কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়

আশা করা গিয়েছিল, এরপর বাদী ক্ষতিপূরণের অর্থ পাবেন। কিন্তু এরপরও দুই বছর চলে গেছে। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য রওশন আখতারকে আবারও আদালতের শরণাপন্ন হতে হলো। আদালতের রায় বাস্তবায়নের মামলা। তাঁর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বাংলাদেশ বেভারেজ কোম্পানির পাঁচ বিঘা জমি বিক্রি করে ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দেন। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, দুই দফা নিলাম ডাকা হলেও নাকি কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি রহস্যজনক। যেখানকার জমি ‘সোনার হরিণ’ হিসেবে পরিচিত, সেখানকার পাঁচ বিঘা জমি বিক্রির জন্য নিলামে ক্রেতা পাওয়া যাবে না কেন? এর পেছনে অন্য কোনো কারসাজি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বাদী নিরুপায় হয়ে ক্ষতিপূরণের অর্থের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট বা কোনো সংস্থাই আদালতের রায় অগ্রাহ্য করতে পারে না। ব্যক্তি খাতের কোনো প্রতিষ্ঠানের হলেও সরকার দায় এড়াতে পারত। বাংলাদেশ বেভারেজ কোম্পানিটি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অর্থাৎ সেটি সরকারি সম্পত্তি। অতএব, এখানে সরকারেরও দায়িত্ব আছে।

একজন মানুষ ২৮ বছর ধরে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করে আসছেন। আর আমাদের রাষ্ট্র, সরকার ও মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে আসছে, এটি হতে পারে না। মোজাম্মেল একজন খ্যাতনামা সাংবাদিক, লেখক ও সংস্কৃতিসেবী ছিলেন। তাঁর স্ত্রীও একটি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। স্বামী হারানোর পর এই লড়াকু নারী প্রায় পুরো জীবনই ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং এখনো করছেন। এ রকম একজন মানুষের ক্ষেত্রে যদি ২৮ বছর অপেক্ষা করতে হয়, সাধারণ মানুষের বেলায় কী হতে পারে, তা সহজে অনুমান করা যায়। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য রওশন আখতারকে আর কত অপেক্ষা করতে হবে?

বেভারেজ কোম্পানি যত ক্ষমতাধরই হোক না কেন, আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আদালতের আদেশ তাকে পালন করতেই হবে। অবিলম্বে মোজাম্মেল হোসেন ‘হত্যার’ ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা হোক।