ইন্টারনেটের শ্লথগতি

বাংলাদেশ শুধু যে মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে পিছিয়ে আছে তা নয়, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিতেও পিছিয়ে আছে। গত মার্চ মাসে ইন্টারনেট গতির পরীক্ষাকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘ওকলা’ জানিয়েছে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতির দিক দিয়ে ১২৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৬তম এবং গড় গতি ১৬ দশমিক ৩১ এমবিপিএস। ওকলার প্রতিবেদনে দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গড় গতি অবশ্য ৯ দশমিক ৯১ এমবিপিএস উল্লেখ করা হয়েছে।

মোবাইল ইন্টারনেটের গতির বৈশ্বিক মান হচ্ছে ডাউনলোডে ২২ দশমিক ১৬ এমবিপিএস এবং আপলোডে ৯ দশমিক ০১ এমবিপিএস। আর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতির বৈশ্বিক মান হচ্ছে ডাউনলোডে ৪২ দশমিক ৭১ এমবিপিএস এবং আপলোডে ২০ দশমিক ৩৯ এমবিপিএস। অর্থাৎ বাংলাদেশে দুই ধরনের ইন্টারনেটের গতিই বৈশ্বিক মানের তুলনায় অনেক কম।

মনে রাখতে হবে, ইন্টারনেট এখন কোনো বিলাসিতা নয়, বিশ্বের উন্মুক্ত জ্ঞানভান্ডারে প্রবেশপথের চাবিকাঠি। এর গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী ও অপরিসীম। আর ইন্টারনেটের গতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর সব কর্মকাণ্ড। বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, কৃষি, ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনেক বেশি ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর। কিন্তু এত কম গতির ইন্টারনেট নিয়ে আমরা এগোব কীভাবে! ফলে দ্রুতগতির ইন্টারনেটের কোনো বিকল্প নেই। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রকৃত মানবসম্পদ তৈরিতে উচ্চগতির ইন্টারনেট এখন একটি মৌলিক অনুষঙ্গ।

সম্প্রতি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঢাকায় ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ। অন্যদিকে ঢাকা ছাড়া পুরো দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা মাত্র ১৩ লাখ। এই বৈষম্য সৃষ্টির পেছনে নিঃসন্দেহে বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে কম গতির ইন্টারনেট। এই বৈষম্য বহাল রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে বাংলাদেশকে মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড—দুই ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।

জিএসএম অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি কম হওয়ার কারণ হিসেবে তরঙ্গের স্বল্পতা ও দুর্বল অবকাঠামোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে থ্রি-জি ইন্টারনেট সেবা চালুর সময়ও মোবাইল ফোন অপারেটরদের হাতে যথেষ্ট তরঙ্গ ছিল না। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ফোর-জি সেবা চালু হয়েছে। তারপরও এই অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ ছাড়া দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও কম। মাত্র সাড়ে ৩ কোটি। এগুলো কোনোভাবেই আশাব্যঞ্জক তথ্য নয়। সরকারকে এখন এসব দিকে নজর দিতে হবে।

ইন্টারনেটের গতি দ্রুত করার পাশাপাশি দেশের সব মানুষের কাছে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে হবে। সরকারকে ইন্টারনেটের দাম কমানোরও উদ্যোগ নিতে হবে। এখনো ডেটাভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার দাম সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ জন্য মোবাইল অপারেটরদের পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনেরও (বিটিআরসি) দায়িত্ব রয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে বলা হলেও এখনো ইন্টারনেটের দাম বেঁধে দিতে পারেনি সংস্থাটি। সবার জন্য ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে হলে এর খরচ কমানোর কোনো বিকল্প নেই।