পদদলনে আর কত মৃত্যু?

ইফতার সামগ্রী নিতে গিয়ে পিষ্ট হয়ে নিহত স্বজনের জন্য আহাজারি। প্রথম আলো ফাইল ছবি
ইফতার সামগ্রী নিতে গিয়ে পিষ্ট হয়ে নিহত স্বজনের জন্য আহাজারি। প্রথম আলো ফাইল ছবি

রোজা শুরুর আগেই ইফতারসামগ্রী নিতে গিয়ে ৯ জন নারী-শিশুকে মর্মান্তিকভাবে জীবন দিতে হলো সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব গাটিয়াডাঙ্গায়। দেশের একটি নামকরা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক স্থানীয় মাদ্রাসার মাঠে ইফতারসামগ্রী—চাল, চিড়া ও চিনি ছাড়াও শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণের ব্যবস্থা করেছিলেন। বিপুলসংখ্যক দরিদ্র, দুস্থ নারী-পুরুষ ও শিশু ইফতারসামগ্রী নিতে এলে হুড়োহুড়ির মধ্যে ৯ জন পদদলিত হয়ে মারা যায়। অনেকে আহত হন। দান সব সময়ই গৌরবের। কিন্তু সেই দানকে কেন্দ্র করে যদি এভাবে মানুষের মৃত্যু ঘটে, সেটি কেবল দানের অগৌরব নয়, মানবতার প্রতি চরম অবমাননাও।

উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ওই প্রতিষ্ঠানের ইফতারসামগ্রী বিতরণ নিয়ে ২০০৬ সালেও পদদলনের ঘটনায় পাঁচজন মারা যায়। গত বছরের ডিসেম্বরে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানিতে পদদলিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু ঘটে। এভাবে পদদলনে আর কত মানুষকে জীবন দিতে হবে? প্রতিষ্ঠানটি সোমবারের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ৩ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু কোনো জীবনকেই টাকার অঙ্কে মাপা যায় না।
বলা হয়ে থাকে, দান এমনভাবে করা উচিত যাতে ডান হাত দিয়ে দান করলে বাঁ হাতও যেন টের না পায়। অথচ শত শত মানুষকে বাড়িতে ডেকে এনে দান, ইফতারসামগ্রী বা জাকাতের কাপড় বিতরণের আড়ম্বর আয়োজন করা আমাদের সামাজিক রীতিতে পরিণত হয়েছে। কেউ রোজাদারদের জন্য ইফতারসামগ্রী বিতরণ করতেই পারেন কিন্তু সেই ইফতারসামগ্রী বিতরণের নামে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার অধিকার কারও নেই। এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার আগে অতীতের অভিজ্ঞতা যেমন বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল, তেমনি দরকার ছিল দান আয়োজনের যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। তবে আমরা মনে করি, দানের নামে এ ধরনের আড়ম্বর আয়োজন বন্ধ হওয়া উচিত।

যে প্রতিষ্ঠানটি সাতকানিয়ায় এই ইফতারসামগ্রী বিতরণের আয়োজন করেছে, তারা এই মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না। তাদের ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতার কারণেই এতগুলো জীবন চলে গেল। আরও বেদনাদায়ক হলো, প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা প্রথমে পদদলনের কথা স্বীকারই করেননি। হিট স্ট্রোক ও শ্বাসকষ্টে ইফতারপ্রার্থীরা মারা গেছেন বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। এ ধরনের অবস্থান নিহত মানুষগুলোর প্রতি নিষ্ঠুরতা ছাড়া কিছু নয়।

সাতকানিয়ার ঘটনা যে নির্মম সত্যটি তুলে ধরে তা হলো, বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা করলেও এখনো গরিষ্ঠসংখ্যক মানুষ সেই সড়কের বাইরে আছে। জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের সামর্থ্য নেই বলেই দূরদূরান্ত থেকে গিয়ে মানুষ ইফতারসামগ্রী ও জাকাতের জন্য এই মাত্রায় মরিয়া হয়ে ওঠে। এভাবে এতগুলো মৃত্যুর ঘটনার যথাযথ তদন্ত এবং কোনো গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।