পানির দামে আউশ বিক্রি

অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, ঝড়, বন্যা বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফলন মার খেলে তবু মনকে প্রবোধ দেওয়া যায়। ‘কপাল খারাপ’ বলে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া যায়। কিন্তু বাম্পার ফলন হওয়ার পরও যখন লোকসান গুনতে হয়, তখন আর সান্ত্বনার জায়গা থাকে না। ফসল উৎপাদনে যা খরচ হয়, দাম তলানিতে নেমে যাওয়ার কারণে সেই উৎপাদন খরচটুকুও যদি উঠে না আসে, তাহলে কৃষকের আবার ফসল ফলানোর মানসিকতা থাকে না।

এ বছর বরিশাল বিভাগের কৃষকেরা আউশ ধান নিয়ে এই মহাবিপদে পড়েছেন। মাঠভরা ধান দেখে তাঁদের মুখে হাসি ফুটেছিল ঠিকই, কিন্তু বাজারে গিয়ে তাঁদের মলিন মুখে ফিরে আসতে হচ্ছে। ধানের দাম শোনার পর সব আনন্দ ফিকে হয়ে যাচ্ছে। লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই পকেটে আসছে না।

চলতি মৌসুমে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় প্রায় ২ লাখ ১ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল প্রায় ৪ লাখ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন চাল। কিন্তু আবাদ হয়েছে এর চেয়ে অনেক বেশি। কৃষকেরা বলছেন, এক একর জমিতে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে তাঁরা আউশের বাম্পার ফলন ফলিয়েছেন। কিন্তু সেই ধান তাঁদের বেচতে হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়। তার মানে একরপ্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা।

আমন মৌসুমের পর এই অঞ্চলের বেশির ভাগ জমি বছরের প্রায় সাত মাস পতিত থাকত। সিডরের পর তাঁরা এই জমিকে বহু ফসলি করতে আউশের আবাদ শুরু করেন। বৈশাখের মাঝামাঝি আউশের আবাদ করেছিলেন তাঁরা। ভাদ্রের মাঝামাঝি ধান পাকতে শুরু করে। এখন এ ধান মাড়াই করে প্রক্রিয়াজাতের কাজ চলছে। এবার ফলন ভালো হওয়ায় প্রতি একরে দেড় মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। কৃষি বিভাগ এটাকে বাম্পার ফলন বলছে।

কিন্তু দামই যদি না পাওয়া যায়, তাহলে বাম্পার ফলন দিয়ে কৃষক কী করবেন? ধান ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, চালকলের মালিকেরা ধান কিনছেন না বলে দাম কমে গেছে। এই অবস্থায় খাদ্য বিভাগ কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনলে কৃষকেরা উপকৃত হতেন। তাঁরা ন্যায্যমূল্য পেতেন। তাই বিষয়টি খাদ্য বিভাগের বিবেচনায় নেওয়া দরকার। খাদ্য কর্মকর্তারা যদিও বলছেন, খাদ্য বিভাগ শুধু বোরো ও আমন মৌসুমে ধান কেনে; আউশ কেনার বিষয়ে তাঁরা কোনো নির্দেশনা পাননি; তথাপি অবিলম্বে সরকারের কৃষকবান্ধব সিদ্ধান্তে আসা দরকার।

আগে দক্ষিণাঞ্চলে আউশের আবাদ হতো না বললেই চলে। তাই এ মৌসুমে সরকার চাল কেনার কথা ভাবেনি। কিন্তু এখন এই ধানের প্রচুর আবাদ হয়। ফলে সিদ্ধান্তও নতুন করে নিতে হবে। দ্রুত এই মৌসুমেও চাল কেনার বিষয়টি সরকারকে মাথায় নিতে হবে। দেরি করলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাঁরা ফসল ফলাতে নিরুৎসাহিত হবেন। তাতে দেশেরই ক্ষতি।