কিশোরীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি

জাতীয় অগ্রগতির অন্যতম শর্ত সব বয়সী মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। সুখের বিষয়, দারিদ্র্য হ্রাস ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে। তবে এ ক্ষেত্রে এখনো বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষ নানা রকমের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে আছে। বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন নারীদের স্বাস্থ্যের দিকে। কারণ, তাঁদের সুস্বাস্থ্যের ওপর নতুন প্রজন্মের সুস্বাস্থ্য নির্ভরশীল। কিশোরীরা যখন বিয়ে ও সন্তান জন্মদানের বয়সের দিকে এগিয়ে যায়, তখন তাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) এক সাম্প্রতিক গবেষণা জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের ৩১ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছে। এটি দুশ্চিন্তার বিষয়। কারণ, এই বয়সী কিশোরীদের একটি বড় অংশের বিয়ে হয়ে যায়। ইউএনএফপিএ বলছে, এ দেশে এখন এই বয়সী কিশোরীর মোট সংখ্যা ৯০ লাখ ৯৫ হাজার এবং তাদের মধ্যে ৪০ লাখ ২০ হাজার, প্রায় অর্ধেকই বিবাহিত।

পুষ্টির অভাব এদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই সন্তান জন্মদানের সময় এদের মৃত্যুর হার প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের তুলনায় অনেক বেশি। কিশোরী মায়েদের সন্তানদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এমনিতেই বেশি, উপরন্তু তারা যদি অপুষ্টিতে ভোগে, তাহলে তাদের নবজাতকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বেশি হয়। মা অপুষ্টিতে ভুগলে তার শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম হতে পারে, তার মৃত্যুঝুঁকি বেশি হতে পারে। অপুষ্ট মায়েদের শিশুরা খর্বাকৃতি ও কৃশকায় হতে পারে।

কিশোরী অবস্থায় বিয়ে হলে শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হয় না, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা আছে। জরিপে দেখা যাচ্ছে, বিবাহিত কিশোরীদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী ব্যবহারের হার বয়স্ক নারীদের তুলনায় কম। এর অর্থ, কিশোরী মায়েদের প্রজনন হার বেশি। তা ছাড়া যেসব বিবাহিত কিশোরী জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী ব্যবহার করে, তাদের মধ্যে কত শতাংশ নিয়মিতভাবে করে আর কত শতাংশ অনিয়মিতভাবে করে, সে সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না।

প্রশ্ন হচ্ছে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রয়াস সত্ত্বেও ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের প্রায় অর্ধেকই কেন ও কীভাবে বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করল? ধারণা করা যায়, বাল্যবিবাহের এই প্রবণতা অব্যাহতভাবেই চলছে। আমাদের খতিয়ে দেখা উচিত, কী কী কারণে এই প্রবণতা কমছে না। এ বিষয়ে ইউএনএফপিএ বলছে, বাল্যবিবাহের এই উচ্চ হারের কারণগুলোর একটি হচ্ছে মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে বিপুলসংখ্যক কিশোরীর শিক্ষাজীবনের অবসান।

এটি একটি দুঃখজনক সত্য, এ দেশে মেয়েদের শিক্ষাবিস্তারের লক্ষ্যে প্রচুর সরকারি সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করার পরও বিপুলসংখ্যক মেয়েশিক্ষার্থী মাধ্যমিক পর্যায়েই ঝরে পড়ছে। এদের ঝরে পড়া রোধের উদ্যোগ আরও জোরদার করা প্রয়োজন।