সুন্দরবনে আবার জাহাজডুবি

মোংলা সমুদ্রবন্দরের পশুর চ্যানেলে ডুবোচরে আটকে ৭৭৫ মেট্রিক টন কয়লাবোঝাই জাহাজের ডুবে যাওয়ার ঘটনাটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত শনিবার রাতে সুন্দরবনের কাছে হাড়বাড়িয়া এলাকায় এমভি বিলাস নামের এই জাহাজটি ডুবে যায়। এখন পর্যন্ত জাহাজটি উদ্ধার না করা দুর্ভাগ্যজনক। যদিও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে কার্গোটিতে থাকা কয়লা ‘লো সালফার কোল’, এটি পানির ক্ষতি করে না। কিন্তু তাদের এই দাবি যৌক্তিক নয়। কয়লায় সালফার যত কমই হোক না কেন, পানির ক্ষতি হবেই। জাহাজটি উদ্ধারে যত বিলম্ব হবে, ক্ষতির পরিমাণ ততই বাড়বে। 

প্রতিবছরই সুন্দরবনের আশপাশের এলাকায় জাহাজডুবির ঘটনা ঘটছে। গত বছর সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্ট থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে নিম্নমানের কয়লাবাহী একটি লাইটার জাহাজ ডুবে যায়। ২০১৬ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে আরেকটি কয়লাবোঝাই জাহাজ ডুবে যায়। এর আগে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শ্যালা নদীতে একটি তেলবাহী ট্যাংকার ডুবে গিয়ে সেখানে সাড়ে তিন লাখ লিটারের বেশি ফার্নেস তেল ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে কয়লা ও তেলবাহী জাহাজ ডুবে যাওয়ার কারণে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি আশপাশের এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবন এলাকায় ৩২০টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক দিন ধরে জাতিসংঘসহ পরিবেশবাদীরা সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যান্ত্রিক নৌযান চলাচলের বিরোধিতা করে আসছেন। বন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও একই দাবি তোলা হয়েছে। কিন্তু নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সেসব কথা যে আমলে নেয়নি, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। এমনকি এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচল নিষিদ্ধে ইউনেসকোর সংশ্লিষ্ট বিধিটিরও কোনো তোয়াক্কা করছে না।

সুন্দরবন নানা ঝুঁকিতে রয়েছে। গত এক দশকে সুন্দরবন এলাকায় লবণাক্ততা বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তন ও লবণাক্ততার প্রভাবে আগামী দুই দশক নাগাদ সুন্দরবন থেকে সুন্দরীসহ অনেক গাছ বিলীন হয়ে যেতে পারে। দেশের অন্তত ৪০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। এমন একটি বনকে রক্ষায় এখনই কার্যকর ও স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বাণিজ্যিক নৌযান ও জাহাজ চলাচল বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে, তেল ও কয়লাবোঝাই জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া উচিত হবে না। সুন্দরবন এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই।