শিক্ষকদের অনশন কর্মসূচি

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা আগামী সোমবার থেকে আমরণ অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বারবার এমপিওভুক্তকরণের আশ্বাস দিয়েও শিক্ষা মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়ন না করা এবং বাজেটে তাঁদের এমপিওভুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় তাঁরা এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

চলতি মাসের ১০ তারিখে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। সেদিন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষকদের প্রতি আন্দোলন না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেছিলেন, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছিলেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। কয়েক দিন অবস্থান ধর্মঘট চলার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তার আশ্বাসে শিক্ষকেরা সেই কর্মসূচি স্থগিত করেন। এরপরও শিক্ষকেরা ছয় মাস অপেক্ষা করেছেন। তাঁদের প্রত্যাশা ছিল, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে তাঁদের এমপিওভুক্ত করা হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়ে বরাদ্দের কথা বলা হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই তাঁদের আমরণ কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা।

আমাদের প্রশ্ন, কেন শিক্ষকেরা আন্দোলনে নামলেই সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হয়? আশ্বাসই যদি দেওয়া হয়, তাহলে তা বাস্তবায়নে কেন অযথা বিলম্ব করা হচ্ছে? প্রজ্ঞাপন না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন একজন শিক্ষকনেতা। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের পর নতুন করে দেশে আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। বর্তমানে সারা দেশে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। এমপিওভুক্ত না হওয়ার কারণে তাঁরা ন্যূনতম বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। ফলে অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। শিক্ষাদানের মতো মহৎ পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অবিলম্বে এমপিওভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। শিক্ষকেরা আন্দোলনে থাকায় লাখ লাখ শিক্ষার্থীর পড়াশোনাও ব্যাহত হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষকেরা না বাঁচলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা শিক্ষা, কোনোটিই রক্ষা করা যাবে না। শিক্ষকেরা হচ্ছেন জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর। বেতন-ভাতার দাবিতে তাঁদের যদি বারবার রাজপথে নামতে হয়, তার চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কী হতে পারে?

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, এমপিওভুক্তির কাজের জন্য ইতিমধ্যে একটি বাছাই কমিটি এবং অনলাইনে আবেদন গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য আরেকটি কারিগরি কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আমাদের প্রত্যাশা, এসব কমিটি দ্রুত তাদের কাজ সম্পন্ন করবে।