আমিরাতের শ্রমবাজার

গত বুধবার বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব নমিতা হালদার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি সাইফ আহমেদ আল সুহাইদির মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, তা দেশটিতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার খুলে দেবে বলে আশা করা যায়। তবে সমঝোতা স্মারক সই হলেই সেখানে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা অবাধে যেতে পারবেন না। সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রথমে ব্যক্তিপর্যায়ে যে জনবলের প্রয়োজন, সেটি বাংলাদেশ থেকে নেবে। পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে শ্রমশক্তি আমদানি করা হবে।

যখন বিভিন্ন দেশে শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে যাচ্ছিল, তখন এই সমঝোতা স্মারক নিঃসন্দেহে আনন্দের সংবাদ। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে শ্রমবাজার খুলে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে
অনুরোধ জানানো হয়েছিল। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিঠি দিয়ে বাংলাদেশকে জানিয়েছেন যে তাঁরা ধাপে ধাপে বাংলাদেশ থেকে কিছু নারী ও পুরুষ গৃহকর্মীর পাশাপাশি কিছু চিকিৎসক ও প্রকৌশলীও নেবেন। আর যাঁরা ইতিমধ্যে সেখানে আছেন, তাঁরা কাজের অনুমতিপত্র বা ইকামা পরিবর্তন করতে পারবেন।

২০১৩ ও ২০১৪ সালের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অপরাধের সঙ্গে যুক্ত বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে ৭০ শতাংশ বাংলাদেশের। আর আটক বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকের হার ৬০ শতাংশ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা সম্পর্কে জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালে পর্যটক শ্রেণিতে বাংলাদেশের ৭০ হাজার নাগরিকের জন্য ভিসা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তাঁদের কেউ কেউ সেখানে কাজের সুযোগ নিয়েছেন।

উল্লেখ্য, দালাল চক্রের নানা অপতৎপরতা এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিকের বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে যুক্ত হয়ে পড়ায় ২০১২ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এর ফলে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বেশ চাপের মধ্যে পড়ে। সৌদি আরবের পর সংযুক্ত আরব আমিরাতেই সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন। ২০১২ সালে সেখানকার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার পরও কিছু কিছু শ্রমিক সেখানে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে সেখানে কর্মরত শ্রমিকেরা যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গিয়েছেন, সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে বিপদে পড়েন। সমস্যাটি সৌদি আরবেও রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, আমিরাত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে।

সমঝোতা স্মারকের পর বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতে হবে, যাতে দালাল চক্র মানুষকে প্রতারিত করতে না পারে। কোনো দেশের শ্রমবাজার খুললেই একটি চক্র মুখিয়ে থাকে কীভাবে বিদেশ গমনেচ্ছুক মানুষকে সর্বস্বান্ত করবে। তারা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেখানে লোক পাঠিয়ে থাকে। এ অবস্থায় বাংলাদেশকেই বদনামের ভাগীদার হতে হয়।

শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গেল বছর জনশক্তি রপ্তানি আয় বেড়েছে। এটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু সৌদি আরব থেকে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক ফিরে আসায় যে নতুন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, আমিরাতে শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হলে সেটি দূর করা সম্ভব হবে। নতুন সমঝোতা স্মারকে শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে নিয়োগকর্তার পাশাপাশি উৎস ও স্বাগতিক—উভয় দেশের দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। অতএব, এ বিষয়েও সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর দেশটিতে কয়েক লাখ বাংলাদেশি কাজের জন্য যেতেন। ২০১৩ সাল থেকে এ সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন মাত্র ৪ হাজার ১৩৫ জন। তাঁদের মধ্যে নারী ৩ হাজার ২৭২ জন।