হাঁস পালনে অভাবমোচন

দেশে এখন কত প্রযুক্তি এসে গেছে। কৃষি বা স্থানীয় ছোট ছোট শিল্পে কত রকমের যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হচ্ছে! এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সতর্কতা পাচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষও। তারপরও হাওর অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক মানুষের জীবনযাত্রা এখনো জুয়া খেলার মতো চলছে। হাওরে যত দূর চোখ যায়, শুধু ধান আর ধান—এই দৃশ্য দেখেও সেই ধান গোলায় না ভরা পর্যন্ত চূড়ান্ত স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারে না সেখানকার মানুষ।

গত বছর ধানে যখন সবে পাক ধরেছে, সেই অবস্থায় এল পাহাড়ি ঢল। রাতারাতি বন্যায় ডুবে গেল শত শত হেক্টর জমির ধান। চোখের সামনে স্বপ্ন ভেঙে খানখান। চার বছর আগেও একই ঘটনা ঘটেছিল। কোনো এক বছর ফসল মার খেলে সেখানকার মানুষের কষ্টের শেষ থাকে না। আকস্মিক তীব্র অভাবে দিশেহারা হয়ে পড়ে তারা। কারণ, সেখানে এক ফসলি জমি। ফসল ছাড়া আয়-রোজগারের অন্য পথও খুব বেশি খোলা নেই।

তবে আশার কথা হলো, মানুষ এখন সচেতন হচ্ছে। তারা শুধু ধানের ওপর থেকে নির্ভরতা সরিয়ে অন্যদিকে মনোযোগী হয়েছে। সেখানকার কৃষি-অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখানকার মানুষ কৃষিকাজের পাশাপাশি হাঁস পালন, গরুর খামার, মাছ চাষসহ বিভিন্ন কাজ করতে আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

গতকাল প্রথম আলোয় ‘হাঁসে অভাব ঘুচল দুই বন্ধুর’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ‘ঠেকে শেখা’ দুজনের সাফল্যের গল্প ছাপা হয়েছে। তাঁরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একজন আলম মিয়া ও অন্যজন সুবাস চন্দ্র দাস। তাঁদের বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরপারের গ্রাম আনোয়ারপুরে। চার বছর আগে অকালবন্যায় লাখ লাখ হাওরবাসীর মতো তাঁরাও ফসলহানির মুখে পড়েন। তীব্র অভাবে পড়ার পর তাঁরা চাষাবাদের পাশাপাশি সহযোগী কর্মসংস্থান হিসেবে হাঁস পালন শুরু করেন। এখন তাঁরা দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তাঁরা বলছেন, শুধু হাওরের ধানের ওপর ভরসা নেই। পাহাড়ি ঢল আর অকালবন্যায় যেকোনো সময় ধান তলিয়ে যেতে পারে। তাই অপেক্ষাকৃত বেশি আর্থিক নিরাপত্তার জন্য তাঁরা হাঁস পালন করেন।

তাঁদের দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। বিশেষ করে, গত বছর হাওরের সম্পূর্ণ ফসল তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে ফসলের বিকল্প কোনো কিছু করার তাগিদ জন্মেছে। তাই কৃষিকাজের পাশাপাশি এলাকার অনেকেই এখন হাঁস পালন, গরুর খামার, মাছ চাষসহ বিভিন্ন কাজ করেন। ফসল না পেলেও অন্য কাজের আয় দিয়ে তাঁরা সংসার চালাতে পারেন। হাওরবাসীর মধ্যে এই বিকল্প আয়ের ঝোঁক আরও বাড়িয়ে তোলা দরকার। হাওরের চিরাচরিত দুঃখের ছবিটা বদলে দেওয়া দরকার।