ট্রাম্প ও পুতিন বনাম আমেরিকা

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন

ট্রাম্প গদিতে বসার পর থেকে এ পর্যন্ত সিআইএ, এফবিআই এবং এনএসএ মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের পক্ষে যখনই কোনো প্রমাণ হাজির করেছে, তখনই তিনি হয় বারাক ওবামা নয়তো ডেমোক্র্যাটদের আক্রমণ করেছেন, আকার-ইঙ্গিতে এমনকি কখনো কখনো স্পষ্টভাবেই বলেছেন, আমেরিকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভ্লাদিমির পুতিন কখনোই হস্তক্ষেপ করেননি।

আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের এই আচরণ এতটাই বিকৃত মানসিকতার পরিচায়ক এবং আমেরিকান স্বার্থ ও মূল্যবোধের পরিপন্থী যে আমাদের এখন এই উপসংহারে আসা ছাড়া গত্যন্তর নেই: ট্রাম্প হয় রুশ গোয়েন্দা সংস্থার একজন এজেন্ট, নয়তো তিনি টেলিভিশনের পর্দায় নিজেকে বারবার আলোচিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করেন। হেলসিঙ্কিতে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যেটা হয়ে গেল, সেটা আমাকে এই ধারণায় পৌঁছাতে বাধ্য করেছে। এ ঘটনার পর আমি আমেরিকানদের উদ্দেশে বলতে চাই, আমরা এক ভয়াবহ বিপদের মধ্যে আছি এবং দ্রুত আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আমেরিকার ইতিহাসে ট্রাম্পই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা গাফিলতি করে অথবা নিজের জটিল ব্যক্তিত্বের কারণে রাষ্ট্রদ্রোহী আচরণ করছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমেরিকার সংবিধান ‘সংরক্ষণ, রক্ষা এবং সমর্থন করার’ শপথ ভঙ্গ করেছেন। হ্যাঁ, ট্রাম্প শপথ ভঙ্গ করেছেন এবং এই ইস্যু থেকে কোনো রিপাবলিকান মুখ লুকাতে পারবেন না। প্রত্যেক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাকে যে প্রশ্নটি করা উচিত এবং অবশ্যই করাও হবে, সেটি হলো: আপনি কি সিআইএ, এফবিআই ও এনএসএর বক্তব্যের সঙ্গে একমত নাকি ট্রাম্প ও পুতিনের সঙ্গে?

পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগেই ট্রাম্প একটি টুইট করেছিলেন। সেই টুইটের ভাষা দেখেই আমি ধাক্কা খেয়েছি। সেখানে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমেরিকানদের বোকামি ও নির্বুদ্ধিতার কারণেই রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যারপরনাই খারাপ অবস্থায় এসেছে এবং এখন শুরু হয়েছে (রাশিয়ার বিরুদ্ধে) উইচ হান্ট।’ রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল টুইটার থেকে ট্রাম্পের টুইট বার্তায় তাৎক্ষণিকভাবে ‘লাইক’ দেওয়া হয়েছে এবং পরে মন্তব্য হিসেবে লেখা হয়েছে, ‘আমরা একমত।’

সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে বলে মার্কিন গোয়েন্দারা যে তথ্য দিয়েছেন, তা তিনি বিশ্বাস করেন কি না। এর জবাবে তিনি যা বলেছেন, তাতে প্রকারান্তরে তিনি তাঁর সমগ্র গোয়েন্দা ব্যবস্থাকে চলন্ত বাসের নিচে ঠেলে ফেলে দিয়েছেন। হিলারি ক্লিনটনের সার্ভারে হস্তক্ষেপ করার বিষয়টিকে তিনি ধোঁয়াশার আড়ালে ঢেকে ফেলার প্রচ্ছন্ন চেষ্টা করেছেন। তাঁকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, রাশিয়া কি আমাদের নির্বাচন হ্যাক করেছে? তখন তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়া এমন কাজ করতে যাবে কেন? আমি তো তার কোনো কারণ দেখি না।’ তিনি বলেছেন, ‘কিছু ভুল-বোঝাবুঝির কারণে আমাদের সবাইকে মিথ্যামিথ্যি দোষারোপ করা হচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনের পরপরই সিআইএর সাবেক পরিচালক জন ব্রেনান টুইটে যা বলেছেন, আমি তাঁর সঙ্গে সহমত প্রকাশ করছি। ব্রেনান লিখেছেন, ‘হেলসিঙ্কিতে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের কথাবার্তা গুরুতর অপরাধের মাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এটি রাষ্ট্রদ্রোহ ছাড়া আর কিছু নয়। ট্রাম্পের কথাবার্তায় শুধু নির্বুদ্ধিতা ছিল না, তিনি যে পুতিনের পকেটের জিনিস, তা-ও এ সময় বোঝা গেছে। দেশপ্রেমিক রিপাবলিকানরা, আপনারা কোথায়?’

২০১৬ সালে নির্বাচনের সময় যখন ডেমোক্র্যাটদের ই-মেইল হ্যাক করা হচ্ছিল, তখন ট্রাম্প নির্বিকার, অনেক ক্ষেত্রে উচ্ছ্বসিত ছিলেন। কিন্তু এখন তো তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট! তাঁকে তো এখন দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তাঁকে তো রাশিয়ার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে হবে, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রুশদের সতর্ক থাকতে হবে। তাঁর তো বলা উচিত ছিল, ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র সহ্য করবে না। এটাই তো আমেরিকান প্রেসিডেন্টের কাজ। প্রেসিডেন্টের কাজ তো তাঁর দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রাখা। তার বদলে তিনি রাশিয়ার মুখপাত্রের মতো কথা বলে চলেছেন।

হেলসিঙ্কিতে একান্ত বৈঠকে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে কী কথা হয়েছে, জানি না। তবে তাঁদের মধ্যে যদি এ রকম কথোপকথন হয়ে থাকে, তাহলেও অবাক হব না:

ট্রাম্প: ভ্লাদিমির, আমরা দুজনই এখন পর্যন্ত ভালো আছি, কী বলেন? আমি আর আপনি দুজনই নিরাপদে আছি।

পুতিন: ডোনাল্ড, আপনার চিন্তার কিছু নেই। আপনি শুধু আপনার কাজ চালিয়ে যান। আমরা ভালোই থাকব।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনূদিত

টমাস এল ফ্রিডম্যান মার্কিন লেখক ও কলামিস্ট