বিদ্যালয়ের জমিতে দোকানপাট

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর পরিচালনা কমিটির জন্য কয়েকটি কাজ নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে অনুযায়ী পরিচালনা কমিটির মূল কাজ হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষাদান-সংক্রান্ত কার্যাবলি পরিবীক্ষণ করা। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা, উন্নয়নসহ বেশ কয়েকটি কাজ কমিটিকে করতে হয়। কিন্তু মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরের দক্ষিণ বাজার এলাকায় বশিরুল হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি যা করছে, তা কোনোভাবেই তাদের কাজের আওতার মধ্যে পড়ে না। সবচেয়ে বড় কথা তারা যা করছে তা অগ্রহণযোগ্য।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি বিদ্যালয়ের সামনের অংশের দেয়াল ঘেঁষে তিনটি দোকান নির্মাণ করছে। ইতিমধ্যে দোকানগুলোর ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, এভাবে দোকানপাট নির্মাণের জন্য উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি এবং কমিটির সভাপতি কুলাউড়া পৌর মেয়র এসব দোকানপাটের নির্মাণ খরচ দিচ্ছেন। বিদ্যালয়ের সামনের সড়কটি খুবই সরু। এর কারণে এমনিতেই প্রায় প্রতিদিন যানজট লেগে থাকে। এতে পথচারীদের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা দুর্ভোগে পড়েন। এখন যদি বিদ্যালয়ের সামনে দোকানপাট নির্মাণ করা হয়, তাহলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়। কারণ, দোকানপাট মানেই হচ্ছে সেখানে লোকজনের আনাগোনা বেড়ে যাওয়া। এতে করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি এভাবে বিদ্যালয়ের জমিতে দোকানপাট নির্মাণ করার পেছনে যে কারণ উল্লেখ করেছে, তা কুযুক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের ভাষ্য হচ্ছে স্কুলের দেয়াল ঘেঁষে আশপাশের ব্যবসায়ীরা বর্জ্য ফেলেন। তাতে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এ ছাড়া স্কুলের সামনে ট্রাক রেখে মালামাল ওঠানো-নামানো হয়। এ অবস্থার নিরসন এবং বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নকাজের জন্য আয়ের ব্যবস্থা করতে তারা দোকান নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি স্কুলের জমিতে দোকান বানানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অবৈধ। নিজেদের খেয়ালখুশিমতো এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের দোকানপাট নির্মাণের পেছনে কারও বিশেষ কোনো স্বার্থ বা ভাগ-বাঁটোয়ারার ব্যাপার থাকা অস্বাভাবিক নয়। ঘটনাটি তাই খতিয়ে দেখা জরুরি।

আমরা এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। অবিলম্বে বিদ্যালয়ের দেয়ালের পাশ ঘেঁষে দোকান নির্মাণের কাজ বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। দোকান নির্মাণের সিদ্ধান্তের পেছনে কারও কোনো আর্থিক স্বার্থসিদ্ধির প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন পরিচালনা কমিটি বাতিল করে নতুন করে কমিটি গঠন করতে হবে।