যুদ্ধে জড়াতে পারে ইসরায়েল ও ইরান

সিরিয়ায় সাত বছর ধরে যুদ্ধ চলছে। ছবি: রয়টার্স
সিরিয়ায় সাত বছর ধরে যুদ্ধ চলছে। ছবি: রয়টার্স

আমাকে থামিয়ে দিন যদি এটা আপনি আগে শুনে থাকেন: সিরিয়া বিস্ফোরিত হতে যাচ্ছে। আমি জানি, এই কথাটি আপনি আগে শুনেছেন, কিন্তু এখন আমি বোঝাতে চাইছি সিরিয়া সত্যিই বিস্ফোরিত হয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে রাসায়নিক অস্ত্রের অপব্যবহারের জন্য দেশটির সরকারকে শাস্তি দিতে এবং রাশিয়া এ হামলার জবাব দেবে বলে অঙ্গীকার করেছে—এটা প্রকৃতপক্ষে সিরিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিপজ্জনক পরিস্থিতি।

এর চেয়েও বড় বিপদের কথা হচ্ছে ইসরায়েল ও ইরান সিরিয়ায় বড় ধরনের যুদ্ধে জড়াতে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। ইরান ইসরায়েলে হামলা চালাতে সিরিয়ায় বিমানঘাঁটি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। আর এদিকে ইসরায়েল বলেছে, তারা কখনোই এ ধরনের কিছু করতে দেবে না। এগুলো নিছক জল্পনাকল্পনা নয়। গত কয়েক সপ্তাহে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি বাগ্‌যুদ্ধ হয়েছে। 

ইসরায়েল ও ইরান এখন যুদ্ধ থেকে অল্প দূরত্বে রয়েছে। আর যুদ্ধ যদি শুরু হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া বুঝতে পারবে এ থেকে বের হওয়া কতটা কঠিন। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে এই লড়াই সরাসরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যা নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে, কারণ এটা হয়তো হবে দেশ দুটির মধ্যে দ্বিতীয় দফার লড়াই। প্রথম দফার লড়াই হয়েছিল গত ১০ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন সিরিয়ার একটি বিমানঘাঁটি থেকে পাঠানো ইরানের একটি ড্রোন ইসরায়েলের আকাশসীমায় প্রবেশ করলে তা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ভূপাতিত করে ইসরায়েলের একটি অ্যাপাচি হেলিকপ্টার। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস কুদস ফোর্স ওই ড্রোনটি পাঠিয়েছিল।

প্রাথমিক খবর অনুযায়ী, ইরানি ড্রোনটিকে শত্রুপক্ষের অবস্থান জানার জন্য অভিযানে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রনেন মানেলিস গত শুক্রবার বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ড্রোনটি বিস্ফোরক বহন করছিল এবং এই মিশন ছিল ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালানো। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এই দাবিকে নিরপেক্ষভাবে যাচাই করার কোনো সামর্থ্য আমার নেই। কিন্তু তাদের দাবি যদি সত্যি হয় তাহলে ধরে নিতে হবে কুদস ফোর্স সত্যিই হয়তো সিরিয়ার একটি বিমানঘাঁটি থেকে ইসরায়েলের ওপর প্রকৃত সামরিক হামলা চালানোর চেষ্টা করছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একটি সূত্র আমাকে বলেছে, ‘এই প্রথমবার আমি দেখলাম যে ইরান সরাসরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কিছু করেছে—কোনো বিকল্প পন্থায় নয়। এই ঘটনা নতুন একটি যুগের সূচনা করেছে।’ গত সোমবার ইসরায়েলের কয়েকটি যুদ্ধবিমান সিরিয়ার টি৪ বিমানঘাঁটিতে ইরানি ড্রোনকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় এবং ওই ঘটনায় ইরানের কুদস ফোর্সের সাত সদস্য নিহত হন। এঁদের মধ্যে ড্রোন ইউনিটটি পরিচালনাকারী কর্নেল মেহদি দেহগানও রয়েছেন। এ ঘটনায় বিশ্ব প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, কারণ সিরিয়ার দুমা এলাকায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের রাসায়নিক হামলার ঘটনায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার খবরটি চাপা পড়ে যায়।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সূত্রটি জানায়, এই প্রথম আমরা ইরানি স্থাপনা ও জনগণের ওপর হামলা চালিয়েছি। এবং ইরানিরা এ ঘটনা তাদের সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে কেবল জানায়ইনি, অতীতে সিরিয়ায় ইসরায়েলের অপ্রত্যক্ষ হামলায় হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কেও বিস্তারিত জানিয়েছে। এবং এর পাল্টা প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকারও করেছে। সিরিয়া সফরকালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার একজন শীর্ষ উপদেষ্টা আলী আকবর ভেলায়াতি বলেছেন, ‘ইসরায়েলের এই অপরাধের জবাব আমরা দেব।’ 

এরপর থেকে ইসরায়েলের ঊর্ধ্বতন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানার চেষ্টা করছেন যে ইরানিরা ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুগুলোতে হামলা চালানোর চেষ্টা করছে কি না। ইসরায়েল হয়তো সিরিয়ায় ইরানের গোটা সামরিক অবকাঠামোয় ব্যাপকভিত্তিক হামলা চালানোর সুযোগ গ্রহণ করবে, যেখানে ইরান একটি বিমানঘাঁটি এবং জিপিএস-নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রের কারখানা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। ওই জিপিএস-নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের ভেতরে লক্ষ্যবস্তুগুলোতে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম হবে। সিরিয়ায় মোতায়েনের পাশাপাশি লেবাননের হিজবুল্লাহর কাছেও এসব ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা হতে পারে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, লেবাননে হিজবুল্লাহকে ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাঁটি গড়তে দেওয়ার মতো কোনো ভুল ইসরায়েল করবে না, যেমন ভুল করেছে ইরানের বেলায়। ইরানের দাবি, ইসরায়েলের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সিরিয়ায় সামরিক অবকাঠামো গড়ে তুলছে তারা। অন্যদিকে সিরিয়াকে নিয়ে ইসরায়েলের কোনো পরিকল্পনা নেই। ইরানের সামরিক অবকাঠামো সম্প্রসারণে বাধা দেওয়া বা সিরিয়ার বিদ্রোহীদের গোলার জবাব দেওয়া ছাড়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে তাদের কোনো যুক্ততা নেই।  

এখন আপনারা বুঝতে পারবেন যে কেন সিরিয়ার এটা সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি—এমনকি পশ্চিমারা যদি হামলা না–ও চালাত, তাহলেও এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতো।

নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

টমাস এল ফ্রিডম্যান মার্কিন সাংবাদিক ও কলাম লেখক