রমজানে গ্যাস-সংকট

রাজধানী ঢাকায় গ্যাস সরবরাহ যে রমজানে বিঘ্নিত হতে পারে, তা কোনো আকস্মিক দুর্বিপাকের বিষয় নয়। সংশ্লিষ্ট সব নীতিনির্ধারকেরই অনেক আগ থেকেই জানা ছিল যে রমজানে মানুষ বেশি কষ্ট পেতে পারে। এটাও সত্য যে, গত ২৩ এপ্রিল কাতার থেকে আনা তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজিবাহী জাহাজ মহেশখালীতে নোঙর করেছে। ওই সময় ঘটা করে জানান দেওয়া হয়েছিল, কাতারের এলএনজির সরবরাহ মে মাসের গোড়া থেকেই জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, অদক্ষতা এবং সমন্বয়হীনতা এতটাই প্রকট যে এই মুহূর্তে কারও জানা নেই ঠিক কবে নাগাদ ওই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।

আমরা এটা অনুমান করে শঙ্কিত যে চলতি মাসে এটা আর সম্ভবই হবে না। উপরন্তু গ্যাসের উৎপাদন আরও বাড়ানোর যেসব উপায় রয়েছে,
 সেসব সূত্র থেকে চটজলদি অতিরিক্ত গ্যাস পাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। সব থেকে অস্বস্তিকর হলো এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো নির্দিষ্ট ঘোষণা পর্যন্ত নেই। নির্বাচনী বছর বলে যখন এর আগে সরকারি তরফে রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, তখন
অনেকেই ভেবেছিলেন, এবার অন্তত আর বায়বীয় হবে না। কিন্তু বাস্তবে সেসব প্রতিশ্রুতি হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। রমজানে মানুষের কষ্ট সীমাহীন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।

রাজধানীতে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। সেখানে শনিবার তিতাস ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসও পায়নি। অথচ এক–দেড় মাস আগেও তারা গড়ে প্রতিদিন ১৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেয়ে আসছিল। এখন রমজানে বাড়তি গ্যাস সরবরাহ দূরে থাক, আগে যে অবস্থা ছিল, সেই পরিমাণ গ্যাস সরবরাহও ধরে রাখা সম্ভব তো হচ্ছেই না, বরং আরও হ্রাস পাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে রাজধানীবাসীকে তুলনামূলকভাবে স্বস্তিতে রাখার একটি উপায় ছিল, গ্যাস স্টেশনগুলো সাময়িক বন্ধ রেখে সাশ্রয়ী গ্যাস পিক আওয়ারে সরবরাহ করা। কিন্তু আমরা বিস্ময়ে স্তম্ভিত যে পেট্রোবাংলা এবং তিতাসের প্রধান কার্যালয় কারওয়ান বাজারে হাঁটা পথের দূরত্বে হলেও এই বিতরণ ব্যবস্থাপনাটিও আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতার কবল থেকে রেহাই পায়নি।

সময়মতো চুলা জ্বালাতে না পেরে, বিশেষ করে হাজার গৃহিণীর যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত, তখন রমজানকে ঘিরে গ্যাস স্টেশন বন্ধ রাখার নিয়ম চালু করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাতে প্রত্যাশিত ফল আসছে না। তিতাস গ্যাস কোম্পানি রোববার নিজেরাই পেট্রোবাংলাকে বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টার পরিবর্তে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত গ্যাস স্টেশন বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে। তারা বলেছে, সাধারণভাবে পিক আওয়ার হলো সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা। কিন্তু রমজানে সেটা পাল্টে বেলা দুইটা থেকে বিকেল ৫টা, মানে ইফতারের আগে শেষ হয়। এখন বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাস স্টেশন বন্ধ রেখে যে গ্যাস সাশ্রয় করা হয়, সেটা আর দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ব্যবহারে সেভাবে কাজে লাগে না। প্রশ্ন হলো, এটা একটা সাধারণ যুক্তি ও কাণ্ডজ্ঞানের বিষয় হলে পেট্রোবাংলা কেন তিতাসের সঙ্গে আগাম পরামর্শ ছাড়াই গ্যাস স্টেশন বন্ধের সময়সূচি নির্ধারণ করল? এটা সমন্বয়হীনতার একটা দুর্ভাগ্যজনক দৃষ্টান্ত নয় কি?

কাতার থেকে আনা গ্যাস প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই শ মিলিয়ন ঘনফুট জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করলে মানুষের গ্যাসের কষ্ট সহনীয় মাত্রায় আনা সম্ভব। অথচ সেখানে কেবল দৃশ্যত ব্যবস্থাপনাগত অসামর্থ্যের কারণে রাজধানীবাসী তার সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমরা মহেশখালীতে থাকা অ্যাক্সিলারেট এনার্জির গ্যাস বিতরণে বিলম্বের বিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করি। আর নাগরিককে তার দায়িত্বটুকুও পালন করতে হবে। তাকে অবশ্যই জ্বালানিসাশ্রয়ী হতে হবে। ।