'ফিরে চল্ মাটির টানে'

ফিরে চল্, ফিরে চল্, ফিরে চল্ মাটির টানে/যে মাটি আঁচল পেতে চেয়ে আছে মুখের পানে—রবীন্দ্রনাথের গানের এই মাহাত্ম্য বাংলাদেশের মানুষের চেয়ে আর কেউ বেশি উপলব্ধি করেন বলে মনে হয় না। প্রতিটি জাতীয় উৎসব-পর্বে তাঁরা মাটির টানে উৎসে ফিরে যান, স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেন। গ্রামের সঙ্গে তাঁদের আত্মিক সম্পর্কটি এখনো অটুট ও অম্লান রয়ে গেছে।

এটি আমাদের সামাজিক সংহতিকেও সুদৃঢ় করে। বছরের অন্যান্য সময়ে ছুটিছাটা তেমন পাওয়া যায় না বলেই ঈদের সময় অনেক বেশি মানুষ শহর থেকে গ্রামে যান। আবার অনেকে আনন্দ ভ্রমণের জন্যও এই সময়টি বেছে নেন। নানা কারণে আমরা বিদেশি পর্যটকদের তেমন আকৃষ্ট করতে না পারলেও অভ্যন্তরীণ পর্যটন অনেক বেড়েছে। ঈদের সময় কক্সবাজার, কুয়াকাটাসহ দর্শনীয় স্থানগুলো পরিণত হয় জনারণ্যে।
এই যে ঈদে মাটির টানে বাড়ি ফেরা কিংবা আনন্দ ভ্রমণের জন্য বের হওয়া হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুর যাত্রাকে নিরাপদ করা সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব। ঈদের সময় নৌ, স্থল ও ট্রেনে যানবাহনের সংখ্যা অনেক বাড়ানো হয়। কিন্তু তারপরও যাত্রীর সংখ্যার তুলনায় তা অপ্রতুল। ফলে একধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যায়, যা অনেক সময় প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবার আগাম বর্ষার কারণে অনেক সড়কই অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় যানজটের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, বৃষ্টি না হলে ঈদের সময় সড়ক-মহাসড়কে যানজট হবে না। কিন্তু বৃষ্টি যে হবে না, এই নিশ্চয়তা তো কেউ দিতে পারে না।

অতএব, ঈদে মাটির টানে যাওয়া এবং ঈদের পরে মানুষের ঘরে ফিরে আসা যাতে স্বস্তিদায়ক হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সর্বোচ্চ সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। ঈদের সময় ট্রাফিক ব্যবস্থায় ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে ঈদের সময় ফেরি পারাপারের ক্ষেত্রে মহা জট লেগে যায়। এ ক্ষেত্রে ফেরির সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি সড়কপথের ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতাগুলো দূর করার বিকল্প নেই। আশা করি, যাত্রী ও পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আইনকানুন মেনে চলবেন। লঞ্চ, ট্রেন বা বাসে ঝুঁকি নিয়ে কেউ যাত্রা করবেন না। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে স্বজনের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া। সেই আনন্দযাত্রা যাতে বিষাদে রূপ না নেয়, সে বিষয়ে আমাদের সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। আবার এই সুযোগে একশ্রেণির পরিবহন মালিক ও কর্মচারীরা ভাড়া বাড়িয়ে দেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ঈদে যাঁরা মাটির টানে ঘরে ফিরে যাবেন, যাঁরা আনন্দ ভ্রমণে বের হবেন, তাঁদের সবার যাত্রা আনন্দময় ও নিরাপদ হোক।