চালের মূল্যবৃদ্ধি

জানুয়ারিতে আমন ধান উঠলেও চালের দাম কমেনি বরং বেড়ে চলেছে, যা মোটেই স্বাভাবিক নয়। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে শুক্রবার বাজারে মানভেদে নাজিরশাইল-মিনিকেট ৫০ থেকে ৫৬ টাকা, পাইজাম-লতা ৪৬ থেকে ৫০ টাকা ও মোটা জাতের ইরি-স্বর্ণা ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। এই দর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ ও ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। এর পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে বলে জানিয়েছেন খোদ খাদ্যমন্ত্রী।

এত দিন সরকার বলে আসছিল, সরকারি গুদামে ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি চাল রয়েছে। তাহলে চালের দাম অব্যাহতভাবে বাড়ার কী কারণ থাকতে পারে? বাজার স্থিতিশীল রাখতে খাদ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে চালের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছেন। খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশ হঠাৎ করে খাদ্যঘাটতির দেশে পরিণত হওয়া নিশ্চয়ই গৌরবের বিষয় নয়। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা হিসাবে শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করি। চালের মজুতের ক্ষেত্রে সে রকম কিছু হয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

চাল এমন একটি পণ্য, এর দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়ে শ্রমজীবী ও গরিব মানুষ। অতএব, চালের দাম যাতে কোনোভাবে না বাড়ে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমদানি নয়, বরং খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে এবং সরকারি গুদামে প্রয়োজনীয় ধান-চাল মজুত করেই বাজার স্থিতিশীল রাখার ওপর জোর দিতে হবে। খোলাবাজারে কম দামে পর্যাপ্ত চাল বিক্রিও পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

অন্যদিকে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা যাতে পূরণ হয়, সে ব্যাপারে সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। মন্ত্রী নিজেই যখন বাজার কারসাজির জন্য ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করছেন, তখন তাঁর কর্তব্য হবে এ ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জনগণের কাছে তুলে ধরা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। আর চালের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করার সুফলটি যাতে সাধারণ ভোক্তা পান, সে জন্য আমদানিকারকদের ওপরও নজরদারি বাড়াতে হবে।