যেসব অপমৃত্যু এড়ানো সম্ভব

মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় নিজেদের ছবি (সেলফি) তুলতে গিয়ে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার কোনো লেখাজোকা নেই। তবে সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই এ ধরনের দুঃসংবাদ প্রকাশিত হয়। এ থেকে অনুমান করা যায়, ‘সেলফি দুর্ঘটনা’য় বার্ষিক হতাহতের ঘটনা নেহাত কম হবে না। ঈদুল ফিতরের খুশির দিনে নরসিংদীতে শিশুসন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে একটি রেলসেতুর ওপরে সেলফি তুলতে গিয়ে হাফিজ মিয়া নামের এক ব্যক্তির পরিবার যে মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হয়েছে, তা অনিবার্য ছিল না। এ ধরনের অপমৃত্যু কোনোভাবেই অনিবার্য নয়, একটু সতর্ক হলেই এসব এড়ানো যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, হাফিজ মিয়া তাঁর ১৩ বছরের মেয়ের আবদারে সেলফি তুলতে উঠেছিলেন রেলসেতুর ওপরে। দুই বছর বয়সী আরেক মেয়েও ছিল তাঁর কোলে, সঙ্গে স্ত্রী। তাঁরা ভেবে দেখেননি যে রেলসেতু মানুষের হাঁটাচলার জন্য নয়, সেখানে ওঠাই বিপজ্জনক। তাঁরা সেতুর ওপরে থাকা অবস্থায় ট্রেন এসে পড়লে কী করে প্রাণ রক্ষা করবেন, এই ভাবনা কাজ করলে দুই শিশুসন্তানসহ হাফিজ মিয়াকে প্রাণ হারাতে হতো না। সৌভাগ্যক্রমে তাঁর স্ত্রী বেঁচে গেছেন বটে, কিন্তু স্বামী-সন্তানদের হারিয়ে তিনি যে জীবনের মুখোমুখি হলেন, তার ভবিষ্যৎ কী? মুহূর্তের অসচেতনতা মানুষের জীবনে কী করুণ পরিণতি ডেকে আনতে পারে, এই দুর্ঘটনা তার একটি দৃষ্টান্ত।

ঈদের দিনেই আরও একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের বাইমাইল নামক স্থানে। ১২ থেকে ৮ বছর বয়সী চারটি ছেলেমেয়ে, যাদের মধ্যে দুজন ভাইবোন, একই সঙ্গে মারা গেছে একটি বিলে নৌকায় বেড়াতে গিয়ে।

বাংলাদেশে অনেক অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটে সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানের অভাব থেকে, অপরিণামদর্শী দুঃসাহস থেকে, নির্বুদ্ধিতাপ্রসূত খামখেয়ালি থেকে। এর একটি রাস্তাঘাটে মোবাইল ফোনের ব্যবহার। বাস-ট্রাকের চালকদের অনেকেই চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলেন। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল সবচেয়ে বিপজ্জনক। প্রচুর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলার কারণে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হারও বেশি। রিকশাচালকদের মধ্যেও এই প্রবণতা বিরল নয়। রিকশা থেকে শুরু করে ট্রাক-বাস পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহনের দুর্ঘটনার একটা অংশের জন্য চালকদের মোবাইল ফোন ব্যবহার দায়ী।

এসব অপমৃত্যু জীবনের দুঃখজনক অপচয়। যানবাহন চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা ট্রাফিক আইনে নিষিদ্ধ, এ আইন ভঙ্গ করলে জরিমানা দিতে হয়। কিন্তু এ আইন ভঙ্গের দায়ে শুধু জরিমানা কেন, খোদ নিজের জীবনটাই দিয়ে দিতে হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, অন্য অনেকের
জীবনও এভাবে ধ্বংস হতে পারে। তাই আইন করে এসব অপমৃত্যু ঠেকানো
সম্ভব নয়, এর জন্য নিজেদের সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান ও সচেতনতা-সতর্কতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।