বুদ্ধিবিষয়ক কৌতুক

কৌতুকের অনলাইন সাইটে এই ঘটনাকে দাবি করা হয়েছে সত্যিকারের খবর বলে। এপি এই খবরটার নাকি শিরোনাম করেছিল, খুনের চেষ্টাকারীকে ধরিয়ে দিন। 

এক ভদ্রমহিলা দোকানে গেছেন। তাঁর নাম লিন্ডা। তিনি থাকেন স্যানডিয়াগোতে।
দোকানের সামনে তিনি গাড়ি পার্ক করেছেন।
একসময় দেখা গেল, তিনি গাড়ির সিটে বসে আছেন, দুই হাত তাঁর মাথার পেছনে রাখা। এভাবে তিনি এক ঘণ্টা ধরে বসে আছেন।
দু-একজন পাহারাদার ব্যাপারটা খেয়াল করল।
তাঁকে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে।
তিনি ঘোলা চোখ নিয়ে বললেন, তাঁর মাথার পেছনে গুলি লেগেছে। মগজ বেরিয়ে এসেছে। তিনি এক ঘণ্টা যাবৎ নিজের মগজ ধরে বসে আছেন।
তখন ডাক্তার ডেকে আনা হলো।
গাড়ির দরজা ভেঙে তাঁকে বের করা হলো।
দেখা গেল, তাঁর হাতের পেছনে ময়দার দলা।
ঘটনার ব্যাখ্যা এই যে তিনি একটা বিস্কুটের কৌটা কিনেছিলেন। তাতে ময়দার রোল ছিল। গাড়ির গরমে কৌটাটা ফেটে যায়, ভীষণ শব্দ হয়, আর ময়দার দলা এসে লাগে লিন্ডার মাথার পেছনে। লিন্ডা মাথায় হাত দিয়ে দেখেন, মাথার মগজ বেরিয়ে আসছে। তিনি চেপে ধরে থাকেন, এবং এক ঘণ্টা পেরিয়ে যায়।
আমাদের অবস্থা হয়েছে এই রকমই। আমাদের মাথার মগজ বেরিয়ে আসছে। এ জন্য আমরা দুহাত দিয়ে মাথার পেছনটা চেপে ধরে আছি, যাতে মগজ বেরোতে না পারে।
আসামি চুরি করেছে। একটা দোকানের ক্যাশবাক্স থেকে টাকা নিয়ে সে নিজের ব্যাগে ভরেছে। তাকে আদালতে তোলা হলো। তার উকিল বলল, ইয়োর অনার, আমার মক্কেল তো চুরি করেনি। তার হাতটাই কেবল এই অপকর্ম করেছে। তার হাতটা তার শরীরের কথা শোনেনি। সে নিজে নিজে ক্যাশবাক্সের দিকে গেছে, টাকা তুলে নিয়েছে। তারপর ব্যাগে ভরেছে। এই জন্য তার হাতটাই দায়ী। তাকে দায়ী করা চলে না।
বিচারক মুচকি হাসলেন। বললেন, আচ্ছা আমি এই হাতটাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিলাম। এখন তার শরীরটা তার সঙ্গে কারাগারে যাবে কি না, নাকি সে হাতটাকেই শুধু কারাগারে পাঠাবে, এটা তার সিদ্ধান্ত।
তখন উকিল আর আসামি মিলে তার নকল হাতটা বহু কষ্টে খুলে আদালতের কাছে জমা দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে গেল।
এই রকম অনেক সময় হতে পারে। আপনার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আপনার কথা শুনছে না। কথা শুনছে না যিনি মাথা তাঁর। সে ক্ষেত্রে মাথাওয়ালার কর্তব্য হবে, সেই অবাধ্য অঙ্গ (সংগঠন), যার কারণে মাথার দুর্নাম হচ্ছে, তাকে বাদ দিয়ে দেওয়া এবং তাকে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া। কাজেই এই কৌতুকটা কোনো হালকা রসিকতা নয়, এটা একটা গুরুতর ব্যাপার।
এরপরের কৌতুকটা আমি পেয়েছি ফেসবুকে। কৌতুকের বিষয়ও ফেসবুক। আমি কেবল নিজের ভাষায় পরিবেশন করছি। আচ্ছা আচ্ছা বলে রাখি, এই কলামে যে কৌতুকগুলো আমি পরিবেশন করে থাকি, এগুলো আমার নিজের সৃষ্টি নয়। আমি কারও না কারও কাছে শুনেছি, বা কোথাও পড়েছি, আমি সেসব নিজের ভাষায় আরেকবার পরিবেশন করি মাত্র। ফেসবুকের এই জমানায় এই অভিযোগ উঠতে দেখেছি যে, অমুক ভদ্রলোক প্রচলিত কৌতুক চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেন।
আমি ঠিক করেছি, আমি আর ভার্চ্যুয়াল জগতে সময় কাটাব না। যা করব তা করব বাস্তব জীবনে। আমি ফেসবুকের ব্যাপারগুলো ঘটাতে থাকব সত্যিকারভাবে, বাস্তবভাবে।
তাই আমি রাস্তার ধারে গিয়ে সময় কাটাতে লাগলাম। যাকে সামনে পাই, তাকেই অনুরোধ করি, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই, আপনি আমার বন্ধু হবেন। শুনুন, আজ সকালটা খুব সুন্দর। কাল রাতে আমি কাচ্চি বিরিয়ানি খেয়েছি। ছবি দেখুন। এই যে আমার দেয়ালে ছবি টাঙিয়ে দিয়েছি। এটা হলো, কাল রাতে কাচ্চি বিরিয়ানির দোকানে।
এই যে দেখুন, এ হলো আমার স্ত্রী। সন্তানসম্ভবা। এই যে তার উঁচু পেটের ছবি। আমাদের মেয়ে হবে।
আরে দেখুন দেখুন বৃষ্টি হবে। টিনের চালে বৃষ্টি আমার খুব ভালো লাগে।
আমার পরীক্ষা সফল হতে শুরু করেছে। পাঁচজন আমাকে ফলো করতে শুরু করেছে। দুজন ডিবি পুলিশ, একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, একজন মনোরোগী, আরেকজন অতি উৎসাহী ছাত্রসংগঠনের কর্মী।
আচ্ছা আচ্ছা আচ্ছা। আমার এই কৌতুকটাকে আপনারা কী দেবেন, লাইক, লাভ, হা হা, অ্যাংরি, স্যাড...
যাই করুন না কেন, মনে রাখবেন আপনাকে কিন্তু ফলো করা হচ্ছে। যারা ফলো করছে তাদের মধ্যে আছে...
প্রচণ্ড রোদ। একজন কর্তা গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছে। আর দুজন কর্মচারী রোদের মধ্যে একটা গর্ত খুঁড়ছে শাবল দিয়ে।
কর্মচারী দুজন গল্প করছে-আচ্ছা আমরা কত কষ্ট করে রোদের মধ্যে কাজ করছি, আর বস ওখানে ছায়ার মধ্যে দাঁড়িয়ে আরাম করছে। দাঁড়া, একজন বলল, আমি গিয়ে তাকে বলি তো ঘটনা কী।
একজন কর্মচারী গেল তার বসের কাছে। আমরা রোদে কষ্ট করছি, আপনি আরামে দাঁড়িয়ে আছেন, কেন কেন কেন?
কর্মকর্তা বললেন, বুদ্ধি। কারণ হলো আমার বুদ্ধি আছে, তোমাদের নাই।
কেমন?
আমি এই গাছের গায়ে হাত রাখলাম। তুমি আমার হাতে ঘুষি দিতে পারবে?
পারব।
দাও তো।
কর্মচারী ঘুষি দিল। তার আগেই হাত সরিয়ে নিল কর্মকর্তা। ব্যথা পেয়ে সে ফিরে গেল তার সহকর্মীর কাছে।
বস কী বলল?
ভাই রে, বলল, বুদ্ধি।
সেটা কেমন?
আচ্ছা, আমি আমার হাতটা রাখলাম আমার মুখের ওপরে। এবার তুই ঘুষি মার তো?
আসলেই জগৎ চলে বুদ্ধি দিয়ে। যারা চালান, তাঁদের ঘটে বুদ্ধি থাকে। থাকতে হয়। কিন্তু মাঝেমধ্যে মনে হয়, তাঁরা বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেন। রূপকথার গল্পের বাঁদরের কলিজার মতো তাঁরা গাছের ডগায় বুদ্ধি খুলে রেখে আসেন।
আর আমরা? আমরাও তো ঘটে বুদ্ধি রাখি না। বুদ্ধি থাকলে কি আর আমরা রোদের মধ্যে গর্ত খুঁড়ে চলি?

আনিসুল হক: প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক