স্বস্তির সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন

এসব বিবেচনায় এবারের ঈদুল ফিতরের উৎসব অনেকটাই স্বস্তির সঙ্গে উদ্‌যাপিত হয়েছে। সড়ক-মহাসড়কে যানজট অসহনীয় আকার ধারণ করেনি, ফলে মানুষের দুর্ভোগ অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশ কম হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনাও অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম ঘটেছে। শুধু ঈদের পরদিন একটি সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জন মারা গেছে, আরও কিছু ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে, এবং সব মিলিয়ে এদিন মারা গেছে মোট ১৬ জন। বছরের অন্যান্য সময় সড়ক দুর্ঘটনার হার সাধারণভাবে যেমন থাকে, ঈদের সময় তার থেকে যে বেশি হয়নি, এটাই স্বস্তির বিষয়।

এ থেকে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে সড়ক-মহাসড়কে একই সময়ে বিপুলসংখ্যক যানবাহন চলাচল করলে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তা লাঘব করার উপায়ও থাকে। এবার সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কের দুরবস্থার কারণে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগে থেকেই সংবাদমাধ্যম জনসাধারণের সম্ভাব্য দুর্ভোগ সম্পর্কে সতর্ক করেছে, সড়ক ব্যবস্থাপনা উন্নত করার জন্য অবিরাম তাগিদ দিয়ে এসেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো সংবাদমাধ্যমের সেসব সতর্কবাণী আমলে নিয়েছে এবং বলা চলে এবার সড়ক ব্যবস্থাপনার দিকে তাদের নজর ছিল বলেই যানজট খুব বেশি বাড়েনি, ফলে ঘরমুখী মানুষের দুর্ভোগ তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়েও একই কথা বলা যায়: বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো, পরস্পরকে অতিক্রম করে আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা, চলাচলের অনুপযোগী বা ফিটনেসহীন যানবাহন রাস্তাঘাটে নামানো—এসব প্রবণতাও এবার কম ছিল।

অতিরিক্ত জনবহুল দেশে পর্যাপ্তসংখ্যক রাস্তাঘাটের অভাবে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের চাপ সারা বছরই বেশি থাকে। ঈদের মতো বড় উৎসবের সময় সেই চাপ বহুগুণ বেড়ে যায়। এই বাস্তবতায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যানবাহন চলাচলে সামগ্রিক শৃঙ্খলা। ভিড় কমানোর সুযোগ যখন কোনোভাবেই থাকে না, তখন সড়কব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমেই যতটা সম্ভব বিশৃঙ্খলা রোধ করা যায়। তাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত আরও উন্নত সড়ক ব্যবস্থাপনা এবং যানবাহন চালনার নিয়মকানুন যথাযথভাবে পালনের সংস্কৃতি গড়ে তোলার দিকে আরও মনোযোগ নিবদ্ধ করা। এ জন্য বিআরটিএ, মহাসড়ক পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে আরও তৎপর হতে হবে; তাদের দায়িত্বশীলতা বাড়াতে হবে, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক-মহাসড়কের শৃঙ্খলা শুধু উৎসবের সময়ে নয়, সারা বছরই প্রয়োজন।