বিমানের হজযাত্রা

কয়েক বছর ধরে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছে দেওয়ার এবং হজ শেষে তাঁদের ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব পালন করে আসছে। এর মাধ্যমে বিমানের আয় ও সক্ষমতা উভয়ই বাড়ছে। আগে হজযাত্রীদের পরিবহন নিয়ে প্রধানত বিদেশি ফ্লাইটের ওপরই নির্ভর করতে হতো। এখন বিমান সেই দায়িত্ব পুরোপুরি না হলেও অনেকটা পালন করছে। এটি আনন্দের সংবাদই বটে।

প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এবার ১ লাখ ২৭ হাজার হজযাত্রীর মধ্যে ৬৪ হাজার ৫৯৯ জন পরিবহন করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। শনিবার ৪১৯ জন হজযাত্রী নিয়ে বিমানের প্রথম হজ ফ্লাইটটি জেদ্দায় পৌঁছেছে। বিমান হজযাত্রীদের সৌদি আরবে পাঠাতে ১৫১টি ফ্লাইট এবং হজ শেষে দেশে ফিরিয়ে আনতে ১৪৩টি হজ ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। বাকি যাত্রীদের আনা-নেওয়া করবে সৌদি এয়ারলাইনস।

তবে বিমানের হজযাত্রা নিয়ে প্রথমে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, তা হলো বিমান হজযাত্রার সময়সূচি রক্ষা করতে পারবে কি না। কেননা, এটি সব সময় বিমানের ওপরও নির্ভর করে না। সৌদি আরবের নিয়ম অনুসারে হজ ফ্লাইট বুকিংয়ের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য সৌদি আরবে (মক্কা ও মদিনায়) বাড়িভাড়া, পরিবহন ও অন্যান্য সার্ভিস চার্জ অগ্রিম প্রদান করতে হয়। সেসব কাজ সম্পন্ন করে হজ ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। ২০ মের মধ্যে হজ এজেন্সিগুলোর প্রত্যয়নপত্র জমা দেওয়ার কথা থাকলেও অনেকে সেটি দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিমানবহরে বর্তমানে লিজে আনা তিনটিসহ ১০টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে নিজস্ব চারটি উড়োজাহাজ হজ ফ্লাইটে নিয়োজিত করা হবে। বাকি ছয়টি উড়োজাহাজ দিয়ে হজের সময় নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। হজের সময় সময়সূচি বাতিল বা অন্য যেকোনো কারণে উড়োজাহাজ বিকল হয়ে পড়লে বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট চলাচলে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। গত বছরও হজ ফ্লাইট ঠিক রাখতে নিয়মিত ফ্লাইট কাটছাঁট করতে হয়েছিল। আবার শুরুতে পর্যাপ্ত যাত্রীর অভাবে অনেক হজ ফ্লাইট বাতিলও করতে হয়েছিল।

হজ এজেন্সিগুলো অধিক মুনাফার লোভে বারবার এ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিলেও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নজির তেমন নেই। সরকার কোনো কোনো হজ এজেন্সিকে কালো তালিকাভুক্ত করলেও পরে দেখা যায়, সেটি প্রত্যাহার হয়ে যায় প্রভাবশালী মহলের চাপে। অন্য অনেক বিভাগের মতো এখানেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে।

কিন্তু এবার কর্তৃপক্ষ কীভাবে সময়সূচি রক্ষা করবে, সেটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে হজযাত্রার সময়সূচি ঠিক রাখতে হবে, অন্যদিকে বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটও ব্যাহত করা যাবে না। যেকোনো আন্তর্জাতিক রুটের ব্যবসা নির্ভর করে যাত্রীদের আস্থার ওপর। বছরের অন্যান্য সময় যে যাত্রীরা যাতায়াতের জন্য বিমান ব্যবহার করেন, এই সময়ও তাঁরা চাইবেন বিমানের পরিষেবা নিতে। কোনো কারণে একটি ফ্লাইট বিলম্ব বা বাতিল হলে তার রেশ পড়ে পরবর্তী যাত্রায়ও। কেননা, স্বল্পসংখ্যক উড়োজাহাজ দিয়েই বিমানকে নিয়মিত ও হজ ফ্লাইটের সময়সূচি ঠিক করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সময়সূচি ব্যাহত হলে যাত্রীরা যেমন সমস্যায় পড়বেন, তেমনি বিমানের ব্যবসাও হুমকির মুখে পড়বে।

আমরা আশা করব, বিমান হজযাত্রার সময়সূচি রক্ষা করতে পারবে। একই সঙ্গে নিয়মিত ফ্লাইটগুলোও চালু রাখতে হবে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের যেমন সর্বোচ্চ সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি, তেমনি এর সঙ্গে জড়িত সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাজেও সমন্বয় থাকতে হবে।