ঈদুল ফিতর ও চাঁদরাতের আমল

চাঁদ বা চন্দ্রের আরবি হলো ‘কমার’। পূর্ণিমা চাঁদের আরবি হলো ‘বদর’। নতুন চাঁদের আরবি হলো ‘হিলাল’, যাকে আমরা বাংলায় ‘হেলাল’ বলে থাকি। এ কারণেই চাঁদ দেখা কমিটিকে ‘হেলাল কমিটি’ বলা হয়। সাধারণত ১ থেকে ৩ তারিখের চাঁদকে ‘হিলাল’ বলা হয়। হাদিস শরিফে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখো।’ তিনি আরও বলেন: ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো, চাঁদ দেখে রোজা ছাড়ো, ইফতার করো বা ঈদ করো।’

যে সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ দেখা যায়, সে রাতকে চাঁদরাত বলা হয়। প্রতিটি মাসের চাঁদরাত গুরুত্বপূর্ণ। আরবি চান্দ্রবছরের নবম মাস রমজান এবং দশম মাস শাওয়াল। রমজানের রোজার শেষে পয়লা শাওয়াল ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদ। শাওয়ালের চাঁদরাত হলো ঈদের রাত। ইসলামে যে রাতগুলো ইবাদতের জন্য এবং ফজিলতে পরিপূর্ণ—সেসবের মধ্যে এই ঈদের রাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ রাতের প্রথম আমল হলো চাঁদ দেখা। এটি একটি সুন্নত আমল এবং ফরজে কিফায়া। চাঁদ দেখলে বা চাঁদ দেখার সংবাদ নিশ্চিত হলে দোয়া পড়া। ‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ইমান, ওয়াছ ছালামাতি ওয়াল ইসলাম; রব্বি ওয়া রব্বুকাল্লাহ। হিলালু রুশদিন ওয়া খায়র।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! এই মাসকে আমাদের জন্য নিরাপত্তা, ইমান, প্রশান্তি ও ইসলাম সহযোগে আনয়ন করুন; আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ। এই মাস সুপথ ও কল্যাণের।’ (তিরমিজি: ৩৪৫১, মুসনাদে আহমাদ: ১৪০০, রিয়াদুস সালেহিন: ১২৩৬)। 

ঈদের রাতের আমলগুলো হলো: মাগরিব, এশা ও ফজর নামাজ পুরুষদের মসজিদে জামাতের সঙ্গে পড়ার চেষ্টা করা এবং নারীদের আউয়াল ওয়াক্তে ফরজ নামাজ আদায় করা। রাতের ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে পবিত্রতা অর্জন করা; সম্ভব হলে গোসল করা। ইবাদতের উপযোগী ভালো কাপড় পরিধান করা। সুগন্ধি ব্যবহার করা। মাগরিবের পর আউয়াবিন নামাজ পড়া এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। রাত জেগে নফল ইবাদত করা। নফল নামাজ পড়া। তাহ্যিয়াতুল অজু, দুখুলুল মসজিদ, তাওবার নামাজ, সলাতুল হাজাত, সলাতুত তাসবিহ ইত্যাদি পড়া। কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করা, দরুদ শরিফ পাঠ করা, ইস্তিগফার করা, তাসবিহ তাহলিল, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে মশগুল থাকা।
ইসলামে বার্ষিক দুটি ঈদ পর্ব—ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। এ উভয় ঈদের প্রবর্তন ও প্রচলন হয় দ্বিতীয় হিজরি সনে। এ বছরই বদরের বিজয়ের তেরো দিন পর পয়লা শাওয়াল ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদ উদ্‌যাপন করা হয় এবং মদিনার সুদখোর মহাজন ইহুদি বনু কাইনুকা সম্প্রদায়কে নিরস্ত্র করার পর দশ জিলহজ ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ পালন করা হয়। নবীজি (সা.) বলেন: ‘প্রত্যেক জাতির উৎসব আছে, আমাদের উৎসব হলো এই দুই ঈদ।’ (মুসলিম, তিরমিজি)।
ঈদের ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘যখন ঈদের দিন তথা ঈদুল ফিতরের দিন আসে, তখন আল্লাহ বান্দাদের বিষয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করেন। বলেন, হে আমার ফেরেশতারা! যে শ্রমিক তার কর্ম পূর্ণ করেছে, তার বিনিময় কি? তারা বলবে, তাদের বিনিময় হলো তাদের পারিশ্রমিক পরিপূর্ণরূপে প্রদান করা। বলবেন, হে আমার ফেরেশতারা! আমার বান্দাবান্দিরা তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করেছে, তারপর দোয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। আমার সম্মান, মহত্ত্ব, করুণা, মাহাত্ম্য ও উচ্চ মর্যাদার শপথ! আমি তাদের প্রার্থনা গ্রহণ করব। এরপর আল্লাহ বলবেন, তোমরা ফিরে যাও, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের মন্দ আমলগুলো নেকিতে পরিবর্তন করে দিলাম। নবীজি বলেন, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে যাবে।’ (খুত্বাতুল আহকাম, ঈদুল ফিতরের খুত্বাহ, পৃষ্ঠা: ১৬২-১৬৬)।
পুরুষদের জন্য ঈদের নামাজ ওয়াজিব। ঈদের নামাজের সময় হলো সূর্যোদয়ের পর থেকে মধ্য দিবসের আগ পর্যন্ত। ঈদের নামাজের আগে বা পরে কোনো নফল নামাজ পড়তে হয় না। ঈদের নামাজের জন্য আজান ও ইকামত দিতে হয় না। সাধারণত দিনের প্রথম প্রহরেই ঈদের নামাজ পড়া হয়। রমজানের ঈদ অপেক্ষা কোরবানির ঈদে জামাত একটু আগেই করা হয়; কারণ তারপর কোরবানির পশু জবাইসহ নানা কাজ থাকে। রমজানের ঈদের নামাজের আগে এবং কোরবানির ঈদে ঈদের নামাজের পরে প্রাতরাশ গ্রহণ করা সুন্নত।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম-এর সহকারী অধ্যাপক
smusmangonee@gmail,com