বিদায়, রাজীব হোসেন

রাজীব হোসেন
রাজীব হোসেন

কোনো সাধারণ সড়ক দুর্ঘটনায় দরিদ্র পরিবারের সন্তান রাজীব হোসেনের অকালমৃত্যু হয়নি। সড়কে যান চালনার নিয়ম ভঙ্গ করার বেপরোয়া প্রতিযোগিতার মর্মান্তিক শিকার তিনি। রাজীবের হাত কাটা পড়ার পরপরই সেই বেপরোয়া বাস নিউমার্কেটের কাছে এক গৃহবধূর মেরুদণ্ড ভেঙেছে, এক ছাত্রীর পায়ে গুরুতর জখম সৃষ্টি করেছে।
ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের নাকের ডগায় প্রায়ই এসব ঘটছে। তাঁরা আমাদের নাগরিক সমাজের অনুভূতি এতটাই ভোঁতা করে রাখতে সক্ষম হয়েছেন যে সড়ক দুর্ঘটনার ধারণা বদলে গিয়ে সড়কে যে এখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে, তা আমরা ভালো করে অনুধাবন করতেও পারি না।
৪ এপ্রিল ব্যস্ততম সড়কে একটি সরকারি দ্বিতল বাস এবং স্বজন পরিবহনের একটি বাসের সংঘর্ষে কাটা পড়া রাজীবের হাতের একটি আলোকচিত্র প্রথম আলোয় প্রকাশিত হওয়ায় আলোড়ন তুলেছিল। দুর্লভ মুহূর্তে তোলা দুই বাসের চাপে বিচ্ছিন্ন হওয়া অথচ ঝুলন্ত হাতের ছবি এবং শৈশবে মা-বাবা হারানো
রাজীব কী করে দুই অনাথ ভাইকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পরিশ্রমী জীবনসংগ্রাম চালাচ্ছিলেন, সেই কাহিনি ছাপা হয়েছিল। মানবিক কারণেই সবার হৃদয়কে তা গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল। হাইকোর্ট থেকে এক কোটি টাকার ক্ষতিপূরণসহ তাঁর চিকিৎসা ব্যয় বহনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রাজীব হোসেনের মৃত্যু ঠেকানো গেল না। ২১ বছরের এই তরুণের অকালমৃত্যু শুধু তাঁর জীবনপ্রদীপই নিভিয়ে দেয়নি, তার অপর দুই ছোট ভাই, যারা এতিমখানা ও মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত, যাদের জীবনে আশার পিদিম হয়ে জ্বলছিলেন বড় ভাই রাজীব, তাদের জীবনেও অন্ধকার ও অনিশ্চয়তা দেখা দিল।
আমরা আশা করব, রাজীবের জন্য ক্ষতিপূরণ, অর্থসাহায্য, চাকরিসহ যেসব সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন মহলের বিবেচনায় ছিল, তারা তাঁর ভাই দুটির কথা ভুলে যাবে না। এবং এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা যেন রাজীবের করুণ মৃত্যুর মধ্য দিয়েই শেষ হয়ে না যায়। তাঁর মৃত্যুর দিনটিতেই দুই বাসের অভিযুক্ত চালকেরা জামিন চেয়েছিলেন, তাঁদের জামিন হয়নি। এখন আমরা আশা করব, তাঁদের বিচার ও শাস্তি যেন নিশ্চিত করা হয়। আর ক্ষতিপূরণ দিতে আদালতের নির্দেশ যেন দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়িত হয়। রাজীবের ক্ষতিপূরণের দ্রুত উশুল হোক এবং তা তাঁর দুই ভাইয়ের জীবন গড়তে কাজে লাগুক। মনে রাখা দরকার, রাজীব বেপরোয়া যান চালকদের সড়ক-সন্ত্রাসের বলি। এ দেশে সড়ক দুর্ঘটনার ব্যাপকতার অন্যতম প্রধান কারণ চালকদের এই প্রবণতা। এই প্রাণঘাতী প্রবণতা দূর করতে হবে। কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বেপরোয়া চালকদের রাশ টানতে হবে।