আমি আগুন-সন্ত্রাসীদের মাইনাসের পক্ষে: হাসানুল হক ইনু

হাসানুল হক ইনু
হাসানুল হক ইনু
>হাসানুল হক ইনু। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর সভাপতি। তাঁর সঙ্গে কথা হয় রাজনীতির অতীত, বর্তমান এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান

প্রথম আলো: বড় বন্ধু না হয়ে যেন বড় শত্রু আপনি মিডিয়ার, কারণ এতটা ভয়ভীতির মধ্যে সাংবাদিকতা দেশের ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি।
হাসানুল হক ইনু: অতীতের সামরিক শাসন, সাম্প্রদায়িকতা ও অপরাজনীতির একটা ছেদ ঘটিয়ে ২০০৯ সালে মহাজোটের যাত্রা শুরু হয়। ওই ছেদ ঘটানো এবং পরে দুর্নীতি, সামরিক শাসনের জঞ্জাল অপসারণ, সাংবিধানিক সংস্কার আন্দোলন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরুন, জঙ্গি-সন্ত্রাস লালনের রাজনীতি, যুদ্ধাপরাধের বিচার পর্বে মিডিয়া বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। আমি ধন্যবাদ দিই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে আর প্রতিপক্ষ অবস্থান ছিল না। অতীতে রাষ্ট্র ও সরকার যেভাবে মিডিয়ার প্রতিপক্ষ থেকেছে, সেখান থেকে ২০০৯ সালের শরু থেকেই অবস্থার একটা পরিবর্তন হয়। সরকার মিডিয়ার সঙ্গে মুখোমুখি বা প্রতিপক্ষের অবস্থান গ্রহণ করে না।

প্রথম আলো: গণমাধ্যম কর্মীদের ভীতিকর পরিবেশ থাকাটা নাকচ করছেন কি না?
হাসানুল হক ইনু: সেখানে আসছি। তবে আরও ধন্যবাদ দিই, হত্যা-খুনের বিচারের পক্ষে, জঙ্গি-সন্ত্রাস, আগুন-সন্ত্রাস দমনে প্রশাসনের জন্য সহায়ক হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে জঞ্জালমুক্ত করার কঠোর নীতি অনুসরণের পাশাপাশি গণমাধ্যম উন্মুক্ত করার ঝুঁকিপূর্ণ নীতি সরকার নিয়েছে।

প্রথম আলো: পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটেছে। আওয়ামী লীগ আমলে বাক্স্বাধীনতার মান বেড়েছে?
হাসানুল হক ইনু: গত সাড়ে নয় বছরে বাক্স্বাধীনতার চর্চা বেড়েছে। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার অথবা কোনো অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপের বিষয়ে গণমাধ্যম সমালোচনামুখর।

প্রথম আলো: ডেইলি স্টার ও বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোরের ওয়েবসাইট ব্লকে আপনি সম্পৃক্ত?
হাসানুল হক ইনু: তথ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রশাসনিক নির্দেশ ছিল না। এই পর্যায়ে ছোটখাটো যে সমস্যা হয়েছে, সেটা আমলে আসামাত্র সংশোধন করে ফেলেছি। সুতরাং এটা আমাদের কোনো স্থায়ী নীতি বলে আমি মনে করি না। মত প্রকাশের জন্য বন্ধ করার নীতি শেখ হাসিনা সরকারের নেই।

প্রথম আলো: ক্রসফায়ারে কক্সবাজারের একরাম হত্যা ও ফুটেজ কি অসত্য ছিল? বিটিআরসির ব্লক করা তদন্ত করেছেন কি?
হাসানুল হক ইনু: সেটা তো শুধুই স্টারই প্রকাশ করেনি। কারা জড়িত তা তদন্ত করছি। স্বরাষ্ট্র ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি।

প্রথম আলো: বিডিনিউজের বিষয়ে কী ঘটেছিল? খুলনার সিটি নির্বাচনের খবর প্রকাশের পরে টিভি সাংবাদিকের সাময়িক চাকরিচ্যুতি ঘটেছিল।
হাসানুল হক ইনু: এখনও আমি এ বিষয়ে (বিডিনিউজ) পরিষ্কার নই, কোনো সরকারি পদক্ষেপ আছে বলে মনে করি না। তবে আমার মনে হয়, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা, এসবে জাতীয় নীতির প্রতিফলন নেই।

প্রথম আলো: ২০১৫ সালে আল জাজিরার রিপোর্ট বলেছিল, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার অনেক কোম্পানির বিজ্ঞাপন ছাপাতে পারে না, দুটি পত্রিকার মাসিক ক্ষতি অনেক, সেই ধারা আজও চলছে!
হাসানুল হক ইনু: অন্যদের মতো দুই পত্রিকার সম্পাদকও তথ্য মন্ত্রণালয়ের অংশীজন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে বারবার প্রকাশ্যে বলেছি, তাঁরা যদি কোনো রকম অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপের মুখোমুখি হন, তাহলে তাঁরা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করবেন, আমি পদক্ষেপ নেব।

প্রথম আলো: তবে ডিজিটাল আইনে আপনি কিন্তু পুলিশ-আনসারের অনুরোধেও বিটিআরসিকে মিডিয়া ব্লক করার ক্ষমতা অর্পণ করেছেন।
হাসানুল হক ইনু: ডিজিটাল আইন অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে এগোচ্ছে। এটি প্রক্রিয়াধীন, আমরা কোনো চূড়ান্ত পর্বে যাইনি। ডিজিটাল আইনে আমরা সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় নজর দিচ্ছি। এটা সাইবার অপরাধ দমন আইন, কোনো সাংবাদিকদের বাক্স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের কোনো আইন—এটা হতে পারে না।

প্রথম আলো: কিন্তু আপনাদের আয়োজনে আমরা সেলফ সেন্সরশিপ বাড়িয়ে দিয়েছি। আমি সাক্ষ্য দিতে পারি।
হাসানুল হক ইনু: আপনি নিজে নিজের ওপরে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছেন। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার অথবা মাথা গরম বা হঠকারী কাজ বা জনগণের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের তৎপরতার বিরুদ্ধে আপনি নির্ভয়ে লিখুন। এই ব্যাপারে সব ধরনের গণমাধ্যম কিন্তু মুখর। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার হুমকি আর রাষ্ট্র নয়, সেটা মাদক, মাফিয়া, জঙ্গি, সন্ত্রাসী এবং করপোরেট হাউসগুলো।

প্রথম আলো: প্রথম আলোর অনেক পাঠক প্রতিনিয়ত আমাদের সমালোচনায় মুখর। তাঁরা আমাদের অভিযুক্ত করছেন। তাঁরা বলছেন, আমরা সত্য প্রকাশে অধিকতর বিব্রত, দ্বিধান্বিত কিংবা পলায়নপর!
হাসানুল হক ইনু: আমি যদি আপনার এই অভিযোগ আমলে নিই, তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় পাঠক তাহলে কোথায় যাচ্ছে? অনলাইন ২২ শটি পত্রিকায় মুখর। অনেক সময় মিথ্যাচার হচ্ছে। খণ্ডিত তথ্য এমনকি তথ্যসন্ত্রাসের ঝাঁপটা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন এবং আমরা অত্যন্ত ধৈর্যশীলভাবে সহ্য করছি। কারণ আমরা বলেছি, আমরা যখন গণতন্ত্রের জানালা খুলে দেব, তখন পোকামাকড় আসতে পারে, এটা সহ্য করতে হয়।

প্রথম আলো: সাহেব-বিবি-গোলামের বাক্স খ্যাত বিটিভির স্বায়ত্তশাসন দেননি, আবার সংসদে দাবি করেছেন ৮৩ ভাগ টিভি-দর্শকের প্রিয় বিটিভি। এর ভিত্তি কি। আরও নাকি ৬টি সরকারি টিভি চ্যানেল আনছেন, তাহলে তিন জোটের রূপরেখা ভুল ছিল?
হাসানুল হক ইনু: তিন জোটের রূপরেখা ঠিক ছিল, কিন্তু ব্যক্তি খাতে মিডিয়ার বিকাশ ঘটায় আগের দাবি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে।

প্রথম আলো: রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বেতার-টিভিতে বিরোধী দলের বক্তব্য সমগুরুত্বে প্রচার করা হয় কি, আদৌ হয় কি না? আপনি কিন্তু বিরোধী দলের সব কর্মকাণ্ডই সন্ত্রাস দ্বারাই সংজ্ঞায়িত করছেন।
হাসানুল হক ইনু: আমরা সংজ্ঞায়িত করছি কি না, সেটা পরে। দেখতে হবে, রাষ্ট্রীয় টিভি রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করছে কি না। সেখানে বিটিভি শুধু সংবাদ প্রচারের মাধ্যম নয়। বিটিভি সমগ্র যাপিত জীবনের মুখপাত্র। ৮৩ ভাগের বিষয়ে আমরা চুলচেরা একটা ব্যাখ্যা দেব। ক্রীড়া, শিল্প, বাণিজ্য, পরিবেশ সব বিষয়ে বিটিভি তথ্য প্রচার করে। বেসরকারি টিভিগুলো কিন্তু এতটা ব্যাপকতায় যাপিত জীবনের কর্মকাণ্ড প্রকাশ করে না।

প্রথম আলো: আপনি টেরিস্ট্রিয়ালের মতো রাষ্ট্রীয় প্রযুক্তি কিন্তু একচেটিয়াভাবে ব্যবহার করছেন, যেটা তাদের নেই।
হাসানুল হক ইনু: সেই প্রযুক্তির কারণে বিটিভি ৯৮ ভাগ এলাকা কভার করতে পারে। সে জন্য তার একটা বাড়তি সুযোগ আছে—এটা আমি স্বীকার করি। তবে সংবাদ প্রকাশে কী কৌশল হবে, তা নিয়ে আমরা গবেষণা করছি।

প্রথম আলো: আপনার মন্ত্রিত্বে জাসদের পুনর্বার ভাঙনকে কীভাবে দেখছেন? আপনি নৌকা নিয়ে জিতে মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচিতদের বহিষ্কার করেছেন।
হাসানুল হক ইনু: জাসদ ১৪ দল ও মহাজোটের শরিক হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়েছিলাম। ২০১৪ সালে সিদ্ধান্ত হয়, ঐক্যের প্রার্থীরা নৌকা এবং ঐক্যের ভেতরে থেকেই খোলা আসনে শরিকেরা নিজ নিজ প্রতীকে ভোট করবেন। সে কারণে জাসদের প্রার্থীরাও মশাল ব্যবহার করেছেন। মইন উদ্দীন খান বাদল নৌকা নিয়ে এমপি হন। মশাল নিয়ে জয়ী রেজাউল করিম আমাদের সঙ্গে আছেন। শুধু অপর সাংসদ নাজমুল হক প্রধান এই মুহূর্তে দলের বাইরে আছেন। আমি কাউকে দল থেকে বহিষ্কার করিনি, তাঁরা দল ত্যাগ করেছেন। শক্তভাবে ১৪ দল ও মহাজোটে থাকার দলীয় অঙ্গীকার নিয়ে আলোচনা করেছি। আলোচনার দ্বার এখনও খোলা।

প্রথম আলো: দল থেকে পদত্যাগ করলে সংসদে তাঁদের আসন শূন্য হওয়ার বিধান সংবিধানে আছে।
হাসানুল হক ইনু: আমি এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ এখনও তুলিনি। হঠকারীভাবে তাঁরা দল ত্যাগ করেছেন। তাঁরা ভুল করেছেন। তাঁদের ফেরার অপেক্ষা করছি। দল ত্যাগ করলে সংসদ সদস্য পদ যাবে কি যাবে না, এর চুলচেরা বিশ্লেষণ ইসিকে করতে হবে।

প্রথম আলো: তাঁরা বাংলাদেশ জাসদ নামে নতুন দল নিবন্ধনে দরখাস্ত করেছেন। তাঁরা শিরীন আখতারকে নির্বাচিত করতে আপনার বিরুদ্ধে প্রথমে কণ্ঠভোট ও পরে ব্যালট কারচুপির নির্দিষ্ট অভিযোগ এনেছেন। একজন ১০-১৫ টিও নাকি ভোট দিয়েছেন।
হাসানুল হক ইনু: নতুন দল করলে স্বাগত। কিন্তু অভিযাগটা মিথ্যা ভাষণ। ইলেকট্রনিক কায়দায় রাত তিনটে পর্যন্ত সুস্থ ভোটিং হয়েছে। প্রার্থী ঘোষণা ও ব্যালট পেপার শরিফ নুরুল আম্বিয়া, মইন উদ্দিন খান বাদল ও নাজমুল হক প্রধানের সম্মতিতে বিতরণের পরে এবং ভোট গণনা শুরুর আগে তাঁরা হঠকারীভাবে হল ত্যাগ করেন। তাঁরা রাজনৈতিক আচরণ করেননি। কণ্ঠভোটের দাবি সর্বৈব মিথ্যা।

প্রথম আলো: আ স ম রব এরশাদের জুনিয়র পার্টনার হওয়ায় জাসদ ভেঙেছিল। সেই ফৌজি-শাসকের থাকা জোটের অংশ আজ আপনিও। এই পরিহাসটা কীভাবে দেখেন?
হাসানুল হক ইনু: এর উত্তর ১০ বছর আগেই দিয়েছি। স্বৈরাচারী এরশাদের পুনর্বার রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার বিষয়টি মহাজোট করার সময় উঠেছিল। সেখানে ঠিক হয় সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গি-সন্ত্রাস, জামায়াতি, পাকিস্তানপন্থার রাজনীতি, সামরিক স্বৈরাচার ও যুদ্ধাপরাধ বিরোধী অবস্থান যদি এরশাদ সমর্থন করেন, তাহলে কৌশলগত জোটে তিনি আসতে পারেন। তার অবস্থান কিন্তু মহাজোটে, ১৪ দলে নয়। গত ৯ বছরে এসব বিষয়ে এরশাদ প্রত্যক্ষ সমর্থন দেন এবং তা চলমান আছে।

প্রথম আলো: আর তাতে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রানিংমেট করা (এরশাদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ফ্রিডম পার্টির চেয়ারম্যান ফারুক প্রার্থী হয়েছিলেন) তাঁদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করতে এরশাদের পাপেরও স্খলন ঘটেছে?
হাসানুল হক ইনু: সেটা তাঁর, ব্যক্তিগত পাপ, তা স্খলন হয় না। জাতীয় পার্টি কাউকে রানিংমেট করেনি। যতক্ষণ বিএনপি পাকিস্তানপন্থী রাজনীতি থেকে সরে না আসে ততক্ষণ তার সঙ্গে ঐক্য চলে।

প্রথম আলো: জেনারেল এরশাদকে জাপা থেকে আলাদা করে দেখাতে চান?
হাসানুল হক ইনু: আমি আলাদা করতে চাই না। সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদ ও জাপার সভাপতি এরশাদের মধ্যে রাজনৈতিক পার্থক্য আছে। এরশাদের দুর্নীতিসহ অন্যান্য অপরাধ কিন্তু আমরা মাফ করিনি। সেটা আইন-আদালতে চলমান আছে। শেখ হাসিনা রাজনৈতিক ঐক্য করেছেন, মাফ করার ঐক্য করেননি।

প্রথম আলো: মতিঝিল থানায় এরশাদের অবৈধ ক্ষমতা দখলের দায়ে আপনার করা মামলার তথ্য কি তথ্যমন্ত্রী হয়ে নিয়েছেন? আপনি ক্ষমতা ভোগ করছেন বলে ওই বিষয়ে আর কোনো আগ্রহ আছে কি না?
হাসানুল হক ইনু: ভালো প্রশ্ন করেছেন। ১৯৯১ সালে করা মামলাটির লক্ষ্য ছিল অবৈধ ক্ষমতা দখলের বিচার করা। কিন্তু পরে এই মামলার তদন্ত হয়নি, জজকোর্ট থেকে খারিজ হয়েছে। সেই মামলাটি দ্বিতীয়বার আমি করতে পারছি না। তবে আমি রেকর্ডে বলতে চাই, অবৈধ ক্ষমতা দখলের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।

প্রথম আলো: সপ্তম সংশোধনীর রায়ে যখন বিচারের কথা বলা হলো, তখন আপনাকে আমরা সোচ্চার হতে দেখিনি।
হাসানুল হক ইনু: সে জন্য রাষ্ট্রকে নতুন করে উদ্যোগী হতে হবে, আমার মামলার আওতায় নেই, সপ্তম সংশোধনীর রায় সেই সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা তো এখন জঞ্জাল পরিষ্কারই করছি। এই মুহূর্তের উদ্বেগ হলো জঙ্গি-সন্ত্রাস ও পাকিস্থানপন্থার রাজনীতির বিরোধিতা করা। সংবিধান থেকে সামরিক শাসনের সব ছাপ আমরা সাফ করতে পারিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচন যাক, যদি গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকে, তাহলে এটা আরেক ধাপ এগোবে।

প্রথম আলো: পনেরো আগস্ট এলে আপনি সমালোচিত হন, এবারও হয়তো হবেন। এর আগে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও শেখ সেলিম জাসদের রাজনীতিকে দোষারোপ করলেও আপনি তার উত্তর দেননি।
হাসানুল হক ইনু: আমি বলেছিলাম বঙ্গবন্ধুর শাসনকাল বিচার-বিশ্লেষণের সময় এটা নয়। এটা জঙ্গি-সন্ত্রাস ও বিএনপি-খালেদা জিয়ার নাশকতা রাজনীতি মোকাবিলার সময়।

প্রথম আলো: ইতিহাস শোধরানোরও এটা সময় এবং আপনি কিছু বিষয় এখনও পরিষ্কার করেননি।
হাসানুল হক ইনু: বাহাত্তর-পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে জাসদের অবস্থান খোলা। এটা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জানেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাসদ মোশতাকের অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল বের করার নির্দেশ দিয়েছিলাম।

প্রথম আলো: বঙ্গবন্ধুর আমলে জাসদের ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যার তথ্য আওয়ামী লীগের প্রতি একটি নির্দয় অপপ্রচার কি না?
হাসানুল হক ইনু: জাসদ নেতা-কর্মী বঙ্গবন্ধুর আমলে মারা গেছে, তা দিনের আলোর মতো সত্য। তবে সংখ্যাটা রাজনীতিবিদদের কথা বলার একটা ঢং আর কী।

প্রথম আলো: এখন সরকারের ভেতরে থেকে আওয়ামী লীগকে এই অপপ্রচার থেকে রেহাই দিন। আচ্ছা আপনার ব্যক্তিগত বিশ্বাস বলুন, সংখ্যাটা কত হতে পারে? কবে সঠিক তালিকা প্রকাশ করবেন?
হাসানুল হক ইনু: আমি এই সংখ্যা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না এই কারণে যে সংখ্যার যে বিভ্রান্তি, তা অনেক সময় অপপ্রচার হয়ে থাকে। সঠিক তথ্য দেওয়া জাসদেরই কর্তব্য। এই তথ্য যাচাই করেই বলব আমরা। আমরা নিহত দলীয় নেতা-কর্মী এবং শহীদদের তালিকা তৈরির কাজ করছি। দিনক্ষণ বলতে পারি না। তবে আওয়ামী লীগের শাসনামলে জাসদের অনেক নেতা-কর্মী মারা গেছেন। কিন্তু একটা কথা আমি বলব, জাসদ-আওয়ামী লীগের বিরোধ নিয়ে মাঝে মাঝে আওয়ামী লীগের ও বাইরের কতিপয় নেতা, লেখক, বুদ্ধিজীবী যে বিতর্কের মধ্যে নিয়ে যায় এবং আওয়ামী লীগ-জাসদ ঐক্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তার আমি সমালোচনা করি। পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ঐক্য যাতে ভেঙে যায়, তার বিরুদ্ধে এটা একটা চক্রান্ত। আর বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত জাসদ এবং আমি হাসানুল হক ইনুর অবস্থান বিশ্লেষণ করেই তবে শেখ হাসিনা জাসদের সঙ্গে তাঁর ঐক্যের হাত প্রসারিত করেছেন।

প্রথম আলো: জাসদ সম্পর্কে মহিউদ্দিন আহমেদের লেখা প্রথমার বইটি পড়েছেন?
হাসানুল হক ইনু: (হাসি) মহিউদ্দিন জাসদপন্থী ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিল। তাঁর পঁচাত্তরের পরের অবস্থান আমি জানি না। তাঁর সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁর বই লেখার অধিকার আছে। একটা মন্তব্য করব, এত বড় একটা বই লিখলেন, আমি জাসদের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, কর্নেল তাহেরের সঙ্গে আমি প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছি, দীর্ঘ ৫ বছর কারাগারে ছিলাম, পুনর্জাগরণে ভূমিকা রেখেছি, আমার সঙ্গে তিনি একবারও দেখা করেননি। আলোচনা করেননি। ওই বইটির আরেকটি সমালোচনা হলো শোনা কথার ওপর বইটি লেখা।

প্রথম আলো: এই বই বলেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে আপনিই প্রথম গুলি ছুড়েছিলেন।
হাসানুল হক ইনু: মহিউদ্দিন ওখানে ছিল নাকি, ওখানে তো ছিল না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে কেউ অস্ত্র নিয়ে যায়নি। হাজার হাজার লোকের মিছিল গিয়েছে। আমি সেই দিন হাসানুল হক ইনু বাহাত্তর সালে জাসদ করার পরে আমি প্রকাশ্যে কোথাও অস্ত্র নিয়ে কখনও নড়াচড়া করিনি। আমার এখন লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্র আছে। সেই অস্ত্র কোনো দিন আমাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে কেউ দেখেনি। আমি রাজনীতির কর্মী, অস্ত্রবাজ নই।
আমি মাদারীপুরে ছিলাম, ১৭ মার্চের পল্টন জনসভা শুরু হওয়ার পরে শেষ মুহূর্তে কোনোমতে জাসদ অফিসে ব্যাগ রেখে আমি জনসভায় ঢুকি। রব-জলিলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমি মিছিলে অংশ নেই এবং রব, জলিলসহ আমাদের ওপর যখন রক্ষীবাহিনীর গুলিবর্ষণ হয়, সেই রক্ষীবাহিনীর গুলিবর্ষণের প্রত্যক্ষদর্শী আমি। অল্পের জন্য রব, জলিলসহ আমি বেঁচে যাই। বরিশালের প্রখ্যাত ছাত্রনেতা জাফরসহ অনেকেই নিহত হন। ওখান থেকেই রব-জলিল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। আমি গ্রেপ্তার হওয়া থেকে বেঁচে যাই। সুতরাং এই যে প্রথম গুলি ছোড়ার কথাটা বলল, (অথচ) সেখানে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ছিল। যদি এটা লেখা হয়, তাহলে এটা অপপ্রচার এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই বই লেখা হয়েছে।

প্রথম আলো: তিয়াত্তরে আপনারা সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল (তিন সাংসদ নিয়ে) ছিলেন। সেই সংসদীয় গণতান্ত্রিক অবস্থায় সরকারি চাকরিজীবী কর্নেল তাহেরকে প্রধান এবং আপনাকে ডেপুটি কমান্ডার করে কী করে সশস্ত্র সংগঠন গণবাহিনী গঠন করতে পেরেছিলেন? এই স্ববিরোধিতার ব্যাখ্যা কি?
হাসানুল হক ইনু: আপনি ভালো প্রশ্ন করেছেন। আমাদের তত্ত্বটা ছিল এ রকম, একটি সশস্ত্র গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি বিপ্লবী সরকার গঠন করতে হবে। সেখানে সংসদীয় ব্যবস্থাকে কৌশলগতভাবে কাজে লাগাতে হবে।

প্রথম আলো: তার মানে আপনারা বঙ্গবন্ধুর সরকারের উৎখাত চেয়েছিলেন?
হাসানুল হক ইনু: আমরা যখন তত্ত্ব দিই, আমরা সংসদীয় গণতন্ত্রকে স্বীকার করে নিয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আর্থসামাজিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘটিয়ে একটা বিপ্লবী সরকার কায়েম করতে চাই। এ রকম লক্ষ্য নিয়ে পৃথিবীর অনেক মার্ক্সবাদী দল কাজ করে থাকে। সেই হিসেবে আমরা বঙ্গবন্ধুর সরকারের বিরোধিতা করেছিলাম। কারণ দেশ সমাজতান্ত্রিক পথে সঠিকভাবে যাচ্ছে না।

প্রথম আলো: আজ কি মনে হয় (বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে) গণবাহিনী করাটা ভুল ছিল?
হাসানুল হক ইনু: গণবাহিনীর জন্মটা হয়েছিল যখন বঙ্গবন্ধুর সরকার একদলীয় সরকারে চলে যায় এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে...

প্রথম আলো: না, আপনার একথা ঠিক নয়, কারণ বাকশাল হলো পঁচাত্তরের জানুয়ারিতে, আর গণবাহিনী করলেন’ ৭৪ সালের জুনে।
হাসানুল হক ইনু: বাকশালের আগে জরুরি আইন জারি হয় এবং আমাদের সব ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর বাকশাল হলে তাতে জাসদ অংশ নেয় না, জাসদ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তখন আত্মরক্ষার জন্য গণবাহিনীর একটি তৎপরতা শুরু হয়। গণবাহিনী জাসদের অঙ্গসংগঠন নয়, এটা এলাকাভিত্তিতে আত্মরক্ষার জন্য কাজ করেছে। আমি মনে করি, তৎকালীন পরিস্থিতিতে সেই সিদ্ধান্ত সঠিকই ছিল।

প্রথম আলো: কিছু মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। মন্ত্রীদের সম্পদ এবং আয়-ব্যয়ের বিবরণী প্রকাশ করা উচিত কি না?
হাসানুল হক ইনু: মন্ত্রী ও এমপিই নন, জেলা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান যাঁরাই ক্ষমতায় আছেন, তাঁদের বিবৃতি দেওয়া উচিত।

প্রথম আলো: আপনাকে অলংকার পরতে দেখি না। কিন্তু ২০১৪ সালের বিবৃতিমতে আপনার ২৫ তোলা সোনা আছে? আপনার স্ত্রীর বেশি থাকার কথা, তাঁর মাত্র ১২ তোলা। এটুকুই ব্যবহার করেন?
হাসানুল হক ইনু: আমারটা মায়ের গয়না। যে তথ্য দিয়েছি, এর বেশি থাকার নয়। বিলাসী জীবনে বিশ্বাসী নই। এতে বিশ্বাসী নই যে টাকা দিয়ে সোনা কিনে রাখতে হবে।

প্রথম আলো: ২০১৪ সালে আপনার ৩৬ লাখ টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স এখন কত? আপনার দেখানো সাত লাখ টাকার ফ্ল্যাটটি কোথায়?
হাসানুল হক ইনু: ২০০৯ থেকে সাংসদ হিসেবে মাসে লক্ষাধিক টাকা সম্মানী পাই। মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনে প্রাপ্ত অর্থ সবটাই ব্যাংকে চলে যায়। এই টাকার সবটা আমি খরচ করি না। সেটা এখানে জমা হয়। আমার মনে হয়, ব্যাংক ব্যালান্স না-ও বাড়তে পারে। কারণ আমাকে গাড়ির কিস্তি দিতে হচ্ছে। দারুসসালামে স্ত্রীর নামে সাড়ে ১২শ বর্গফুটের সাড়ে তিন কাঠার জমির ওপরে ফ্ল্যাট আছে। ঢাকা শহরে আমার নামে কোনো বাড়ি বা ফ্ল্যাট নেই। গ্রামে একটি এজমালি বাড়ি আছে।

প্রথম আলো: আপনার এলাকায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা আছে।
হাসানুল হক ইনু: আমাদের সমাজে কিছু পুরুষ বিয়েপাগল, আর নির্বাচন এলে কিছু রাজনীতিক কর্মী আছেন তাঁরা নির্বাচন এলে প্রার্থী হন। তো এটা অস্বাভাবিক নয়, আমার এলাকাতেও এই পাগলামিটা আছে। নতুন কিছু নয়।

প্রথম আলো: আপনি দুর্নীতিগ্রস্ত সেটা সাধারণ ধারণা নয়, কিন্তু আপনার স্ত্রী (এ সময় সহাস্যে উপস্থিত ছিলেন) নিমজ্জিত (মিসেস ইনু যোগ করেন, সিদ্ধহস্ত)।
হাসানুল হক ইনু: তিনি এলাকার কোনো উন্নয়ন বা কিছুর সঙ্গে জড়িত নন। খবরও রাখেন না। (সমস্বরে)। আমার ছেলে একটা। অন্য অনেকের মতো কোনো কিছুতেই আমার পরিবারের সদস্যরা সম্পৃক্ত নন। পরিবার কোনো প্রশাসন বা এলাকায় সম্পদ বিলিবণ্টনের সঙ্গে জড়িত নন। আমি নিজেও কোনো সম্পদ ধরি না। তার জড়িত থাকার অভিযোগও এই প্রথম শুনলাম।

প্রথম আলো: জোটগতভাবে দরকষাকষিটা কি হতে পারে?
হাসানুল হক ইনু: এটা একান্তই আওয়ামী লীগ ও জাসদের নিজস্ব বিষয়। এখনও পর্যন্ত আলোচনার সূত্রপাত করিনি। তবে ছয়টি আসন ছিল, এর বেশি দাবি করব।

প্রথম আলো: ওবায়দুল কাদের বর্ণিত অক্টোবরের ছোট সরকারের কাঠামো কী হতে পারে?
হাসানুল হক ইনু: ২০১৪ সালে শেখ হাসিনা একটি সর্বদলীয় নির্বাচনী সরকার গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই রেওয়াজমতে আশা করি, তিনি একটি ছোট সর্বদলীয় সরকার কায়েম করবেন। আশা করি, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে তিনি হয়তো সর্বদলীয় সরকারে আমন্ত্রণ জানাবেন। এর বাইরে যাওয়ার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীরও নেই।

প্রথম আলো: বিএনপিকে টেকনোক্র্যাট হিসেবে বা উপনির্বাচন করে আনতে সংবিধান বাধা দেবে না।
হাসানুল হক ইনু: ইসি বিএনপিকে জায়গা করে দিয়েছে। এখনও বিএনপি বৈধ দল। এর বাইরে এ ধরনের কোনো প্রস্তাব বিবেচনা করবেন বলে মনে করি না। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না সেই প্রশ্ন এখন বড় নয়। এটা কোনো আলোচনার বিষয় নয়। আমার প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ রাজনীতিতে রাজাকার, জঙ্গি জামায়াত ও তাদের ঘনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক বিএনপি, আগুনসন্ত্রাসীরা থাকবে কি থাকবে না, সেটা নিষ্পত্তি করা উচিত বলে আমি মনে করি। আমি মনে করি, জামায়াত-বিএনপি রাজাকার, আগুনসন্ত্রাসীরা গণতন্ত্রের জন্য ভয়ংকর বিপজ্জনক। তারা অগণতান্ত্রিক শক্তি। তারা পরিষ্কার পাকিস্তানপন্থী। যতক্ষণ তারা এই অবস্থানে থাকবে, ততক্ষণ তাদের ক্ষমতার বাইরে থাকা উচিত। সুতরাং নির্বাচনে তাদের আসা বা না আসা নিয়ে আলোচনাটায় আমি ঢুকতে চাই না। এমনকি আলোচনা করতে মানা করি আমি। আলোচনা হতে পারে কী করে বিএনপি-জামায়াতকে রাজনীতির বাইরে রাখা যায়।

প্রথম আলো: জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি তুলছেন না কেন? অবাস্তব?
হাসানুল হক ইনু: আমি জাসদের পক্ষে জামায়াতকে নিষিদ্ধের পক্ষে। আমি এখনও। আমি মনে করি, জামায়ত নিষিদ্ধ করা উচিত। এটা অবাস্তব নয়। নাৎসি পার্টি নিষিদ্ধ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। বলেছেন, আদালতে মামলা আছে। ধৈর্য ধরো।

প্রথম আলো: বিএনপির বিরুদ্ধে যতটা সরব, হেফাজতের বিষয়ে হঠাৎ নীরব?
হাসানুল হক ইনু: সুপ্রিম কোর্টের ভাস্কর্য সরানোর সময় তেঁতুল হুজুরদের বিষয়ে আমার অবস্থান খুব পরিষ্কার ছিল। তেঁতুল হুজুরেরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি। তেঁতুল হুজুরদের কোনো রাজনৈতিক ছাড় দেওয়া উচিত নয়। নির্বাচনের আগে তেঁতুল হুজুরদের ওপরে আমার একটি বই আসবে।

প্রথম আলো: মাদকবিরোধী অভিযানের নামে ক্রসফায়ারে মানুষ হত্যার বিষয়ে কী বলবেন? জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ারকে ঢুকতে দিচ্ছেন না।
হাসানুল হক ইনু: মাদকবিরোধী অভিযানে গত ৫ বছরে তিন লাখ গ্রেপ্তার হয়েছে। সম্পতি ১৬ হাজারের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে। ১৪০ নিহত হয়েছে। হত্যা তাই প্রধান কৌশল নয়। একে সামনে এনে মাদকবিরোধী অভিযানকে খাটো করা হচ্ছে। এটা মাদক দমন যুদ্ধ, তাই এর মধ্যে হতাহতের যে ঘটনা তাকে হত্যাকাণ্ড বলে চালানো উচিত নয়। তরপরও কেউ যদি আইন হাতে তুলে নিয়ে কাউকে হত্যা করে, তার তদন্ত করে আমরা ব্যবস্থা নেব। বিনা বিচারে হত্যার কোনো বিধান বাংলাদেশের আইনে নেই। বিনা বিচারে হত্যার প্রতিটি ঘটনার আমরা তদন্ত করি। কর্নেল পর্যন্ত আমরা আদালতে দিয়েছি।

প্রথম আলো: ১৪ দলের মুখপাত্র হিসেবে নাসিম সাহেব আশাবাদী খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। নির্বাচন করবেন। আপনার মত কী?
হাসানুল হক ইনু: তাঁর মুক্তি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার। এ বিষয়ে কোনো রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর মন্তব্য করার কোনো এখতিয়ার নেই। উচিতও নয়।

প্রথম আলো: আপনি আশা করেন তিনি নির্বাচন করবেন?
হাসানুল হক ইনু: উনি সাজাপ্রাপ্ত দণ্ডিত ব্যক্তি।

প্রথম আলো: আপনাদের দণ্ডিত মন্ত্রী আছেন।
হাসানুল হক ইনু: দণ্ডিতরা মন্ত্রী সেটা বোধকরি আদালতের এখতিয়ারে আছেন। খালেদা জিয়া মনে হয় নির্বাচন করতে পারবেন না। আইনে এটা নেই।

প্রথম আলো: ব্যক্তিগত বিশ্বাস নাকি সরকার সিদ্ধান্তে এসেছেন?
হাসানুল হক ইনু: আমরা মন্ত্রিসভায় আলোচনা করিনি। আইন অনুসরণ করব আমরা। আমার জানামতে, দণ্ডিত ব্যক্তি দুই বছরের বেশি সাজা পান তিনি ৫ বছরের বেশি নির্বাচনে অযোগ্য হন। খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পান বা না পান, আগামী নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারছেন না। অমি মোটামুটি আইন যা বুঝি, তাতে জামিন পান বা না পান দণ্ডিত হিসেবে তিনি নির্বাচন করতে পারছেন না।

প্রথম আলো: মাইনাস ওয়ান বাস্তবায়ন করছেন?
হাসানুল হক ইনু: আমি আগুনসন্ত্রাসীদের মাইনাস করার পক্ষে। বাংলাদেশে যাতে আর কখনও সামরিক সরকার, রাজাকার-সমর্থক সরকার যাতে না আসে, সে জন্য এই মাইনাসটা দরকার। বাংলাদেশে একবার মুক্তিযুদ্ধের আরেকবার রাজাকার সরকার ক্ষমতায়নের মিউজিক্যাল চেয়ারটা বন্ধ করা দরকার। আমি তাই মাইনাস রাজাকার তত্ত্ব দিচ্ছি।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
হাসানুল হক ইনু: ধন্যবাদ।