একচক্ষু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে কী ঘটেছিল, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। হল কর্তৃপক্ষ মধ্যরাতে তিন আবাসিক শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কার করার অভিনব নজির সৃষ্টি করেছিল। পরে অবশ্য সমালোচনার মুখে শিক্ষার্থীদের হলে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয় তারা। আমরা ভেবেছিলাম সেখানেই নাটকের যবনিকা ঘটবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নতুন করে হলের ২৫ শিক্ষার্থীর প্রতি কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে পুরোনো ঘা জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নোটিশে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহানকে ‘পরিকল্পিতভাবে লাঞ্ছিত ও মারধর করার অপরাধে’র কথা বলা হয়েছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ধরেই নেয় যে ২৫ ছাত্রী অপরাধ করেছেন, তাহলে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ কোথায়? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেই শিক্ষার্থীর লাঞ্ছনা ও মারধর করার কথা বলেছে, তাঁর হাতে কতজন নিগৃহীত হয়েছেন, সেটি কেন খতিয়ে দেখছে না। তাদের এই একচক্ষুনীতি অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নোটিশ জারির দুটি কারণ থাকতে পারে। এক. ‘পরিকল্পিত লাঞ্ছিত ও মারধর করার অপরাধে’ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। দুই. ২৫ শিক্ষার্থীর প্রতি নোটিশ জারি করে অন্যদের প্রতিবাদের ভাষাও বন্ধ করে দেওয়া। কোন পরিস্থিতিতে সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন, সেটি হল বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অন্যায়ের প্রতিবাদে সেদিন হলের প্রায় সব শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেছিলেন। সেই বিক্ষোভ থেকে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, তার দায়িত্বও হল কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। তারা কেন দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অন্যায়ের বিচার করেনি? উল্টো সাধারণ শিক্ষার্থীরা যখন সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন, তখন তাঁদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এটি অনৈতিক ও বেআইনি। প্রথমে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে চারজনকে আলাদা করে শাস্তি দেওয়া হলো। সর্বশেষ ২৫ জনের প্রতি কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হলো। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চরম স্বেচ্ছাচারিতারই প্রকাশ ঘটিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বা হল প্রশাসন কোনো শিক্ষার্থীর প্রতি রাগ বা অনুরাগ দেখাতে পারে না।

সুফিয়া কামাল হলে বর্তমানে স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই নোটিশ পরিস্থিতিকে অশান্ত ও অস্থিতিশীল করতে পারে। অতএব, অবিলম্বে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রত্যাহার করা হোক। বিশ্ববিদ্যালয় বা হল প্রশাসনের এমন কিছু করা সমীচীন হবে না, যাতে শিক্ষার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ব্যাহত হয়। তাদের অবশ্যই একচক্ষুনীতি পরিহার করতে হবে।

আমরা আশা করব, দেরিতে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের চৈতন্যোদয় হবে।