এফবিসিসিআইয়ের পরামর্শ

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) ব্যাংকিং খাতে নজরদারি বাড়ানোর যে তাগিদ দিয়েছে, তার সঙ্গে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। কেননা, দেশের শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের জন্য টেকসই ব্যাংকিং খাত অপরিহার্য। ব্যাংকিং খাত সুস্থ না হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে না। আবার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার না ঘটলে ব্যাংকিং খাতও শক্ত ভিত পাবে না।

সব দেশেই ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন অবস্থান থাকে। সরকারের শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব নীতিকে যেমন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সমর্থন করে, তেমনি অর্থনীতির বিষয়ে সরকার কোনো ভুল নীতি নিলে তারা এর প্রতিবাদও জানায়। সাম্প্রতিক কালে এফবিসিসিআইকে আমরা সেই ভূমিকায় দেখতে পাই না বললেই চলে। বাজেটের আগে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দেনদরবার ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের বিদেশ সফরের মধ্যেই যেন তাদের কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে পড়েছে। যদিও সরকারের আস্থাভাজন ব্যক্তিরাই এফবিসিসিআই কিংবা বিজিএমইএর মতো প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে আসীন রয়েছেন।

এফবিসিসিআইয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান-বিষয়ক কমিটির বৈঠকে দেশের ব্যাংক খাতের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে আমানত সংগ্রহে ও ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারির সামগ্রিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার ভিত্তি আরও মজবুত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে কমিটি ব্যাংকঋণের সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে বলেছে। এসব তাগিদ ও আহ্বান যৌক্তিক বলেই আমরা মনে করি। কিন্তু কাজটি করবেন কে? এর আগে সরকারের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকেও সুদের হার এক অঙ্কে নিয়ে আসা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। ব্যাংক মালিক সমিতির নেতারাও সুদের হার এক অঙ্কে নামানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করেননি। এফবিসিসিআইয়ের অনেক নেতা ব্যাংকেরও মালিক। সে ক্ষেত্রে এফবিসিসিআইও ব্যাংক সুদের হার কমানোর ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে পারে।

অন্যদিকে ব্যবসায়ী নেতারা যে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া রুগ্‌ণ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছেন, সেটি কতটা বাস্তবসম্মত, তা–ও নিরীক্ষা করে দেখা উচিত। ঢালাওভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া রুগ্‌ণ শিল্পকারখানাকে নতুন করে ঋণ দিলে ব্যাংকিং খাত আরও ঝুঁকিতে পড়তে পারে, যা কারোরই কাম্য নয়। বন্ধ হয়ে যাওয়া শিল্পকারখানার মালিকদের মধ্যে যে হল-মার্কের তানভীর মাহমুদের মতো লোক থাকা অস্বাভাবিক নয়। তাই এ ব্যাপারে সাবধানে পা ফেলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। রুগ্‌ণ শিল্প বাঁচানোর নামে নড়বড়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও রুগ্‌ণ করা যাবে না।