ক্রিকেটের প্রথম শিরোপা

এই দিনটি ক্রিকেটের বাইরেও বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দিন ও ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে। এর অসাধারণ ও অনন্য দিক হচ্ছে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা আমাদের গর্ব করার মতো এমন একটি উপলক্ষ তৈরি করে দিয়েছেন। সন্দেহ নেই, ক্রিকেটে বাংলাদেশের নারী দলের এই জয় সামগ্রিকভাবে খেলাধুলার প্রতি নারীদের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলবে এবং ভবিষ্যতে ক্ষেত্রটির জন্য খুলে দেবে সম্ভাবনার দ্বার। তুমুল আলোড়ন তোলা পুরুষ ক্রিকেট দল দুবার এ রকম স্বপ্নের কাছাকাছি হয়েছিল, কিন্তু দুবারই শেষ বলের আলোড়নে তীরে এনে ভেড়াতে পারেনি জয়ের জাহাজটিকে। তাই আক্ষেপ সঙ্গী ছিল আমাদের। আক্ষেপ কাটিয়ে দিলেন বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের যা কিছু উজ্জ্বল, তার মধ্যে ক্রিকেট শীর্ষস্থানীয়। সুদূর ১৯৯৭ সালে আকরাম-বুলবুলদের হাত ধরে আইসিসি ট্রফি জিতে যে স্বপ্নের সূচনা হয়েছিল, সে স্বপ্ন ক্রমে ক্রমে বাস্তবের পথে হেঁটেছে। একের পর এক টেস্ট খেলুড়ে দলকে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হারিয়ে বাংলাদেশের পুরুষ ক্রিকেট দল পেয়েছে মর্যাদার আসন। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতেও তাদের সাফল্য কম নয়। এ কথা মনে রেখেই বলতে হচ্ছে, নারীদের ক্রিকেট নিয়ে সেভাবে কেউ খুব একটা ভাবেনি। আমাদের মেয়েরা যে ন্যূনতম ম্যাচ ফি পান, সেদিকে চোখ রাখলেই বোঝা যাবে কতটা অবহেলিত ছিলেন তাঁরা। আমরা আশা করব, এই বিজয় তাঁদের প্রতি নীতিনির্ধারক ও ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেবে এবং ক্রিকেটের উন্নয়নে নারীদের অবদানের বিষয়টি সরকারও বিশেষ দৃষ্টিতে দেখবে।

শুধু ক্রিকেট নয়, অন্য অনেক কিছুর মতো সামগ্রিকভাবে খেলাধুলার উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষণা। মাঠপর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য চাই সুচারু পরিকল্পনা। ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ এএফসি কাপে বাংলাদেশ নারী দল ভারতকে ৪-০ গোলে হারিয়ে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। বাংলাদেশের মেয়েরা যে খেলাধুলায় পিছিয়ে নেই, এ ছিল তার এক বড় প্রমাণ।

এসব অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে বলা যায় যে, অনুপ্রেরণা আর ভালো কোচের অধীনে অনুশীলন চালিয়ে গেলে একটা পর্যায় পর্যন্ত নিজেদের তুলে ধরা যায়, কিন্তু এরপর এগিয়ে যেতে হলে দলকে কঠোর পরিশ্রম, অনুশীলন, নতুন নতুন টেকনিকের সঙ্গে পরিচিত করানোর পাশাপাশি খেলোয়াড়দের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং আর্থিক নিশ্চয়তা দেওয়া জরুরি। নইলে পরবর্তী ধাপে সেই সাফল্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রতিদিনের খেলাই নতুন যুদ্ধ, সে যুদ্ধে নতুন করেই জয়ী হতে হয়। জয়কে অভ্যাসে পরিণত করতে হলে আত্মবিশ্বাস–জাগানিয়া ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়ার বিকল্প নেই। আমরা আশা করব, সেদিকে দৃষ্টি দেবে ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট সবাই। আমাদের নারী ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্যও সে কথা মনে রাখা প্রয়োজন।

মনে রাখতে হবে, যথাযথ অনুপ্রেরণা নিশ্চিত না করা গেলে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের এই অর্জন যেমন এখানেই আটকে থাকতে পারে তেমনি সযত্ন পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিকল্পনা এনে দিতে পারে ধারাবাহিক সাফল্য। বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল, এর কোচ ও ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন।