নারায়ণগঞ্জে হঠাৎ বাস বন্ধ

নারায়ণগঞ্জে পরিবহনব্যবস্থায় নৈরাজ্যের কফিনে আরেকটি পেরেক ঠুকেছে বিআরটিসি। বিতর্কিত সাংসদ শামীম ওসমানের মালিকানাধীন ২৬টি এসি বাস সড়কে চলাচল শুরুর কয়েক সপ্তাহ না ঘুরতেই নিয়মিত চলে আসা বিআরটিসির ৪৫টি এসি বাস সড়ক থেকে উধাও হয়ে গেছে। বিআরটিসির সাফাই হচ্ছে, ওগুলোর যন্ত্রাংশ অজ্ঞাত ইঙ্গিতে গণহারে বিকল হয়ে পড়েছে। ওই সাংসদের বাস নামানোর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। ‘যন্ত্রাংশগুলো’ যে কীভাবে সবকিছু টের পেয়ে যায় কে জানে!

নতুন বাস নামল, বিআরটিসির বাসের যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে সবগুলো বাস বসে গেল আর যাত্রীরা হঠাৎ দেখলেন নতুন বাসের দৈনন্দিন ভাড়াও এক লাফে বেড়ে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা হয়ে গেছে। এ ঘটনার পেছনে সত্যিই ভয়াবহ রকমের দুর্নীতি রয়েছে কি না, সেটা তদন্ত ছাড়া বলা ঠিক হবে না। কিন্তু খালি চোখে এই দুটি ঘটনা যে কাকতালীয় হওয়ার নয়, তা বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। সুতরাং এই এসি বাস কেলেঙ্কারি এবং নারায়ণগঞ্জে বিআরটিসির এতগুলো বাস একসঙ্গে নষ্ট হওয়ার ঘটনাটির একটি সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার।

বিআরটিসির বাস মানুষ আবার কবে রাস্তায় দেখবে, এই প্রশ্নের উত্তরে সব থেকে দুর্ভাগ্যজনক এবং সন্দেহজনক মন্তব্য করেছেন বিআরটিসির চেয়ারম্যান। তিনি বলেছেন, বিআরটিসির বাস পুনরায় রাস্তায় নামানোর বিষয়ে তিনি বর্তমানে ওমরাহ পালনরত স্থানীয় সাংসদ দেশে ফিরলে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। এই উক্তি নারায়ণগঞ্জবাসীকে নিশ্চয়ই পেছনের ক্লেদাক্ত স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেবে। ২০১০ সালে র‌্যাবকে দেওয়া বাস মালিক সমিতির চিঠিতেই জানা গিয়েছিল যে ওসমান পরিবারকে চাঁদা দিতে না হলে ওই জেলার রুটগুলোতে ভাড়া আরও কমানো সম্ভব।

এরপর ২০১১ সালে নন-এসি বাসের ভাড়া ২২ থেকে ৩১ টাকা করা নিয়ে নিহত ত্বকীর বাবার নেতৃত্বাধীন আন্দোলন, দমন-পীড়ন ও ডিসির দপ্তরে তৎকালীন সাংসদ সারাহ বেগম কবরীর লাঞ্ছিত হওয়ার সঙ্গে বিআরটিসির এসি বাস ভোজবাজির মতো উবে যাওয়ার একটা ধারাবাহিকতা খুঁজে পেতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের কাছে র‌্যাবের বিলি করা ত্বকী হত্যাকাণ্ডের (২০১৩) খসড়া অভিযোগপত্রটিও স্মরণ করা যেতে পারে। কারণ, ত্বকীকে খুনের অন্যতম কারণ হিসেবে তার বাবার ওসমান পরিবারের স্বার্থবিরোধী বাসভাড়া আন্দোলনে নেতৃত্বদানের বিষয়টি উল্লেখ ছিল।

নারায়ণগঞ্জ পরিবহন মালিক সমিতির দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা প্রধানত একটি বিশেষ প্রভাবশালী পরিবারের অঙ্গুলি হেলনে কার্যত ওঠবস করে থাকেন। বাস মালিক সমিতির এক নেতা প্রশ্নের উত্তরে আকাশ থেকে পড়ে বলেছেন, তাঁরা বিআরটিসিকে বাস তুলে দিতে বলেননি! কোনো সাংসদের সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করা নিষিদ্ধ। অথচ এখানে স্থানীয় সাংসদ শুধু ‘ব্যবসাই’ নয়, বরং সরকারের বৈধ ব্যবসায় লাল বাজি জ্বালিয়েছেন বলেই প্রতীয়মান হয়।