতেই পাইকারি ডাল ব্যবসায়ীদের সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সারা দেশে পুলিশ ৫০-১০০ টাকার জন্য গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে রাস্তা আটকে রাখে।

সারা দেশের পথে পথে পুলিশ ও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় চাঁদাবাজি সারা বছরই চলে। এটা একটা স্থায়ী ও নিয়মিত ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে উভয় পক্ষের এই চাঁদাবাজিতে বাড়তি উৎসাহ যোগ হয়। এ সময় চাঁদাবাজি শুধু পণ্য পরিবহন পথেই সীমাবদ্ধ থাকে না, আরও নানা ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ে। পবিত্র রমজানে চাঁদাবাজির একটা বড় খাত হলো ‘ইফতার পার্টি’। রোববারের সভায় ঢাকা চেম্বারের সাবেক সহসভাপতি এস এম শেকিল অভিযোগ করেন, পবিত্র রমজান মাসের ৩০ দিনে একেকটি এলাকায় ৬০টি করে ইফতার পার্টি হয়। এসব ইফতার পার্টির জন্য চাঁদা নেওয়া হয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
চাঁদাবাজির প্রত্যক্ষ শিকার ব্যবসায়ীরাই বটে, কিন্তু তার চূড়ান্ত মাশুল গুনতে হয় সাধারণ ভোক্তাদের। কারণ, চাঁদাবাজির শিকার ব্যবসায়ীরা তাঁদের বাড়তি ব্যয় উঠিয়ে নিতে পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হন। পবিত্র রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের সর্বাত্মক চেষ্টাও ফলপ্রসূ হবে না, যদি চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য কমানোর উদ্যোগ নেওয়া না হয়। সেদিনের সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে ‘পুলিশের কিছু সদস্য চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত’। কিন্তু এটা স্বীকার করাই যথেষ্ট নয়, তাঁদের চাঁদাবাজি বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আর শুধু পুলিশের চাঁদাবাজি নয়, রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় দেশজুড়ে যাঁরা চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।