হজ ও ওমরাহ সম্পাদন পদ্ধতি

হজের নিয়ত: সম্পাদন-প্রক্রিয়া হিসেবে হজ তিন প্রকার-যথা: ইফরাদ, কিরান ও তামাত্তু। শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পন্ন করলে একে ‘ইফরাদ হজ’ বা একক হজ বলা হয়। হজ ও ওমরাহর জন্য একত্রে ইহরামের নিয়ত করে একই ইহরামে তা সম্পন্ন করলে তাকে ‘কিরান হজ’ বা যৌথ হজ বলা হয়। একই সফরে প্রথমে ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করে, তা সম্পন্ন করে পুনরায় হজের জন্য ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পাদন করাকে ‘তামাত্তু হজ’ সুবিধাজনক হজ বলা হয়।

তামাত্তু হজ: প্রথমে ওমরাহর নিয়তে ইহরাম করতে হবে। ইহরামের জন্য অজু-গোসল করে ইহরামের কাপড় পরে (মাথায় টুপি রেখে) দুই রাকাত সুন্নাতুল ইহরাম নামাজ আদায় করতে হবে। এই নামাজে প্রথম রাকাতে সুরা কাফিরুন ও দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পড়া সুন্নত। নামাজের সালাম ফিরিয়ে মাথার টুপি খুলে ওমরাহর নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করুন। তালবিয়া, ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’ এই তালবিয়া চলতে থাকবে কাবাঘর দেখা পর্যন্ত।

ইহরাম ও মিকাত: মক্কায় প্রবেশ করতে ইহরাম করতে হয়। ইহরামের নির্ধারিত সীমানাকে মিকাত বলে। বাংলাদেশ থেকে আমাদের মিকাত হলো ইয়ালামলাম পাহাড়। মদিনা থেকে মিকাত হলো জুলহুলায়ফা নামক স্থান। মক্কা থেকে ওমরাহ করতে চাইলে তার মিকাত হলো তানয়িম, যেখানে আয়িশা (রা.) মসজিদ অবস্থিত অথবা জিরানা নামক জায়গা। ইহরাম ছাড়া মিকাত অতিক্রম করলে ওয়াজিব তরক হয় বিধায় কাফফারা হিসেবে একটি কোরবানি দিতে হয়। মক্কা থেকে হজের ইহরামের জন্য মিকাত প্রযোজ্য নয়।

ওমরাহ সম্পাদন-প্রক্রিয়া: মক্কায় যাওয়ার পর কাবা শরিফের চারদিকে সাতবার প্রদক্ষিণ করলে এক তাওয়াফ সম্পন্ন হয়। তাওয়াফের নিয়ত, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদু তওয়াফা বাইতিকাল হারাম ফা ইয়াছছিরহু লি ওয়া তাকাব্বাল হু মিন্নি ছাবআতা আশওয়াতিল লিল্লাহি তাআলা আজ্যা ওয়া জাল্লা।’ মহান আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে সাত চক্কর। এরপর বলুন, ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ্।’

তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহিমে অথবা মসজিদে হারামের যেকোনো জায়গায় দুই রাকাত ওয়াজিবুত তাওয়াফ নামাজ আদায় করতে হয়।

এরপর জমজমের পানি পান করে সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাতবার সাঈ করতে বা দৌড়াতে হবে।

সাঈর নিয়ত: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদু আন আছ’আ মা বাইনাছ ছফা ওয়াল-মারওয়াতা ছাব’আতা আশওয়াতিন ছা’ইয়া-ল-হাজ্জি/উমরাতি লিল্লাহি তাআলা আজ্জা ওয়া জাল্লা, ইয়া রাব্বাল আলামিন!’ এরপর বলুন, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ্।’

সাঈ সাফা থেকে শুরু করে মারওয়ায় সমাপ্ত হবে। এরপর নারীরা চুলের অগ্রভাগ থেকে এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটবেন; পুরুষেরা চুল ছাঁটবেন বা মাথা মুণ্ডন করবেন। এতে ওমরাহ সম্পন্ন হলো।

হজ সম্পাদন প্রণালি: যেহেতু ৮ থেকে ১৩ জিলহজ মূল হজের সময়, তাই যাঁরা ইহরামে নেই তাঁরা ৭ জিলহজ হজের ইহরাম করবেন। এই ইহরামের তালবিয়া (লাব্বাইক) চলতে থাকবে ১০ জিলহজ শয়তানকে পাথর মারার আগ পর্যন্ত। ইহরাম করে মিনায় যেতে হবে, ৮ জিলহজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করা সুন্নত। ৯ জিলহজ সকালে আরাফাতে যেতে হবে। ৯ জিলহজ সূর্যাস্তের পর মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামাজ
আদায় করতে হবে। মুজদালিফায় রাতযাপন ও এখান থেকে ৭০টি কঙ্কর সংগ্রহ করতে হবে। ১০ জিলহজ সকালে মিনায় গিয়ে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারতে হবে। পাথর মারার দোয়া, ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার! রাগমান লিশ-শায়তান ওয়া রিদাআন লির-রহমান। আল্লাহুম্মাজ-আলহু হাজ্জাম মাবরুরাওঁ ওয়া জাম্বাম মাগফুরাওঁ ওয়া ছাইয়াম মাশকুরাওঁ ওয়া তিজারাতান লান তাবুর।’ (প্রতি কঙ্কর নিক্ষেপের সময় বিসমিল্লাহ পড়ুন)।

তারপর পশু কোরবানি করতে হবে। এরপর নারীরা চুল কাটবেন, পুরুষেরা চুল ছাঁটবেন বা মাথা মুণ্ডন করবেন। এরপর ১০ থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক পোশাকে তাওয়াফে জিয়ারত করবেন। তারপর ১১ ও ১২ জিলহজ উভয় দিন তিন শয়তানকে ৭টি করে ২১টি পাথর মারতে হবে। এ সময় মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগেই মিনা ছাড়তে হবে, তা না হলে ১৩ জিলহজও মিনায় অবস্থান করতে হবে এবং সেদিনও তিন শয়তানকে ৭টি করে ২১টি পাথর ছুড়তে হবে। বিদেশি হাজিরা মক্কা শরিফ থেকে প্রস্থানের আগে বিদায়ী তাওয়াফ করবেন।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী : বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক
smusmangonee@gmail, com