ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন নওয়াজ?

নওয়াজ শরিফ । ফাইল ছবি
নওয়াজ শরিফ । ফাইল ছবি

দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং আপাতদৃষ্টিতে তাঁর রাজনৈতিক উত্তরসূরি ও মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে পাকিস্তানের অ্যাকাউন্টেবিলিটি আদালতের কঠোর সাজা দেওয়ার বিষয়টি দেশটিতে সাধারণ নির্বাচনের সামান্য আগে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নেতাদের কিছু কঠিন প্রশ্নের মুখে ফেলবে।

কোনো সন্দেহ নেই যে অ্যাকাউন্টেবিলিটি আদালতের এ রায় হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হবে এবং আদালতে যখন এ দুই নেতার আপিলের শুনানি হবে, তখন তাঁরা জামিন চাইবেন। বর্তমানে তাঁরা লন্ডনে নওয়াজের গুরুতর অসুস্থ স্ত্রী বেগম কুলসুম নওয়াজের শয্যাপাশে আছেন। সেখানে তাঁর ক্যানসারের চিকিৎসা চলছে। আদালত নওয়াজ শরিফকে রাষ্ট্রীয় যেকোনো পদে, এমনকি দলীয় প্রধানের পদে অযোগ্য ঘোষণা করার পরও দলের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী শাহবাজ শরিফ সবচেয়ে জনসংখ্যাবহুল প্রদেশের প্রধান নির্বাহী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

এখন যদি এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে যে তাঁদের ব্যাপারে কড়া অবস্থান নেওয়া হবে, জামিন নামঞ্জুর করা হবে, তাহলে নির্বাচনী প্রচারণার শেষের দিনগুলোতে পিএমএল-এন দল মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়বে। কেননা নির্বাচনী প্রচারণায় পিএমএল-এন এ বিষয়টিকেই সামনে আনছিল। আসলে গভীর সংকটেই পড়েছে পিএমএল-এন।

তবে রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের মধ্যে একটি বোঝাপড়া আছে যে নওয়াজ শরিফ ও তাঁর মেয়ের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এমন গল্পও প্রচলিত আছে যে তাঁরা দেশে বেসামরিক কর্তৃত্ব ঘোষণা করেছেন—এ কারণে তাঁরা যেমন দেশের সামরিক বাহিনী দ্বারা শাস্তি পেয়েছেন, এতে তাঁদের প্রতি জনসমর্থনও বেড়েছে।

নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে আদালতের রায় ঘোষণার পর ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে শাহবাজ শরিফের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এখন কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শাহবাজ শরিফ এক বিবৃতিতে আদালতের রায়কে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এই রায় ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

কেউ কি শাহবাজের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু প্রত্যাশা করেছিলেন—যেমন রেগে ওঠা বা অবজ্ঞাসূচক বাক্য ব্যবহার করা? সে রকম তিনি করতেই পারতেন, কিন্তু সেটা তাঁর দলের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না। যখন এ লেখাটা লিখছি, তখন খবর পেলাম, নওয়াজ শরিফ ঘোষণা দিয়েছেন যে তাঁর ক্যানসারে আক্রান্ত স্ত্রী জ্ঞান ফিরে পেলেই তিনি যত শিগগির সম্ভব দেশে ফিরে আসবেন এবং তাঁদের মুখোমুখি হবেন, যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে এই রায় দিয়েছেন। মরিয়ম নওয়াজও একইভাবে দেশে ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন।

পিটিআই নেতা ইমরান খানের নাম উল্লেখ ছাড়া পিএমএল-এন এবং নওয়াজ শরিফের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমার এই বিশ্লেষণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। কেননা আদালতের রায়ে নওয়াজের প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য হওয়া, আজীবন রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হওয়া, এমনকি নিজের দলের প্রধানের পদেও থাকতে না পারার পেছনে ইমরানের হাত রয়েছে। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে শরিফদের নাম আসার পর ইমরানই নওয়াজকে আদালতের মুখোমুখি করেছিলেন। নওয়াজের এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে লাভবানও হয়েছেন ইমরান। গত বছর ফাঁস হওয়া পানামা পেপারসে নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম ও ছেলে হাসান-হুসেনের নাম আসে। তাঁরা তিনজন বিভিন্ন অফশোর কোম্পানির নামে লন্ডনে সম্পত্তি কেনেন বলে ফাঁস হওয়া নথি থেকে জানা যায়।

সে সময় বিরোধী দল পিপিপি এই কেলেঙ্কারির হাত থেকে রক্ষা পেতে নওয়াজ শরিফকে একটি পার্লামেন্টারি কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু নিজের ওপর অতিমাত্রায় আস্থাশীল নওয়াজ সেই পরামর্শে কর্ণপাত করেননি। এই ফাঁকে সুপ্রিম কোর্ট ইমরান খান এবং আরও দুই রাজনীতিকের পিটিশন গ্রহণ করেন। ফলস্বরূপ নওয়াজ রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষিত হন এবং এখন অ্যাকাউন্টেবিলিটি আদালত তাঁকে ১০ বছরের সাজা দিলেন। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই এমন প্রশ্ন করতে পারেন যে নওয়াজের খেলা এখানেই শেষ কিনা। আসলে তাঁর ভবিষ্যতের চাবি তাঁর নিজের হাতে। নওয়াজ বলেছেন, তিনি শিগগিরই পাকিস্তানে ফিরবেন। তিনি যদি তা করেন, তাহলে রাজনীতির সঙ্গেই তাঁর হয়তো সংশ্লিষ্টতা থাকবে, এমনকি তিনি যদি জেলেও থাকেন। তবে তিনি কখন ফিরবেন, সেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ইংরেজি থেকে অনূদিত। ডন পত্রিকা থেকে নেওয়া

আব্বাস নাসির ডন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক