৩০ লাখ গাছের চারা রোপণ

একটি-দুটি নয় বা এক লাখ দুই লাখ নয়, সারা দেশে ৩০ লাখ গাছের চারা রোপণের কর্মসূচি পালন করা হয়েছে গতকাল বুধবার। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের স্মরণে নেওয়া হয়েছে এই সুন্দর উদ্যোগ। বিশ্ব পরিবেশ দিবস, বৃক্ষমেলা এবং বৃক্ষ রোপণ অভিযান উপলক্ষে উদ্যোগটি নেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেশের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে কাজে লাগানো হয়েছে। আগেই এসব বিদ্যালয়ে বনজ ও ফলদ বৃক্ষের চারা বিতরণ করা হয়। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি দেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষাই এ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য।
সরকারের এ উদ্যোগ দেশে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে নানা স্থানে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। উষ্ণায়নের ক্ষতি লাঘবের একটা ভালো উপায় হচ্ছে বেশি করে গাছ লাগানো। বাংলাদেশে মোট আয়তনের ২৫ ভাগ বনভূমি প্রয়োজন। কিন্তু এই পরিমাণ বনভূমি আমাদের নেই। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা ৯ জুলাই বনবিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের সাড়ে ১৩ শতাংশ বনভূমি। বনভূমি পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ ও ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট গত ২৭ জুন এক প্রতিবেদনে বলেছে, গত সাত বছরে বাংলাদেশে ৩ লাখ ৩২ হাজার একর বনভূমি উজাড় হয়েছে।
মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোহিঙ্গা বসতি স্থাপনের জন্য চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে উজাড় হয়েছে পাঁচ হাজার একর বনভূমি। মহেশখালী উপজেলার সংরক্ষিত বনের ২০০ একর জায়গা গত মে মাসে অপরিশোধিত তেলের ডিপো ও পাইপলাইন স্থাপনের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বনের জায়গায় গড়ে উঠছে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ রকম যদি চলতে থাকে তা হলে বাকি বনভূমি উজাড় হতেও বেশি সময় লাগবে না। কাজেই এ ব্যাপারে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে গেলে বাংলাদেশকে বনভূমির পরিমাণ ২২ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় বলেছে, এরপর থেকে প্রতিবছর সারা দেশে ৩০ লাখ গাছ রোপণ করা হবে। শুধু মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলেই সারা দেশে গাছ লাগানোর প্রবণতা বাড়বে না। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। সবাইকে গাছ লাগাতে হবে। বেশি করে সামাজিক বনায়ন ও গৃহস্থালি বনায়ন করতে পারলে বনভূমির পরিমাণ ২৫ শতাংশ না হলেও কাছাকাছি নেওয়া সম্ভব হবে।