কলকাতায় প্রদর্শনী কেন্দ্র

কলকাতায় বাংলাদেশের পণ্য প্রদর্শনের জন্য একটি স্থায়ী প্রদর্শন কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার কনফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনস এবং ইন্দো-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একটি সমঝোতাপত্র সই হয়েছে। খবরটি নিঃসন্দেহে আনন্দদায়ক। তবে প্রস্তাবিত কেন্দ্রটি তখনই সাফল্য বয়ে আনবে, যখন এর মাধ্যমে বাংলাদেশি পণ্যের প্রচার ও প্রসার ভারতের বাজারে ঘটবে। দূরের রাজ্যগুলোতে না হলেও বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম ও মেঘালয়ে বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা আছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের বাজারগুলোতে বাংলাদেশি ভোগ্যপণ্য ও প্রসাধনসামগ্রীর প্রসার ঘটেছে। সেখানে যৌথ উদ্যোগে কারখানাও তৈরি হয়েছে।

একই দিন কলকাতায় আয়োজিত সেমিনারে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রসারের ওপর জোর দিয়েছেন। তাঁরা দুই প্রতিবেশী দেশকে অর্থনৈতিক দিক থেকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে বেশি করে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০০৮-০৯ সালে ভারত থেকে বাংলাদেশের আয় ছিল ২৬ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সেই আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১১১ দশমিক ৭৪ কোটি টাকায়। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ পণ্য ভারতে রপ্তানি করা হয়, তার চেয়ে ১০ গুণ পণ্য সেখান থেকে আমদানি করা হয়।

 বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা সত্ত্বেও ভারতের বাজারে প্রসার না ঘটার পেছনে বেশ কিছু সমস্যা আছে। দেশটি অধিকাংশ বাংলাদেশি পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক বাধা তুলে নিলেও অশুল্ক বাধা এখনো রয়ে গেছে। ভারত অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হওয়ায় বাণিজ্যে পুরোপুরি সমতা আনা কখনোই সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। ভারতে চাহিদা আছে— সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এমন পণ্যের কারখানা প্রতিষ্ঠা করা গেলে দুই দেশই লাভবান হতে পারে। ভারতকে পশ্চিম প্রান্ত থেকে পূর্ব প্রান্তে পণ্য আনার ঝক্কি পোহাতে হবে না, তারা কম সময় ও খরচে বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিতে পারবে। অন্যদিকে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের অর্থনীতি চাঙা হলে চোরাচালানও কমে যাবে। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি ইলিশ ও জামদানির প্রচুর চাহিদা আছে বলে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করেছেন। বৈধ পথে ইলিশ রপ্তানি না হলে অবৈধ পথে যাবে এবং আমরা বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হব।

কলকাতায় বাংলাদেশের পণ্যের স্থায়ী প্রদর্শন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার এই উদ্যোগ যত দ্রুত কার্যকর হবে, দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যও তত প্রসারিত হবে। দ্বিপক্ষীয় অনেক সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ মাঝপথে থেমে যায় কিংবা বাস্তবায়নের কাজটি বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। কলকাতায় বাংলাদেশের পণ্যের প্রস্তাবিত স্থায়ী প্রদর্শন কেন্দ্রের বেলায় সেটি হবে না বলেই প্রত্যাশিত।