শিক্ষার্থীদের পরিচ্ছন্নতা অভিযান

খবরটি ছোট। কিন্তু তাৎপর্য অনেক বড়। নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রায় ৭০০ মিটার রাস্তা পরিষ্কার করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা অনুসরণীয় বলে মনে করি। শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা গত শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকা থেকে উকিলপাড়া পর্যন্ত ঝাড়ু ও বেলচা নিয়ে রাস্তা, রাস্তার পাশের পানিনিষ্কাশনের নালা, ফুটপাতে পড়ে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করে। পরে রাস্তা ও নালায় যাতে ময়লা ফেলা না হয়, সে জন্য ওই এলাকার বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বিডি ক্লিন’-এর উদ্যোগে এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়। এর আগেও বিডি ক্লিনের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্য এলাকা পরিষ্কার করে শিক্ষার্থীরা এবং প্রতি শুক্রবার এ রকম পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোর কর্মসূচি নিয়েছে সংগঠনটি। এ জন্য বিডি ক্লিনকে আমরা সাধুবাদ জানাই।

আমাদের দেশে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব একটি বড় সমস্যা। রাস্তাঘাট নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন থাকবে, এটাই যেন স্বতঃসিদ্ধ। নগরের রাস্তাঘাট পরিষ্কার করার দায়িত্ব মূলত সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোর। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, এসব প্রতিষ্ঠান তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে না। এ রকম পরিস্থিতিতে কেউ যদি স্বেচ্ছায় রাস্তাঘাট ও নালা পরিষ্কারে এগিয়ে আসে, তখন তা আমাদের মনে আশা জাগায়।

স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে অবশ্য এটাই প্রথম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান নয়। আরও অনেক স্থানেই পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোর উদাহরণ আছে। গত মাসে নওগাঁয় তুলসীগঙ্গা নদীর স্বাভাবিক পানির প্রবাহ ফেরাতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তা পরিষ্কার করে স্থানীয় লোকজন। গত বছর স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পরিষ্কার করা হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ অন্য কর্মীরা এই পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নেন। অনেক এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাঘাট করারও উদাহরণ আছে।

রাশিয়ায় সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপ ফুটবলে জাপানি দর্শকেরা যা করেছেন, তা সবার জন্য একটি অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। সাধারণত দর্শকেরা বের হয়ে যাওয়ার পর স্টেডিয়ামের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পরিষ্কার করার কাজ করেন, কিন্তু জাপানি দর্শকেরা সেই অপেক্ষায় না থেকে গ্যালারির আসনগুলোতে থাকা
উচ্ছিষ্ট খাবার, গ্লাস, কাপ, বোতল, প্লাস্টিক ও কাগজের ঠোঙা নিজেরাই পরিষ্কার করে ফেলেন।

আসলে আমরা সবাই যদি সচেতন হই, তাহলে কোথাও কোনো ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকার কথা নয়। নাগরিক হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব আছে নিজের নগর পরিষ্কার রাখার। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার বদভ্যাস আমাদের পরিত্যাগ করতে হবে। আমরা সবাই যদি এভাবে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে শহরের রাস্তাঘাট পরিষ্কারের উদ্যোগ নিই, তাহলে কোনো নগরই আর অপরিচ্ছন্ন থাকবে না।