চাঁদাবাজ নেতার চড়-থাপ্পড়

কোনো কোনো অপকর্ম থাকে, যা কখনো পুরোনো হয় না। এক ব্যবসায়ীকে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিমের চড়-থাপ্পড় মারার ঘটনাটিও তেমন একটি অপকর্ম। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি চট্টগ্রামে জিইসি এলাকায় অবস্থিত ইউনাইটেড কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদ মিয়ার ওপর চড়াও হলেও বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দেশবাসী জানতে পারেন অতি সম্প্রতি। কোচিং সেন্টারে স্থাপিত সিসিটিভিতে দেখা যায়, নুরুল আজিম রাশেদকে ১৩টি চড় মেরেছেন। আর রাশেদ তাঁর কাছে হাতজোড় করে আর না মারার জন্য কাকুতি–মিনতি করছেন।

নুরুল আজিমের এই অপকর্ম যদি সিসিটিভিতে ধারণ করা না হতো কিংবা ধারণ করা হলেও আক্রান্ত রাশেদ সাহস করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে না দিতেন, তাহলে ছাত্রলীগের নেতার অপকর্ম চিরতরে ঢাকা পড়ে যেত এবং আরও অনেকের মতো তিনিও ‘ফুলের মতো পবিত্র চরিত্র’ নিয়ে বন্দরনগরীর ছাত্রলীগ পরিচালনা করতেন। কিন্তু ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সংগঠন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তবে নুরুল আজিমের এটাই প্রথম অপকর্ম, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও আইন নিজের হাতে নেওয়ার অনেক নজির স্থাপন করেছেন ছাত্রলীগের এই নেতা।

কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদ মিয়ার থানায় দায়ের করা এজাহার অনুযায়ী, নুরুল আজিম তাঁর কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন এবং চাঁদা দিতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করলে তাঁর ওপর একাধিকবার চড়াও হয়েছেন। এর আগেও একবার নুরুল আজিম ও তাঁর সহযোগীরা রাশেদকে চাঁদার জন্য গাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারধর করেন। সে যাত্রায় তিনি ৩৫ হাজার টাকা নগদ ও পাসপোর্ট জমা দিয়ে রেহাই পান। নুরুল আজিমের দাবি, তিনি রাশেদের ব্যবসার অংশীদার ছিলেন। ব্যবসার অংশীদার হলেই কি কাউকে গুনে গুনে ১৩টি চড়-থাপ্পড় দিতে হবে? কোচিং সেন্টারের ঘটনার কয়েক দিন আগে তিনি চকবাজারে বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষকে মারধর করেছেন এইচএসসি পরীক্ষায় বেশি ফি নেওয়ার কথিত অজুহাতে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেশি ফি নিলে সেটি দেখার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় আছে, শিক্ষা অধিদপ্তর আছে। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতা কেন অধ্যক্ষের ওপর চড়াও হবেন? আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার তাঁকে কে দিয়েছে?

আরও উদ্বেগের বিষয় হলো চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের এই নেতা অবাধে চাঁদাবাজি, দখলবাজি চালালেও পুলিশ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি কোচিং সেন্টারের ভিডিও ফুটেজ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার পর সংশ্লিষ্ট থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, তাঁরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেবেন। অপরাধীকে শনাক্ত করতে তদন্ত তো করতেই হবে। কিন্তু সেই তদন্ত সঠিক খাতে চলবে, এই নিশ্চয়তা কি তাঁরা দিতে পারবেন? এর আগেও দেখেছি যখন ক্ষমতাসীন দলের কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়, তখনই প্রশাসন প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে নানা অজুহাত খাড়া করে। পুলিশ কর্মকর্তা যখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কসরত করছেন, তখনই ছাত্রলীগের ওই নেতা সদলবলে গিয়ে কোচিং সেন্টারের মালিককে হুমকি দিয়ে আসছেন। এত বড় দুষ্কর্মের পরও তাঁরা এই সাহস কোত্থেকে পান? অবিলম্বে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হোক।

প্রতিবার ছাত্রলীগের কোনো নেতার অপকর্ম ধরা পড়ার পর যেমনটি হয়ে থাকে, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি বলেছেন, ‘নুরুল আজিমকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ ছাত্রলীগের নেতা পরিচয়ে কীভাবে তিনি চাঁদাবাজি, দখলবাজি করে আসছেন, সেই কৈফিয়তও তাঁদের দিতে হবে। আমরা জানতে চাই ছাত্রলীগে এ রকম নুরুল আজিমদের সংখ্যা কত?