কাস্ত্রো শাসনের অবসানের পর

ফিদেল কাস্ত্রো ও রাউল কাস্ত্রো
ফিদেল কাস্ত্রো ও রাউল কাস্ত্রো

কিউবার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি অব পিপলস পাওয়ার রাউল কাস্ত্রোর উত্তরসূরিকে নির্বাচন করেছে। দেশটির প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াজ-কানেল কিউবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে কিউবায় কাস্ত্রো পরিবারের প্রায় ৬০ বছরের শাসনের অবসান হলো। কিউবার এই গুরুত্বপূর্ণ উত্তরণের মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিম্ন পর্যায়ে। গত বছর হাভানায় কর্মরত কয়েকজন মার্কিন কূটনীতিকের রহস্যজনক অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি ঘটে।
দিয়াজ কানেল সুপরিচিত নাম নয়, এমনকি কিউবায়ও তিনি খুব একটা পরিচিত নন। কিউবার ভিলা ক্লারা প্রদেশে কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক থেকে শুরু করে বিভিন্ন দায়িত্ব তিনি পালন করেন। তাঁকে নিয়ে নানা ধরনের গল্প আছে। সম্ভবত সরকার থেকে এসব গল্প প্রচার করা হয়েছে। যেমন তিনি খুব বিনয়ী ও আধুনিক, তিনি ভিলা ক্লারা প্রদেশের রাজধানী সান্তা ক্লারায় বাইক চালিয়ে কাজের জায়গায় যান, তিনি একটি আইপ্যাড ব্যবহার করেন, তিনি বিটলস ও রোলিং স্টোনসের ভক্ত।
দিয়াজকে মনে হয় তিনি কাস্ত্রো পরিবারের অনুগত। কাস্ত্রো ভ্রাতৃদ্বয়ের সামনে তিনি তাঁর মাথা সব সময় নিচু করেই রেখেছেন। গত বছর এক ভিডিও টেপে দেখা গেছে, অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালানোর জন্য দিয়াজ কানেল বিদেশি দূতাবাস ও মানবাধিকারকর্মীদের তীব্র ভাষায় তিরস্কার করছেন; কাস্ত্রো ভ্রাতৃদ্বয় যে ভাষায় কথা বলেন, ঠিক সেই ভাষাই তিনি ব্যবহার করেন।
এমনকি তিনি সংস্কারের কোনো গোপন ইচ্ছা যদি মনে মনে পোষণ করেও থাকেন, তারপরও তিনি এ ব্যাপারে নিজের মতামত খুব কমই প্রকাশ করেছেন। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ছয় শতাধিক সদস্য কিউবার প্রেসিডেন্ট ও কাউন্সিল অব স্টেট (সর্বোচ্চ পরিচালনা পরিষদ) নির্বাচিত করেছেন। আগে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত একটি তালিকা থেকে দিয়াজকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয়েছে।
আশা করা ঠিক হবে না যে কিউবা এবার অতীতের থেকে একেবারেই অন্য রকম হবে। কারণ, নতুন সরকারের বয়স্ক লোকজন কাস্ত্রোর সেই আদি সঙ্গীরাই। কাস্ত্রো পরিবার ক্ষমতায় না থাকলেও কিউবার যেকোনো ভবিষ্যৎ সরকারের পাশে থাকবে। রাউল কাস্ত্রো কিউবান কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে থেকে যাবেন, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানের পদেও বহাল থাকবেন, যা কিনা কিউবার অর্থনীতির একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।
রাউল কাস্ত্রোর ছেলে আলেহান্দ্রো কিউবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। রাউলের সাবেক জামাতা জেনারেল লুইস আলবের্তো রদ্রিগেজ পরিচালিত প্রতিষ্ঠান গায়েসা কিউবার বৃহত্তম মিলিটারি হোল্ডিং কোম্পানিগুলোর একটি।
অর্থনৈতিক নীতি হচ্ছে একটি ক্ষেত্র, যেখানে নতুন প্রেসিডেন্টের পরিবর্তন আনার সুযোগ থাকবে। এই পরিবর্তন খুব জরুরি। ২০১০ সালে খোদ রাউল কাস্ত্রো স্বীকার করেছিলেন যে কিউবার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ব্যর্থ হচ্ছে। এই পরিবর্তনটা তাদের জন্য প্রয়োজন, যারা প্রতিবছর বিদেশ থেকে আসা ৩৩০ কোটি ডলারের কোনো ভাগ পায় না এবং যাদের শুধু রেশন কার্ড সিস্টেমে প্রবেশাধিকার আছে।
নতুন সরকারে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হবে কিউবার দুটি মুদ্রাপদ্ধতিকে এক করা। কিউবার জনগণ তাদের লেনদেনে দুই ধরনের মুদ্রা ব্যবহার করে। দেশের অভ্যন্তরে লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা হয় পেসো এবং অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা হয় আন্তর্জাতিক পেসো। তবে মুদ্রা এক হয়ে গেলে তা কিউবার অর্থনীতিতে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়ে যাবে এবং ডাবল বুকিং পদ্ধতি বন্ধ হবে। এ ছাড়া মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেবে এবং বেকারত্ব বাড়বে।
এখন যুক্তরাষ্ট্র কিউবায় বিনিয়োগ করতে পারে। ভঙ্গুর অর্থনীতির একটি দেশকে উঠে দাঁড়াতে যুক্তরাষ্ট্র যদি বিনিয়োগ করতে আগ্রহী না হয়, তাহলে যখন তার প্রতিবেশী দেশগুলোতে একই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তখন তাদের পাশে দাঁড়াতেও আগ্রহ বোধ করবে না। ফলে এসব দেশে অর্থনৈতিক সমস্যা সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করবে এবং মার্কিন উপকূলে শরণার্থীদের ঢেউ দেখা যাবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংকের মতো বহুজাতিক ব্যাংকগুলো কিউবার পরবর্তী সরকারকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য বিশেষ প্রণোদনা দিতে পারে। সেই সঙ্গে এই বার্তাও দিতে হবে যে যেকোনো প্রতিবাদ-বিক্ষোভের জবাবে দমনমূলক আচরণ করা থেকে কিউবার সরকারকে নিবৃত্ত থাকতে হবে।
কিউবাকে সাহায্য করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত সতর্ক ও নীতিগত ভূমিকা পালন করা। দেশটির ভবিষ্যৎকে এমন একটি আকার দিতে হবে, যাতে সেখানে টেকসই অর্থনীতি ও উদার রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
ক্রিস্টোফার সাবাটিনি যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক