শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি

অ্যাকশনএইড পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, জীবনধারণের উপযোগী মজুরির মাত্র ১৪ শতাংশ পান বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা, যা প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সবচেয়ে কম। চীনের শ্রমিকেরা জীবনধারণের উপযোগী মজুরির ৩৪ শতাংশ পান। ভারত, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনে এই হার যথাক্রমে ২৭, ৩৯ ও ৩২ শতাংশ। যখন এই জরিপ করা হয় তখন বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশ্রমিকের নিম্নতম মজুরি ছিল ৩ হাজার টাকা। ২০১৩ সালে গঠিত মজুরি বোর্ড  শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়ে করে ৫ হাজার ৩০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে বর্তমান বাজারে কোনো শ্রমিকের পক্ষে জীবনধারণ করা সম্ভব নয়।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ১ লাখ ২৩ হাজার ৪০ টাকা। সেটিই ন্যূনতম মজুরি ধরলে শ্রমিকদের মাসিক আয় হওয়া উচিত ১০ হাজার ২৫৩ টাকা। নতুন মজুরি বোর্ড ইতিমধ্যে মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার দাবি করা হয়েছে। অন্যদিকে মজুরি বোর্ড গঠনের পর থেকেই মালিকপক্ষ শিল্পের নানা সমস্যা সামনে নিয়ে আসছে। বিজিএমইএর কোনো কোনো নেতা শ্রমিকদের মজুরির বিষয়ে বুদ্ধিজীবীদের নাক না গলানোর উপদেশ দিয়েছেন।

নতুন মজুরি বোর্ড হলেই মালিকপক্ষ নানা রকম অজুহাত খাড়া করে, যা শ্রমিক তো বটেই, শিল্পের স্বার্থের পরিপন্থী। মালিকপক্ষকে বুঝতে হবে যে শিল্পের উন্নয়ন চাইলে শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নয়ন করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তাঁরা কম শ্রমিক দিয়ে বেশি উৎপাদন করাতে পারেন। কিন্তু শ্রমিকদের ভালোভাবে বেঁচে থাকার মতো মজুরি দিতে হবে।

বিগত বেতন বোর্ড সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ করেছে। গত পাঁচ বছরে শ্রমিকদের বেতন এক পয়সা না বাড়লেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনেক বেড়েছে। এর অর্থ  শ্রমিকদের প্রকৃত বেতন আরও কমে গেছে। নতুন মজুরি বোর্ড মজুরি নির্ধারণকালে এসব বিষয় বিবেচনায় নেবে আশা করা যায়।

জীবনযাত্রার ব্যয়ের কথা চিন্তা করলে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে মাসিক বেতন ১৬ হাজার টাকা করার যে দাবি তোলা হয়েছে, তা যৌক্তিক বলেই আমরা মনে করি। শ্রমিকদের পেছনে মালিকপক্ষ যে বিনিয়োগ করবে, অনেক বেশি তা তুলে নিতে পারবে।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তাতে মালিকদের পাশাপাশি শ্রমিকদেরও বিরাট অবদান আছে। গত পাঁচ বছরে পোশাক কারখানার অগ্নি, ভবন ও কাঠামোগত ত্রুটির সংস্কারকাজে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তারপরও শ্রমিকের মজুরিকাঠামো, পেশাগত স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে তেমন উন্নতি হয়নি বলে অ্যাকশনএইডের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

 ন্যায্য মজুরির পাশাপাশি শ্রমিকদের কর্মপরিবেশের উন্নয়নও জরুরি।