মহেশখালীর বন বাঁচাও

চিরসবুজ মহেশখালীর সংরক্ষিত বন উজাড় করে তেলের ডিপো ও পাইপলাইন স্থাপনে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারির উদ্যোগটি যথেষ্ট প্রশ্নসাপেক্ষ। ১৯ এপ্রিল প্রথম আলোয় এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি কারিগরি কমিটি বনজ সম্পদের ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিপূরণ বাবদ যথাক্রমে প্রায় দেড় কোটি এবং প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ধার্য করেছিল। কিন্তু জ্বালানি মন্ত্রণালয় জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি না হওয়ায় সরকারের গঠিত আরেকটি কমিটি নতুন করে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি ২৭৭ কোটি টাকা পুনর্মূল্যায়ন করে। এই প্রেক্ষাপটে তথাকথিত ইজারা বাবদ নামমাত্র মূল্যে বনটি হস্তান্তর করে প্রকৃতপক্ষে বনটি নিশ্চিহ্ন করার ষোলোকলা পূর্ণ করা হলো। আমরা সরকারের এই ভুল ও পরিবেশবিনাশী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও তা বাতিলের আবেদন জানাই।

আমরা জানতে পেরেছি, ওই দুটি কমিটির কারও কার্যপরিধিতে স্থান নির্বাচনে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার ছিল না। বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য অধ্যাপক মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেন যে বন বাদ দিয়ে অন্যত্র তেলের ডিপো করা সম্ভব, আর অবশ্যই সেটা করা উচিত। কিন্তু কার্যপরিধিতে সুযোগ না থাকায় তাঁরা তাঁদের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে নীরব থাকেন। বনবিদ্যায় ইংল্যান্ডের অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী এই পরিবেশবিদ আরও উল্লেখ করেন, প্রতিবেশের ক্ষতি টাকার অঙ্কে নিরূপণেরও সীমাবদ্ধতা আছে।

৩৮৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মহেশখালী দ্বীপে ১ হাজার ৩০২ একর কৃষি খাসজমি এবং ৩ হাজার ৩০৫ একর অকৃষি খাসজমি আছে। বন্দোবস্তের উপযোগী অকৃষি খাসজমি রয়েছে ১ হাজার ৩৮২ একর। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রকল্প বাস্তবায়নে মাত্র ১৯১ একর জমির সংস্থান কেন সংরক্ষিত বন উজাড় করেই করতে হবে, তা বোধগম্য নয়। বন বাঁচিয়ে বিকল্প স্থানে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব কি অসম্ভব, সে বিষয়ে আমরা একটি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষীয় ভাষ্য আশা করি।

সুন্দরবন বিপন্নকারী বিতর্কিত রামপাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদ ও ক্ষোভ বিরাজমান থাকতেই জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ চিরসবুজ মহেশখালীর সংরক্ষিত বনাঞ্চল কেটে তেলের ডিপো করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এর বিরুদ্ধে দেশের খোদ প্রধান বন সংরক্ষকের নেতৃত্বাধীন বন বিভাগ দৃঢ় ভিন্নমত দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু বন্য প্রাণী অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী অধ্যাপক রেজা খান বলেন, ‘তেল ও বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো বেছে বেছে আমাদের সবচেয়ে সমৃদ্ধ বনভূমিগুলোর মধ্যে এবং আশপাশে স্থাপনা তৈরি করছে। আমাদের বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হতে হতে হাতে গোনা কিছু এলাকায় তা টিকে আছে। একমাত্র চিরসবুজ পাহাড়ি দ্বীপ বন মহেশখালী তাদের মধ্যে একটি।’
আমরা অবিলম্বে বিকল্প স্থানে এই জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ আশা করি।