প্রাচীন নিদর্শন সংরক্ষণ

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন প্রাচীন লাউড় রাজ্যের হলহলিয়া রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের হলহলিয়া গ্রামে এই রাজবাড়ির অবস্থান। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকার খবর অনুযায়ী, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলে হারিয়ে যেতে বসেছিল প্রায় ১ হাজার ২০০ বছরের পুরোনো এই রাজবাড়িটি। অনেক দিন ধরেই এ দখলের প্রক্রিয়া চললেও এবং এ ব্যাপারে পত্রপত্রিকায় বহু লেখালেখি হলেও তা বন্ধে কারও কোনো উদ্যোগ ছিল না। অবশেষে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন প্রাচীন রাজবাড়িটি রক্ষায় এগিয়ে এল। তাদের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

বিভিন্ন ইতিহাস বইয়ের তথ্যমতে, প্রাচীনকালে শ্রীহট্ট বা সিলেট তিনটি রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এগুলো ছিল গৌড়, লাউড় ও জয়ন্তিয়া। লাউড় রাজ্যটি বর্তমানের সুনামগঞ্জ জেলার পুরোটা এবং ময়মনসিংহ ও হবিগঞ্জ জেলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ছিল। হলহলিয়া গ্রামে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত লাউড়ের রাজা বিজয় সিংহের রাজবাড়িটিতে ছিল বন্দিশালা, সিংহদুয়ার, নাচঘর, দরবার হল, পুকুর ও সীমানাপ্রাচীর। কিন্তু দখলের কবলে পড়ে এখন এগুলোর খুব সামান্যই টিকে আছে। স্থানীয় লোকজনের মতে, এখন প্রাচীন নিদর্শনটি সংরক্ষণ করা হলে টাঙ্গুয়ার হাওর, বারেকটিলা, যাদুকাটাসহ অন্যান্য দৃষ্টিনন্দন স্থানের মতো হলহলিয়াও একটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হবে। কেননা এই রাজবাড়ি দেখতে এমনিতেই অনেক দর্শনার্থী আসে।

হলহলিয়ার রাজবাড়ির মতো দেশের বিভিন্ন জেলায় এ রকম আরও বহু প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে, যেগুলো সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। খোদ রাজধানীতেই রয়েছে এ রকম ৯৫টি নিদর্শন। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় রয়েছে একাধিক প্রাচীন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন, যেগুলো যত্নের অভাবে ধ্বংসের পথে রয়েছে। এ ছাড়া পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার কুলুবাড়ির প্রাচীন স্থাপনাগুলো, কিশোরগঞ্জের কুতুব শাহ মসজিদ, শেরপুরের পৌনে তিনআনি জমিদারের রংমহল, সাতক্ষীরার মঠবাড়ি, হবিগঞ্জের প্রাচীন আখড়া, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার রাজানগরের রাজবাড়ি, নেত্রকোনার বোয়ালবাড়ি পুরাকীর্তি, নওগাঁর জগদ্দল বিহার, ঠাকুরগাঁওয়ের রাজা টঙ্কনাথের বাড়িসহ বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত প্রাচীন প্রত্ননিদর্শনগুলো ধ্বংসের পথে। এসব জেলার প্রশাসন এ ক্ষেত্রে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে অনুসরণ করতে পারে।

দেশীয় ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এসব মহামূল্যবান প্রাচীন নিদর্শন সংরক্ষণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কেননা এসব নিদর্শন আমাদের সমৃদ্ধ অতীতের পরিচায়ক। এগুলোর বিলুপ্তির অর্থ হচ্ছে দেশের ইতিহাসকে, অতীত গৌরবকে ধ্বংস করা। দেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকেও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।