অবাস্তবায়িত এডিপি

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি শতভাগ বাস্তবায়িত হবে, তেমনটি কেউ আশা করেন না। উনিশ-বিশ হবে, সেটাই সবাই ধরে নেন। কিন্তু কোনো প্রকল্পে দেওয়া বরাদ্দের যদি সাড়ে সাতানব্বই ভাগই অবাস্তবায়িত থাকে, সেটি স্বেচ্ছাচারিতা ছাড়া কিছু নয়।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, এই স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ পাওয়া গেল ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের দুটি প্রকল্পে। বার্ষিক উন্নয়ন
কর্মসূচিতে (এডিপি) জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের দুটি প্রকল্প ছিল, যার বরাদ্দ ছিল ১৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। কিন্তু সারা বছরে তারা খরচ করেছে মাত্র ৪২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। বাস্তবায়নের হার মাত্র আড়াই শতাংশ। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) পাঁচটি প্রকল্পে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। খরচ হয়েছে ৬৩ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ২৫ শতাংশের কম।

পত্রিকার খবর অনুযায়ী, গতবারের এডিপিতে বরাদ্দের ৭৫ শতাংশ খরচ করতে পারেনি—এমন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংখ্যা ১০। এর মধ্যে রয়েছে সেতু বিভাগ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, অর্থ বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন, জাতীয় সংসদ সচিবালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশন। অন্যদিকে, সেতু বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগও গত অর্থবছরে তাদের জন্য বরাদ্দ হওয়া অর্থের ৬২ শতাংশ খরচ করতে পারেনি। সেতু বিভাগের অধীনে সব মিলিয়ে ৪৭টি প্রকল্পে ৬ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এই বিভাগ শেষ পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা খরচ করতে সমর্থ হয়েছে।

সেতু, বিমান, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলো বরাদ্দের ৭৫ শতাংশ ব্যয় করতে না পারার অর্থ ২৫ শতাংশ কিংবা তার বেশি সেবাপ্রার্থী বঞ্চিত থেকেছেন। গত অর্থবছরের এডিপিতে ৫৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় ১ হাজার ৭২৩টি প্রকল্প ছিল। এর মধ্যে ৫৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগই পুরো বরাদ্দ খরচ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর পেছনে কী ঘাপলা ছিল, কার বা কাদের অবহেলার কারণে এমনটি হয়েছে, তদন্ত করে দেখা জরুরি।

মাত্র তিনটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বরাদ্দের বেশি টাকা খরচ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

শতভাগ বরাদ্দ খরচের জন্য যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধন্যবাদ পেতে পারেন, তাহলে যাঁরা বেশির ভাগ কিংবা ২৫ শতাংশ বরাদ্দ ব্যয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁদের নিন্দা জানাতে হয়। একই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাজে এত তারতম্য কেন হবে? বাজেট বাস্তবায়ন না হওয়া নিয়ে অর্থমন্ত্রী ফি বছরই উষ্মা প্রকাশ করেন। তারপরও অনেক প্রকল্প কর্মকর্তা ও তঁাদের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের চৈতন্যোদয় হয় না। এর কারণ জবাবদিহির অভাব। আর কাজের মান নিয়ে তো প্রশ্ন আছেই।

সময়মতো বরাদ্দ না পাওয়ায় কোনো প্রকল্পের কাজ আটকে গেলে সংশ্লিষ্টরা দায় এড়াতে পারেন। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়ার পরও যদি উন্নয়নকাজ বন্ধ থাকে বা বিলম্বিত হয়, তার জন্য সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনতেই হবে। তবে এ ক্ষেত্রে শুধু প্রকল্প কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের দায়ী করলে হবে না। তাঁদের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারক তথা মন্ত্রী-সচিবেরাও দায় এড়াতে পারেন না। সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

আমরা কি এমন একটি বাজেটের কথা ভাবতে পারি না, যার বাস্তবায়নের হারও শতভাগ না হলেও কাছাকাছি হবে।